অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ‘বাউন্টি হান্টার’ ব্যবহারের পরিকল্পনা ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ অভিবাসীকে নির্বাসিত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে নির্বাসনের সংখ্যা এখনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। এই প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার উপায় খুঁজতে গিয়ে ট্রাম্প প্রসাশন সম্প্রতি অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীদের খুঁজে বের করতে 'বাউন্টি হান্টার' নিয়োগের প্রস্তাবনা দিয়েছে।
'দ্য ইন্টারসেপ্ট-এর হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, মার্কিন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিবাসীদের খুঁজে বের করার বিনিময়ে অর্থ প্রদান করার শর্তে বেসরকারি কোম্পানি খুঁজছে। সংস্থাটি বলছে, তারা 'বাউন্টি হান্টার' নিয়োগের সম্ভাবনা 'খতিয়ে দেখছে' করছে এবং আগ্রহী পক্ষগুলোকে প্রস্তাব দিতে বলেছে।
নথি অনুযায়ী, আইসিই যে কোম্পানিকে চুক্তিভিত্তিক কাজ দেবে, তাদের একবারে ১০,০০০ অভিবাসীর তথ্য প্যাকেজ দেওয়া হবে। কোম্পানির কাজ হবে ওই অভিবাসীদের অবস্থান নিশ্চিত করা। এই সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০ হাজার করে বাড়তে বাড়তে এক লাখে পৌঁছাবে। বাউন্টি হান্টারদের কাজ হবে আইসিই-এর দেওয়া ঠিকানা [বাড়ি বা কর্মস্থল] সঠিক আছে কি না, তা যাচাই করা।
নথিতে বলা আছে, 'নিয়োগপ্রাপ্ত সংস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অভিবাসীর বাসস্থানকে; তবে তা নিশ্চিত করা না গেলে কর্মস্থল যাচাই করতে হবে।'
যদি আইসিই-এর ফাইলে থাকা তথ্য ভুল চিহ্নিত হয়, তবে চুক্তিভিত্তিক কোম্পানিকে 'নতুন অবস্থানের তথ্য সরকারকে দিতে হবে, যাতে সরকার সহজে ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে পারে।' এই তথ্যের মধ্যে থাকতে পারে ঠিকানা, ফোন নম্বর, কর্মস্থল, যানবাহন, সম্পত্তি, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংক্রান্ত তথ্য।
চুক্তিভুক্ত কোম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য আইসিইকে ছবি এবং নথি সরবরাহ করতে হবে। সংস্থাটি হয় মামলাটি বন্ধ করে দিতে পারে অথবা কোম্পানিকে তদন্তাধীন অভিবাসীদের কাছে নথি পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করতে পারে, যা স্বাক্ষরিত রশিদসহ ব্যক্তিগতভাবে করতে হবে। ঠিকানায় বসবাসকারী যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নথি গ্রহণ করতে পারবে।
নজরদারি এবং যাচাইয়ের জন্য, সংস্থাটি বাউন্টি হান্টারদের বাজারে থাকা সব প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে— এর মধ্যে রয়েছে 'উন্নত অবস্থান অনুসন্ধান', অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় ও ম্যানুয়াল রিয়েল-টাইম 'স্কিপ ট্রেসিং'। আইসিই ইতোমধ্যেই লক্ষ্যবস্তুদের ফোন ট্র্যাক করার সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
চুক্তিভুক্ত কোম্পানিগুলোকে দ্রুত ফলাফল আনতে উৎসাহিত করার জন্য আইসিই কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে প্রণোদনা দেবার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে আর্থিক বোনাসও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম চেষ্টায় সঠিক ঠিকানা শনাক্ত করলে বোনাস দেয়া হতে পারে, বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুদের ৯০ শতাংশ লোকেশন নিশ্চিত করলে বোনাস দেওয়া হতে পারে।
