বেলারুশ থেকে উড়ে আসছে ‘স্মাগলার’ বেলুন, লিথুয়ানিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি
বেলারুশ থেকে আসা 'স্মাগলার' (চোরাকারবারি) বেলুনের কারণে আকাশপথে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে লিথুনিয়া। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দেশটির সরকার এ ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুমতি চেয়ে পার্লামেন্টে আবেদনও করা হয়েছে।
লিথুনিয়া সরকারের অভিযোগ, প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ থেকে সিগারেট পাচারের উদ্দেশ্যে এসব বেলুন পাঠানো হচ্ছে। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের এই কর্মকাণ্ডকে লিথুনিয়া একটি 'হাইব্রিড হামলা' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এসব বেলুনের কারণে গত কয়েক মাসে রাজধানী ভিলনিয়াসের বিমানবন্দর একাধিকবার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার এক সরকারি বৈঠকে লিথুনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিস্লাভ কনড্রাটোভিচ বলেন, 'শুধু বেসামরিক বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার কারণেই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।'
তবে বেলুন পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেলারুশ। দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দাবি করেছেন, লিথুনিয়া বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছে এবং রাজনৈতিক রূপ দিচ্ছে। তিনি বলেন, 'লিথুনিয়া আজ যা বলছে, তা অসম্ভব ও অবাস্তব। মিনস্ক তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ চায় না।'
এর আগে বেলারুশ অভিযোগ করেছিল, লিথুনিয়া ড্রোন পাঠিয়ে 'চরমপন্থী প্রচারপত্র' ফেলছে এবং এর মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছে। তবে লিথুনিয়া সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা
জরুরি অবস্থায় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়াতে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে লিথুনিয়া সরকার। প্রস্তাবটি পাস হলে সেনাবাহিনী পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারবে। তাদের যেসব ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে—নির্দিষ্ট এলাকায় প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা, যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা, মানুষের নথিপত্র ও মালামাল পরীক্ষা করা এবং বাধা দিলে বা কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে আটক করা।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্টাস কাউনাস জানান, এসব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগও করতে পারবে। সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই জরুরি ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।
অতীতের উত্তেজনা
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন গত ১ ডিসেম্বর এই বেলুনের অনুপ্রবেশকে 'হাইব্রিড হামলা' এবং 'পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য' বলে নিন্দা জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, লিথুনিয়া ও বেলারুশ সীমান্তে উত্তেজনা নতুন নয়। ২০২১ সালে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের অভিযোগে এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর নিরাপত্তা শঙ্কায় লিথুনিয়া আগেও জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।
