হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি লেভিটের ভাতিজার মাকে গ্রেপ্তার করেছে আইস
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের ভাইয়ের সাবেক স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। আটক নারীর নাম ব্রুনা ক্যারোলিন ফেরেইরা। তিনি ব্রাজিলের নাগরিক।
ফেরেইরার আইনজীবী টড পোমারলিও জানান, গত ১২ নভেম্বর বোস্টনের কাছ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিএনএন-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, লেভিটের ভাতিজা জন্মের পর থেকেই নিউ হ্যাম্পশায়ারে তার বাবা অর্থাৎ লেভিটের ভাই মাইকেলের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। প্রেস সেক্রেটারি লেভিটের সঙ্গে আটক ফেরেইরার গত কয়েক বছর ধরে কোনো যোগাযোগ বা কথাবার্তা নেই বলেও ওই সূত্র নিশ্চিত করেছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন মুখপাত্র সিএনএন-কে জানান, ফেরেইরা মূলত পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ১৯৯৯ সালের জুন মাসে তার সেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করছিলেন।
কর্তৃপক্ষ ফেরেইরাকে একজন 'অবৈধ অভিবাসী' হিসেবে অভিহিত করেছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তারের রেকর্ড রয়েছে। বর্তমানে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক মুখপাত্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েমের অধীনে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।'
ট্রাম্প প্রশাসনের এই কড়াকড়ির ফলে বর্তমানে রেকর্ডসংখ্যক নথিবিহীন অভিবাসীকে আটক করা হচ্ছে। মজার বিষয় হলো, প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট শুরু থেকেই এই কঠোর অভিযানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং অবৈধ অভিবাসনকে দেশের ওপর 'আক্রমণ' বলে বর্ণনা করেছেন। তবে নিজের ভাইয়ের ছেলের (ভাতিজা) মায়ের আটকের বিষয়ে তিনি বা তার পরিবার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আটককৃত নারী ব্রুনা ক্যারোলিন ফেরেইরার আইনজীবীরা ঘটনাটিকে 'শেক্সপিয়েরের নাটকের মতো পরিহাস' বলে বর্ণনা করেছেন। আইনজীবী জেফ্রি বি. রুবিন বলেন, 'প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আজ ট্রাম্পের এই নিষ্ঠুর গণ-অভিবাসন অভিযানের শিকার এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।'
বাইডেন প্রশাসনের সময় সাধারণত ছোট সন্তানের বাবা-মাকে আটক করা হতো না। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন আমেরিকায় সন্তান লালন-পালন করছেন বা বহু বছর ধরে বসবাস করছেন—এমন অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও কোনো ছাড় দিচ্ছে না।
ফেরেইরার আইনজীবী টড পোমারলিও জানান, ফেরেইরা ম্যাসাচুসেটস থেকে নিউ হ্যাম্পশায়ারে গাড়ি চালিয়ে নিজের ছেলেকে নিতে যাচ্ছিলেন। পথে তাকে থামিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়া হয় এবং পরে তাকে আটক করা হয়।
ফেডারেল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ফেরেইরা বি-২ পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং ১৯৯৯ সালের ৬ জুনের মধ্যে তার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।
আইনজীবীরা জানান, ৩০ বছর বয়সী ফেরেইরা মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওবামা আমলের 'ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস' (ডিএসিএ) কর্মসূচির আওতায় তিনি সুরক্ষা ও কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) পেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। বোস্টনের কাছে রিভিয়ার শহরে তার নিজস্ব ব্যবসা ও কাপড়ের দোকান রয়েছে।
আইনজীবী পোমারলিও বলেন, 'তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, কিন্তু আশাহত নন। তিনি আমেরিকার বিচার ব্যবস্থায় দৃঢ় বিশ্বাসী। আমরা তার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে কেবল গুটি কয়েক মানুষ আদালতের সুযোগ পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু আমরা প্রমাণ করব—আমেরিকার মাটিতে সবারই আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে।'