নিউইয়র্কের অভিবাসন আইনজীবী লাটোয়া ম্যাকবিন পম্পি সতর্ক করে বলেছেন, 'এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।' তিনি বলেন, 'এই প্রস্তাবের ফলে কোম্পানিগুলো কতজনকে শনাক্ত করতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে বোনাস পাবে— এতে মানুষ সংখ্যা হয়ে যাবে, আর বাড়বে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ, ভুলভাবে চিহ্নিতকরণ ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি।'
তার দাবি, এতে মার্কিন নাগরিক, গ্রিন কার্ডধারী, বৈধ ও অবৈধ— সবারই লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাসিত করার চাপ বাড়ছে
ফাঁস হওয়া নথিতে আইসিই স্পষ্ট বলেছে, তাদের 'স্কিপ ট্রেসিং' ও 'প্রসেস সার্ভিং' সেবার 'তাৎক্ষণিক প্রয়োজন' রয়েছে। আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে ৬ নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছিল। কতগুলো কোম্পানি দরপত্র দিয়েছে—সে বিষয়ে এল পাইসকে এখনো কোনো তথ্য দেয়নি আইসিই।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ মানুষকে নির্বাসিত করা হয়েছে। অর্থবছর শেষ হতে হতে এই সংখ্যা ৬ লাখে নিতে চায় তারা (এতে সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে না দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত)। কিন্তু এই সংখ্যা এখনও ট্রাম্পের নির্ধারিত বছরে ১০ লাখ নির্বাসনের লক্ষ্য থেকে অনেক কম—যা তিনি ইতিহাসের 'সবচেয়ে বড়' নির্বাসন অভিযান হিসেবে দেখাতে চান।
আইসিই যেভাবে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালায়—তার ফলে অনেক আটক ব্যক্তি মনে করেন, তারা যেন 'বাউন্টি হান্টার'-এর হাতে ধরা পড়েছেন; যদিও সেটা সবসময় সত্য নয়। অনেক সময় আইসিই কর্মকর্তা চিহ্নবিহীন গাড়িতে যান, মুখ ঢেকে এগিয়ে আসেন, ইউনিফর্ম নেই, পরিচয়পত্রও দেখান না।
মেরিল্যান্ডের ব্রেন্টউডের মেয়র রোসিও ত্রেমিনিও-লোপেজ এল পাইসকে বলেন, 'তারা বলে তারা আইসিই, কিন্তু আমরা নিশ্চিত না। পরিচয়পত্র চাইলে দেখায় না।' তার অভিযোগ, ভিডিওগুলো দেখে মনে হয় তারা ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ পাওয়া এজেন্টও নয়,।আর ব্যবহৃত গাড়ির নাম্বারপ্লেটও অনেক সময় অন্য রাজ্যের; যেমন ফ্লোরিডা।
তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত আইসিই ও বাউন্টি হান্টারের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক সহযোগিতার মতো বিষয় ঘটেনি।
আন্তর্জাতিক বাউন্টি হান্টার ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট চাক জর্ডান ফোনে এল পাইসকে জানান, পরিচয় না দেখানোর কারণে বিভ্রান্তি হয়, কিন্তু তারা বাউন্টি হান্টার নয়। তিনি বলেন, 'বেল বন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভেতর আইন অনুযায়ী, যারা জামিন নিয়ে পালিয়েছে শুধু তাদেরই আমরা ধরতে পারি। এলোমেলোভাবে অভিবাসী খোঁজা অর্থাৎ আইসিই যা করে, তা আইনসম্মত নয়।'
তিনি বলেন, আইসিই যে ধরনের চুক্তি করতে চাইছে, তা হলে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির কাজ হবে শুধু তথ্য দেওয়া—গ্রেপ্তার করা নয়। তিনি বলেন, 'তারা তথ্যের জন্য পুরস্কার দিতে পারে—কিন্তু কাউকে ধরে আনার জন্য নয়।'
তবে আইসিই'র বাইরে মানুষকে রাস্তায় পাঠিয়ে অভিবাসী 'শিকার' করার ধারণা নতুন নয়। এ বছর অন্তত তিনটি অঙ্গরাজ্যে এমন প্রস্তাব উঠেছিল। মিশৌরি ও মিসিসিপিতে রিপাবলিকানদের প্রস্তাব ছিল, একজন অবৈধ অভিবাসী ধরলে একজন নাগরিককে ১,০০০ ডলার দেওয়া হবে—যা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে। আবার অ্যারিজোনায় প্রস্তাব ছিল, প্রতিটি গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে ২,৫০০ ডলার দেওয়া হবে।
