চলছে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা, লেবার নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্ব বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। স্টারমারের অনুগতদের আশঙ্কা, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজেট ঘোষণার পরপরই তার নেতৃত্ব পরিবর্তনের তোরজোড় শুরু হতে পারে। তার ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দলের ভেতরে 'গোপনে ষড়যন্ত্র' চলছে।
তবে লেবার নেতার মিত্ররা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নিজ দলের এমপিদের পক্ষ থেকে যেকোনো চ্যালেঞ্জ এলে স্টারমার তার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
দলের সমালোচকরা বলছেন, ডাউনিং স্ট্রিট এখন 'সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে' চলে গেছে, যা সরকারের বর্তমান সংকট কাটাতে কোনো সাহায্য করবে না।
দলে বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে যাদের নাম ঘুরছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব ওয়েস স্ট্রিটিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ, জ্বালানিমন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড এবং সাবেক পরিবহনমন্ত্রী লুইস হেইগ। এর মধ্যে ওয়েস স্ট্রিটিংয়ের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত, যদিও তার মুখপাত্র এসব খবর 'সম্পূর্ণ মিথ্যা' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্ট্রিটিং বর্তমানে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের সরকারি হাসপাতাল খাত [এনএইচএস] সংস্কারে এবং অপেক্ষমাণ রোগীর তালিকা কমানোর লক্ষ্যে।
তবে সরকারের ভেতর থেকে অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তার পদ নিয়ে আপসহীন অবস্থানে আছেন। একজন মন্ত্রী মন্তব্য করেন, 'তিনি এটা লড়ে যাবেন। এটা কোনো হার্থলপুল মুহূর্ত নয়।' ২০২১ সালের ওই উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর স্টারমার একসময় পদত্যাগের চিন্তা করেছিলেন, তবে মন্ত্রী বলেন, 'তিনি লেবারের ইতিহাসে জীবিত দুইজন নেতার একজন, যিনি জাতীয় নির্বাচনে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। এখন তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো পাগলামো ছাড়া কিছুই নয়।'
লেবার পার্টির ভেতরে অনেকেই স্বীকার করছেন, আগামী মে মাসে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডের স্থানীয় নির্বাচনের ফল সরকারকে কঠিন চাপে ফেলতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, এতদিন অপেক্ষা না করে এখনই নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার।
একজন জ্যেষ্ঠ এমপি বলেন, 'স্থানীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে, কিন্তু আমি তো আমার কর্মীদের ঝুঁকির মুখে মাঠে পাঠাচ্ছি। আমি চাই না সব কাউন্সিলর হারাতে।' আরেকজন যোগ করেন, 'বাজেটের পর নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণগুলো প্রতিদিনই বাড়ছে। ওয়েস যদি সাহস করে এগিয়ে আসে, ক্রিসমাসের আগেই সে প্রধানমন্ত্রী হতে পারে।'
ডাউনিং স্ট্রিটের এক সূত্র জানিয়েছে, 'সরকার এখন এমন অবস্থায় আছে যেখানে তারা নিজেদের সবচেয়ে অনুগত সদস্যদের বিরুদ্ধেই সন্দেহ করছে।' তাদের দাবি, স্টারমারের টিম অতীতে এঞ্জেলা রেইনার, লিসা ন্যান্ডি ও লুসি পাওয়েলকেও একইভাবে টার্গেট করেছিল—এখন ওয়েসের পালা।
স্টারমারের সমর্থকেরা তবে পাল্টা সতর্কতা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এখন নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হলে দল বিশৃঙ্খলায় ডুবে যাবে—যেমনটা শেষ দিকে কনজারভেটিভদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল। এতে দেশও অনিশ্চয়তায় পড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গড়া কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবু দলের একাংশের হতাশা লুকোনো যাচ্ছে না। এক মন্ত্রী বলেন, 'অবস্থা ভয়াবহ। কিয়ারকে জনগণ ঘৃণা করে। এটা করবিনের সময়ের চেয়েও খারাপ।' সাম্প্রতিক জরিপগুলোও বলছে, স্টারমার আধুনিক ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী, এবং লেবারের জনসমর্থন ২০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
তবু স্টারমারের ঘনিষ্ঠ মহল এখনো আশাবাদী। তাদের মতে, পরিপূর্ণতা নয়, বাস্তব বিকল্প হলো এই সরকার। রিফর্ম ইউকের উত্থান লেবারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি, আর স্টারমার বিশ্বাস করেন—নাইজেল ফারাজের সঙ্গে এই প্রজন্মের লড়াই তিনি শেষ পর্যন্ত জিতবেন।
তবে তার অনেক সহকর্মী এতে আশ্বস্ত নন। নতুন নির্বাচিত এক এমপি বলেন, 'আমরা টোরিদের মতো নই—এক সংসদে একাধিক নেতা বদলানো আমাদের রীতি নয়।'
