কুয়াশার আড়ালে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা, পোকরোভস্কে তীব্র লড়াই
ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে রুশ সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্কের আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনের সপ্তম এয়ারবর্ন অ্যাসল্ট কোর জানিয়েছে, আবহাওয়া বিশেষ করে ঘন কুয়াশা রাশিয়াকে শহরটিতে আরও বেশি সংখ্যক সৈন্য ঢোকানোর সুযোগ দিয়েছে। মস্কো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত শহরটিকে ঘিরে ফেলে, সেখানে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অবরুদ্ধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
রাশিয়ার সেনারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পোকরোভস্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইউক্রেনীয় সেনারা বলছে, বর্তমানে শহরটিতে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ রুশ সেনা অবস্থান করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখনো "অত্যন্ত কঠিন।"
এদিকে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দর সিরস্কি জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জাপোরিঝঝিয়া ফ্রন্টে পরিস্থিতি "উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে", যেখানে ইউক্রেন তিনটি বসতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
তবে সিরস্কির দাবি, সবচেয়ে সক্রিয় সংঘর্ষ এখন পোকরোভস্ক ঘিরেই চলছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, রুশ সেনারা বেসামরিক গাড়ি ও মোটরসাইকেলে চড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় প্রকাশ্যেই চলাচল করছে।
বিবিসি ভিডিওটির অবস্থান যাচাই করে জানিয়েছে, এটি শহরের দক্ষিণ প্রান্তের সেলিদোভে–পোকরোভস্ক মহাসড়কে ধারণ করা হয়েছিল।
ইউক্রেনের ৬৮তম ব্রিগেডের "শেরশনি দোভবুশা" ইউনিটের এক ড্রোন পাইলট, যিনি "গুজ" ছদ্মনামে পরিচিত, বিবিসিকে বলেছেন যে কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে আকাশ থেকে নজরদারি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
তার ভাষায়, "এই কারণেই রাশিয়ানরা সাহস করে যানবাহনের সারি নিয়ে হামলা চালায় — যা স্বাভাবিক অবস্থায় (কুয়াশার চাদর না থাকলে) ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যেত।"
গুজ বলেন, তার ইউনিট নিয়মিতভাবে পায়ে হেঁটে বা মোটরবাইকে এগোনো ছোট রুশ দলগুলো শনাক্ত ও ধ্বংস করছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা আক্রমণ প্রতিরোধেও তারা অংশ নিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
তিনি দাবি করেন, ওই কনভয়টি আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়, তবে আবহাওয়ার কারণে ভিডিও পর্যবেক্ষণ সম্ভব না হওয়ায় পুরো ইউনিট ধ্বংস হয়েছিল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অনুমান করেছিলেন, পোকরোভস্কে প্রায় ৩০০ রুশ সৈন্য লড়ছে। সাম্প্রতিক ভিডিও এবং সামরিক সূত্রের তথ্য বলছে, সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। বুধবার ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে শহরের দক্ষিণাংশ এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে।
ইউক্রেনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ডিপস্টেট-এর মানচিত্র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পোকরোভস্কের বেশিরভাগ অঞ্চলেই রুশ বাহিনী এখন ঘিরে ফেলেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, শহরটির পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গুজ বলেন, শহরের অনেক অংশ এখন "ধূসর অঞ্চলে" পরিণত — যেখানে কোনো পক্ষেরই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। "আমরা হয়তো একটি ভবন ধরে রেখেছি, কিন্তু পাশের ভবনেই শত্রুরা রয়েছে। তারা পেছন দিক থেকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করছে," তিনি বলেন।
মস্কো এখন পোকরোভস্ক এবং পার্শ্ববর্তী মিরনোহ্রাদ শহরকে ঘিরে এক মরণফাঁদ তৈরির চেষ্টা করছে।
এই অবরোধ সম্পূর্ণ না হলেও, রুশ ড্রোনগুলো ইতিমধ্যে শহরের প্রবেশ ও নির্গমনপথে এফপিভি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালাতে পারছে।
অবরোধ ঠেকাতে ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্বাঞ্চলের সুভোরোভে ও রদিনস্কে এলাকায় রুশ সেনাদের কিছুটা পিছু হটিয়েছে, যাতে দুই দিকের রুশ ফ্রন্টের মধ্যে ফাঁক তৈরি হয়।
ওদিকে রাশিয়ান সেনারাও এখন পোকরোভস্কে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনাদের রসদ সরবরাহ লাইন কেটে ফেলার চেষ্টা করছে।
ড্রোন ও আর্টিলারি হামলার পাশাপাশি রুশ সেনারা স্থলপথেও সরাসরি আক্রমণ চালাচ্ছে বলে ইউক্রেনীয় ড্রোন পাইলট "গুজ" জানিয়েছেন।
এই কৌশলকে "ইনফিলট্রেশন" বা অনুপ্রবেশ পদ্ধতি বলা হয়, যা সাম্প্রতিক সময়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক কস্তিয়ানতিন মাশোভেৎস।
তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রুশ বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ইউক্রেনের এফপিভি ড্রোন পাইলটদের টার্গেট করছে, যাতে তারা ছোট রুশ ইউনিটগুলোর গতিবিধি শনাক্ত করতে না পারে।
মাশোভেৎস আরও বলেন, শহুরে এলাকায় রুশ সৈন্যরা অনেক সময় স্থানীয় নাগরিক বা ইউক্রেনীয় সেনার ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ করে। তাদের লক্ষ্য— ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষায় বিভ্রান্তি তৈরি করা, এরপর মূল বাহিনী এগিয়ে আসে।
একইসঙ্গে ক্রেমলিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুপিয়ানস্ক এবং দক্ষিণের জাপোরিঝঝিয়া ফ্রন্টেও অগ্রযাত্রা জোরদার করছে।
ইউক্রেনের জয়েন্ট অপারেশন ফোর্সের মুখপাত্র ভিক্টর ত্রেগুবোভ রাশিয়ার দাবিকে অস্বীকার করেছেন যে তারা কুপিয়ানস্ক ঘিরে ফেলেছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, শহরের দক্ষিণাংশে রুশ সেনারা উপস্থিত এবং পরিস্থিতি সেখানে "খুবই জটিল।"
