এবার এক্সবক্স ও প্লেস্টেশনকে টেক্কা দিতে নতুন কনসোল আনছে পিসি গেমিং জায়ান্ট ভালভ
পিসি গেমিং প্ল্যাটফর্ম স্টিম-এর নির্মাতা ভালভ এবার নিনটেনডো, এক্সবক্স এবং প্লেস্টেশন-কে টেক্কা দেওয়ার জন্য একটি নতুন কনসোল প্রকাশ্যে এনেছে।
এই নতুন কনসোলের নাম স্টিম মেশিন। এটি এমন একটি হোম কনসোল যা গেমারদের পিসির গেমগুলো টিভিতে খেলার সুযোগ করে দেবে।
এই কনসোলটিকে ২০১৪ সালে বাজারে আসা একই নামের একটি ডিভাইসের 'আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী' বলা যেতে পারে। তবে সেই পুরনো ডিভাইসটি গেমিং জগতের তিন জায়ান্টের (নিনটেনডো, এক্সবক্স, প্লেস্টেশন) রাজত্বে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি।
দশ বছর আগে সেই কনসোলগুলোর দাম শুরু হয়েছিল ৪৯৯ ডলার থেকে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভালভ-এর এই নতুন সংস্করণটির দাম তার চেয়ে অনেকটাই বেশি হবে।
কোম্পানি জানিয়েছে, স্টিম মেশিন বাজারে আসবে ২০২৬ সালের শুরুর দিকে, তবে এর দাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এই বিষয়ে এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্য কনসোলটি বাজারে আসার ঠিক আগে জানানো হবে। এমনকি এর সঠিক মুক্তির তারিখও এখনও অজানা।
২০০৩ সালে স্টিম চালু করার পর থেকে ভালভ এটিকে পিসি গেমিংয়ের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে। এই মুহূর্তে, প্ল্যাটফর্মটির নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৫ মিলিয়ন স্টিম ব্যবহারকারী অনলাইনে আছেন এবং তাদের মধ্যে ৬ মিলিয়ন সক্রিয়ভাবে গেম খেলছেন।
কিন্তু আগামী বছর যখন এই নতুন হার্ডওয়্যার বাজারে আসবে, তখন এটি স্টিম-এর মতো আকাশছোঁয়া সাফল্য পাবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।
এক দশক আগে যখন স্টিম মেশিন তার পুরনো রূপে বাজারে এসেছিল, তখন বিশ্লেষকরা এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, এর চড়া দাম এবং সম্ভাবনা হয়তো কেবল স্টিম-এর একনিষ্ঠ বা 'পাওয়ার ইউজার'দেরই আকর্ষণ করতে পারবে।
একটি ভিডিও ঘোষণার মাধ্যমে ভালভ নতুন এই কনসোলটিকে 'ছোট্ট একটি প্যাকেজে এক শক্তিশালী গেমিং পিসি' হিসেবে বর্ণনা করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির যুক্তি হলো, এই ডিভাইসটি অন্য যেকোনো পিসির চেয়ে 'গেমিংয়ের জন্য বিশেষভাবে অপ্টিমাইজ করা'। কারণ, তাদের বিশাল ডিজিটাল স্টোর থেকে কোনো গেম কেনার আগেই তারা নিশ্চিতভাবে বলে দিতে পারবে যে সেটি এই কনসোলে চলবে কি না।
ভালভ জানিয়েছে, তাদের লিনাক্স-ভিত্তিক স্টিমওএস অপারেটিং সিস্টেম এবং এএমডি গ্রাফিক্স প্রসেসর দ্বারা চালিত নতুন এই স্টিম মেশিন ফোরকে রেজোলিউশন এবং প্রতি সেকেন্ডে ৬০ এফপিএস সাপোর্ট করতে সক্ষম।
তবে, গেমিং শিল্প বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ড্রিং মনে করেন, এর সম্ভাবনা এবং আবেদন সীমিত হতে পারে। তিনি এটিকে ভালভ-এর হ্যান্ডহেল্ড কনসোল স্টিম ডেক-এর সাথে তুলনা করেছেন, যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা 'প্রায় চার থেকে পাঁচ মিলিয়ন' এবং এটি একটি 'লাভজনক কিন্তু নির্দিষ্ট শ্রেণীর' দর্শকের কাছেই জনপ্রিয়।
তিনি বলেন, 'ওই ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই ছিলেন স্টিম-এর পুরনো গ্রাহক, যারা তাদের পিসির গেমগুলোই আরও স্বাচ্ছন্দে খেলতে চাইতেন।'
'আমার ধারণা, স্টিম মেশিন-এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। এটি মূলত স্টিম-এর সেইসব উৎসাহী এবং একনিষ্ঠ ব্যবহারকারীদের কাছেই আকর্ষণীয় হবে, যারা তাদের গেমগুলো বসার ঘরের আরামে খেলতে চান।'
আরও নতুন চমক
এক অভিনব পদক্ষেপে, ভালভ আরও একটি নতুন হার্ডওয়্যার ঘোষণা করেছে—তাদের স্টিম ফ্রেম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট।
এই ডিভাইসটি সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস এবং এটিকে একটি 'স্ট্রিমিং-ফার্স্ট' ডিভাইস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এটি নিজেও স্টিমওএস দ্বারা চালিত একটি পিসি।
ভালভ দাবি করছে যে, ভিআর প্রযুক্তিতে এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই হেডসেটটি স্ক্রিনের ঠিক সেই অংশেই সর্বোচ্চ মানের গ্রাফিক্স দেখাবে, যেখানে ব্যবহারকারী তাকাচ্ছেন, ফলে পারফরম্যান্স হবে আরও মসৃণ।
এই যুগান্তকারী ডিভাইসগুলোর ঘোষণার মাধ্যমে ভালভ গেমিং জগতের প্রতিষ্ঠিত প্রতিযোগীদের সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশা রাখছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, মাইক্রোসফট-এর মালিকানাধীন এক্সবক্স তাদের সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা গেম পাস-কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যা অনেকের মতে তাদের কনসোলের জনপ্রিয়তাকে কিছুটা হলেও কমিয়েছে। অন্যদিকে, পিএস৫ বেশ কিছুদিন ধরেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া কনসোল, কিন্তু ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কবে এর পরবর্তী সংস্করণ বাজারে আসবে।
মিডিয়া রিসার্চ-এর গেম ইন্ডাস্ট্রি বিশ্লেষক ব্র্যান্ডন সাটন বলেছেন, এই ঘোষণাগুলো প্রমাণ করে যে 'গেমিং বাজার কোন দিকে এগোচ্ছে এবং গেমাররা ঠিক কী চান, সে সম্পর্কে ভালভ-এর গভীর ধারণা রয়েছে।'
তিনি বিবিসি-কে বলেন, 'যেখানে সনি এবং মাইক্রোসফট ধীরে ধীরে কনসোল এক্সক্লুসিভ গেম থেকে সরে আসছে এবং গেম স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, সেখানে একটি পিসি-কনসোল হাইব্রিড ডিভাইসের জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না।'
