বাইডেনের আমলে প্রবেশ করা শরণার্থীদের আবার সাক্ষাৎকার নেবে ট্রাম্প প্রশাসন
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কিছু শরণার্থীর মামলার সামগ্রিক বিষয় আবার মূল্যায়ন করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে পুনরায় শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে একটি অভ্যন্তরীণ নথি এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই উদ্যোগকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন দমননীতির অভূতপূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এবার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীগুলোর একটিকে।
শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে সাধারণত দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে তাদের প্রমাণ করতে হয় যে তারা নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বা নিপীড়নের ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়া তাদেরকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যাচাই-বাছাই করেই শরণার্থী হতে হয়।
এখন বাইডেন প্রশাসনের সময়ে সেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেই যুক্তরাষ্ট্রে আসা কিছু শরণার্থীদের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে আবারও সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচি খতিয়ে দেখছেন। যদিও কর্মসূচিটি ঐতিহাসিকভাবে দ্বিদলীয় সমর্থন পেয়ে এসেছে, তারা দাবি করেন—আগের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের যথাযথভাবে যাচাই করেনি। ট্রাম্প কার্যত শরণার্থী গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে শুধু সীমিতসংখ্যক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের তিনি শরণার্থী হিসেবে নিচ্ছেন।
২১ নভেম্বরের ওই নথি অনুযায়ী, ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসকে (ইউএসসিআইএস) পুনর্মূল্যায়ন ও পুনরায় সাক্ষাৎকার গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। নথিতে বলা হয়েছে, শরণার্থীরা যাতে জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এই 'অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তা'।
নথিতে আরও বলা হয়, ২০২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচির মাধ্যমে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সিএনএন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) এবং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য না করে সিএনএনকে ডিএইচএস-এর কাছে পাঠিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে। ১৯৮০ সালের 'রিফিউজি অ্যাক্ট' পাস হওয়ার পর থেকে দেশটি লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য শরণার্থীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেওয়ায় কর্মসূচিটি বড় ধাক্কা খায়। করোনা মহামারির সময়ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল।
ক্ষমতায় এসে বাইডেন কর্মসূচিটি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি শরণার্থী গ্রহণের বার্ষিক সীমা ১ লাখ ২৫ হাজার নির্ধারণ করেন।
ট্রাম্পের এ উদ্যোগের হুমকিকে 'অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতা' বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী পুনর্বাসন সংস্থা হাইয়াসের প্রেসিডেন্ট মার্ক হেটফিল্ড। সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'শরণার্থীদের স্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া মানেই তাদের পুনরায় ট্রমার মুখে ঠেলে দেওয়া এবং করদাতাদের অর্থের নির্মম অপব্যবহার।'
রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট জেরেমি কোনিনডাইকও বিষয়টিতে একমত। তিনি বলেন, 'শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা শরণার্থীরাই সব ধরনের অভিবাসীর মধ্যে সবচেয়ে কঠোর ও বিস্তারিত যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে আসে।'
সিএনএনকে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'তারা শরণার্থী মর্যাদার কঠোর যাচাই, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক এবং নিরাপত্তা স্ক্রিনিংসহ নিবিড় পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে আসে। ট্রাম্প প্রশাসন এটি ভালোভাবেই জানে।'
তিনি আরও বলেন, 'যখন ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে—যারা শরণার্থী হওয়ার মানদণ্ড পূরণ করে না—তখন এ উদ্যোগকে প্রকৃতপক্ষে সুরক্ষা দরকার এমন ব্যক্তিদের স্ট্যাটাস বাতিলের অজুহাত ছাড়া আর কিছুই না।'
প্রস্তাবিত সাক্ষাৎকারগুলোর লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় শরণার্থীরা সত্যিই প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিত করা। প্রশাসনের নথিতে বলা হয়েছে, সংস্থাটির শরণার্থীর স্ট্যাটাস বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে—এবং এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই।
নথিতে আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান সমন্বয়ের জন্য শরণার্থীদের সব মুলতুবি আবেদন স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না ইউএসসিআইএসের পরিচালক অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে, দেশে প্রবেশের এক বছর পর শরণার্থীদের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ল্যান্ডাউ বলেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক আশ্রয়প্রার্থী ব্যবস্থা ও কাঠামো—যার মধ্যে 'রিফিউজি কনভেনশন'ও রয়েছে—এখন পুরোনো হয়ে গেছে এবং অপব্যবহার হচ্ছে। তার মতে, এর মাধ্যমে 'বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসনকে বৈধ করা হচ্ছে'।
মার্কিন নেতৃত্বে আয়োজিত 'গ্লোবাল রিফিউজি অ্যাসাইলাম সিস্টেম: হোয়াট ওয়েন্ট রং অ্যান্ড হাউ টু ফিক্স ইট' শীর্ষক অনুষ্ঠানে ল্যান্ডাউ বলেন, 'আশ্রয়প্রার্থী ব্যবস্থা আমাদের অভিবাসন আইনের একটি বড় ফাঁকিতে পরিণত হয়েছে, এবং এ ব্যাপারে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।'
