আমি তার জন্য আনন্দিত হব: ‘সমাজতান্ত্রিক’ মেয়র মামদানির সঙ্গে বৈঠকে প্রশংসায় ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যকার বৈঠকটি নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। হোয়াইট হাউসের এই বৈঠকটিকে বছরের অন্যতম বড় 'রাজনৈতিক সংঘাত' হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে সংঘাতের বদলে ওভাল অফিসে দেখা গেল প্রশংসার বন্যা। খবর বিবিসি'র।
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দেওয়া ভাষণে নিজেকে 'গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক' হিসেবে পরিচয় দেওয়া মামদানি ট্রাম্পকে 'স্বৈরাচার' বলে অভিহিত করেছিলেন। অন্যদিকে, শুক্রবারের এই বৈঠকের আগে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র মামদানির সফরকে 'হোয়াইট হাউসে একজন কমিউনিস্টের আগমন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
কিন্তু ওভাল অফিসে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এই দুই ব্যক্তি বিস্ময়করভাবে আপসকামিতার সুর তুললেন।
বারবার তারা উভয়েই নিউইয়র্ক সিটির জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলার অভিন্ন স্বার্থের ওপর জোর দেন। তাদের প্রায়ই হাসতে দেখা যায় এবং মামদানির আগের রাজনৈতিক আক্রমণগুলো নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ট্রাম্পকে বেশ আমোদপ্রবণ মনে হয়েছে।
বৈঠকের এই আবহাওয়া রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের হতবাক করে দিয়েছে। তবে এটি একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উভয় নেতাই বুঝতে পারছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলা করা তাদের রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ১ জানুয়ারি মামদানি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই 'যুদ্ধবিরতি' কতদিন টিকবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি তার (মামদানির) জন্য আনন্দিত হবো ।'
ট্রাম্পের মুখে প্রশংসার সুর
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার শুরু থেকেই তাদের মধ্যে সমঝোতার সুর স্পষ্ট ছিল। ব্যক্তিগত বৈঠকের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তারা। রেজোলিউট ডেস্কের পেছনে বসে ছিলেন ট্রাম্প, আর তার ডান পাশে হাত জড়ো করে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামদানি। তাদের শারীরিক ভাষা ছিল বেশ সাবলীল, বিশেষ করে ট্রাম্পের।
বৈঠকে মামদানিকে আক্রমণ করা তো দূরের কথা, উল্টো ট্রাম্প তাকে একাধিকবার প্রশংসা করলেন। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করে বলেন, 'মামদানি সত্যিই একজন "চমৎকার মেয়র" হবেন। আমি আত্মবিশ্বাসী যে তিনি [মামদানি] খুব ভালো কাজ করতে পারবেন।'
জিহাদ ও ফ্যাসিবাদ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া
মেয়র নির্বাচনের সময় মামদানি ও ট্রাম্প একে অপরের দিকে বহুবার রাজনৈতিক তীর ছুড়েছেন। কক্ষের একজন সাংবাদিক তাদের মনে করিয়ে দেন যে, ট্রাম্প মামদানিকে 'কমিউনিস্ট' বলেছিলেন এবং মামদানি প্রেসিডেন্টকে 'স্বৈরাচার' বলেছিলেন।
কিন্তু এদিন দুজনেই তাদের আগের বক্তব্য নিয়ে করা একাধিক প্রশ্ন এড়িয়ে যান এবং প্রশংসার দিকেই মনোযোগ দেন। এমনকি নবনির্বাচিত মেয়র প্রেসিডেন্টকে 'ফ্যাসিস্ট' মনে করেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তর মামদানিকে দেওয়ার সুযোগ করে দেন ট্রাম্প।
মামদানির বাহুতে আলতো চাপ দিয়ে হেসে ট্রাম্প মাঝপথে বলে ওঠেন, 'ঠিক আছে, আপনি শুধু "হ্যাঁ" বলতে পারেন। ব্যাখ্যা করার চেয়ে এটা সহজ।'
মামদানির রাজনীতি নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনার সর্বোচ্চ পর্যায় ছিল সাংবাদিকদের কাছে এইটুকু বলা যে, 'তার মতামতগুলো কিছুটা ভিন্নধাঁচের।'
সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল, নিউইয়র্কের গভর্নরের দৌড়ে থাকা ট্রাম্পের অন্যতম রাজনৈতিক মিত্র এলিস স্টেফানিকের একটি আক্রমণাত্মক মন্তব্যকে ট্রাম্পের উড়িয়ে দেওয়া। রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিকের উদ্ধৃতি দিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, 'আপনি কি মনে করেন আপনি এখন ওভাল অফিসে একজন 'জিহাদি'র পাশে দাঁড়িয়ে আছেন?'
ট্রাম্প দ্রুত উত্তর দেন, 'না, আমি তা মনে করি না।' স্টেফানিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নির্বাচনী প্রচারণায় মাঝেমধ্যে মানুষ অনেক কিছুই বলে। সে খুবই দক্ষ একজন ব্যক্তি।'
