সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সাথে হোয়াইট হাউসের নৈশভোজে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
হোয়াইট হাউসে সৌদি আরবের নেতাদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার রাতে এক ব্ল্যাক-টাই নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন জনপ্রিয় ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। খবর বিবিসির।
অনুষ্ঠানের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'রোনালদোকে অতিথি হিসেবে পাওয়া আমাদের জন্য সম্মানের।' বর্তমানে রোনালদো সৌদি ফুটবল লিগের খেলোয়াড়। তার দৃষ্টিনন্দন পারফরম্যান্স তাকে দেশটির আধুনিকায়ন প্রচেষ্টার অন্যতম মুখপাত্রে পরিণত করেছে।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে চাচ্ছেন। এর জন্য খেলাধুলা ও পর্যটনসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি।
আগেই হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা রোনালদো আসার কথা নিশ্চিত করেছিলেন। তবে তিনি বিন সালমানের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদলের অংশ কিনা তা জানাননি।
অনেক সমালোচক দাবি করেন, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সৌদি আরবের বিপুল বিনিয়োগের উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৈধতা অর্জন করা এবং মানবাধিকার রেকর্ড ও তেল শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া— যা 'স্পোর্টসওয়াশিং' নামে পরিচিত।
নৈশভোজের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। এসময় দেশটিকে 'ন্যাটোর বাইরে প্রধান মিত্র' বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেদিন আগেই তিনি ওভাল অফিসে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পর্তুগিজ ফুটবল তারকা রোনালদোর দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প অতিথিদের বলে ওঠেন, 'আমার ছেলে রোনালদোর বড় ভক্ত।'
ছেলেকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, 'আর যেহেতু ব্যারন ট্রাম্প তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে, তাই আমি মনে করি বাবাকে সে আগে থেকে একটু বেশি সম্মান করবে। কারণ আমিই তোমাকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।'
ডিনারে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ধনকুবের ইলন মাস্কও ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুকসহ আরও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতারা। এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসনের ডিপার্টমেন্ট ফর গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডোজ) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এটাই মাস্কের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও টেসলা প্রধান ইলন মাস্কের মধ্যে কয়েক মাস ধরেই প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলমান। এর মধ্যে মাস্ক একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
অপরদিকে রোনালদো ২০১৬ সালে প্রথম হোয়াইট হাউসে সফর করেছেন। এগুলো তার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরগুলোর একটি।
তবে সেসময় তাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্যাথরিন মায়োরগা নামে একজন অভিযোগ করেন, রোনালদো তাকে লস ভেগাসের একটি হোটেল কক্ষে ধর্ষণ করেন। যদিও রোনালদো এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
২০১৮ সালে এক বিবৃতিতে রোনালদো অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, যা আমার ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বাসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।'
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা জানায়, অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব না হওয়ায় রোনালদোর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হবে না।
খবরে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় পর্তুগাল ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে পারে। একই বছরে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পুরুষদের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পর্তুগালও অংশ নেবে।
ম্যাচটি নিশ্চিত হলে এবং রোনালদো খেললে, এটি হবে ২০১৪ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রথম ম্যাচ।
