বাইডেনের আদেশগুলোকে বাতিল বললেন ট্রাম্প, নতুন করে রাজনৈতিক আক্রমণ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে অবৈধ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ কৌশলে। এদিন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, তাঁর পূর্বসূরি নিজের হাতে সরাসরি স্বাক্ষর না করা সব নির্বাহী আদেশ এবং অন্য যেকোনো কার্যক্রম তিনি "বাতিল" করছেন।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন, সেই ভিত্তিতে আসলে তাঁর কি আইনগত ক্ষমতা আছে ঐসব পদক্ষেপ বাতিল করার?
ট্রাম্প লিখেছেন, "স্লিপি জো বাইডেন অটোপেন দিয়ে যেসব নথিতে স্বাক্ষর করেছে—যা মোটামুটি ৯২ শতাংশ—তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল এবং অকার্যকর ঘোষণা করা হলো।" তবে তিনি ব্যাখ্যা করেননি ৯২ শতাংশ বলতে ঠিক কোন কোন নথিকে বোঝাচ্ছেন।
তিনি আরও লিখেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়া অটোপেন ব্যবহার করা যায় না।"
ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন "অটোপেন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন না।" তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন—"যদি তিনি বলেন যে তিনি এতে জড়িত ছিলেন, তাহলে তাঁকে মিথ্যাবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে।"
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও লেখেন, "ওভাল অফিসের রেজলিউট ডেস্ক ঘিরে থাকা উগ্র বামপন্থী উন্মাদরা বাইডেনের কাছ থেকে প্রেসিডেন্সি কেড়ে নিয়েছে। আমি এখুনি ঘোষণা করছি—ক্রুকেড জো বাইডেনের নিজ হাতে সরাসরি স্বাক্ষর না করা সব নির্বাহী আদেশ এবং অন্য যেকোনো পদক্ষেপ বাতিল, কারণ অটোপেন পরিচালনাকারীরা অবৈধভাবে কাজ করেছে। জো বাইডেন সেই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং যদি তিনি দাবি করেন যে ছিলেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্যের অভিযোগ আনা হবে। বিষয়টির প্রতি আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!"
অন্যদিকে, বাইডেন প্রকাশ্যে বলেছেন যে তাঁর প্রশাসনে কোনো "ধামাচাপা" হয়নি। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়েছেন এবং যারা এর বিপরীত দাবি করছে তারা "মিথ্যাবাদী।"
ট্রাম্প বহুদিন ধরেই বাইডেনের অটোপেন ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করে আসছেন। গত মার্চে তিনি দাবি করেন, বাইডেন অটোপেন দিয়ে নথি স্বাক্ষর করায় প্রমাণ হয় তিনি হোয়াইট হাউসের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন না এবং তাঁর পদক্ষেপগুলো তাই "অকার্যকর।"
সেসময় রক্ষণশীল নির্বাহী ক্ষমতা–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জন ইউ সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প আসলে "বাইডেনকে নিয়ে মজা করছিলেন।"
পরে ট্রাম্প আদেশ দেন বাইডেন অটোপেন কীভাবে ব্যবহার করেছেন এবং এর সঙ্গে তাঁর কথিত "জ্ঞানবুদ্ধি লোপের" কি সম্পর্ক আছে, তা তদন্ত করতে।
২০০৫ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের অধীনে বিচার বিভাগের অফিস অব লিগ্যাল কাউন্সেল প্রেসিডেন্টের অটোপেন ব্যবহারের আইনগত বৈধতা নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছিল। তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়—"কোনো বিল স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে নিজের হাতে শারীরিকভাবে স্বাক্ষর করতেই হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।"
ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি অটোপেন ইস্যুটি বাইডেনের ক্ষমামূলক আদেশ–এর ক্ষেত্রে তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেখানেও পূর্ববর্তী প্রশাসনের প্রতিষ্ঠিত আইনগত ব্যাখ্যাগুলো এই দাবি নস্যাৎ করে। ১৯২৯ সালের মার্কিন সলিসিটার জেনারেলের এক নথিতে উল্লেখ ছিল—সংবিধানে ক্ষমা প্রদানের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বর্ণনা করা নেই।
এক পৃথক কংগ্রেসীয় তদন্তে বলা হয়েছিল, অটোপেনের মাধ্যমে জারি হওয়া কিছু ক্ষমায় বাইডেন বাস্তবেই বিষয়বস্তুর ব্যাপারে অবগত ছিলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে সেই তদন্তে এমন কোনো সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যে বাইডেন ছাড়া অন্য কেউ সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে—যা পরে তাঁর কর্মকর্তারা কার্যকর করেছেন।
