ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ধস, তবুও ভোটারদের মন জয় করতে পাচ্ছে না ডেমোক্র্যাটরা: জরিপ
ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি নিউজ-ইপসোস পরিচালিত নতুন এক জনমত জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে বেশিরভাগ আমেরিকানই অসন্তুষ্ট এবং তাদের মতে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তবে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক বছর আগে এই জরিপে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই। ট্রাম্পের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কোনো সুবিধাই তারা নিতে পারছে না এবং রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—উভয় দলের প্রতি ভোটারদের সমর্থন প্রায় সমানভাবে বিভক্ত।
জরিপে দেখা গেছে, সার্বিকভাবে ৪১ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের কাজকে সমর্থন করছেন, যেখানে ৫৯ শতাংশই তার কাজের বিরোধী। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে হামলার এক সপ্তাহ পরের জরিপের পর এটিই ট্রাম্পের প্রতি সর্বোচ্চ অসন্তোষের হার।
তবে রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখনও অটুট। ৮৬ শতাংশ রিপাবলিকান তাকে সমর্থন করছেন। অন্যদিকে, ৯৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট এবং ৬৯ শতাংশ স্বতন্ত্র ভোটার তার কাজের বিরোধী।
অর্থনীতি, অভিবাসন, শুল্ক, ফেডারেল সরকার পরিচালনা, অপরাধ ও মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন সংঘাতসহ আটটি বিষয়ের মধ্যে প্রায় সব ক্ষেত্রেই জনগণ ট্রাম্পের কার্যপ্রণালীকে অসন্তোষজনক মনে করছে। কেবল ইসরায়েল ও গাজার পরিস্থিতিতে বিরোধ কিছুটা কম, তবু ৫২ শতাংশ জনগণ অসন্তুষ্ট।
ট্রাম্প প্রধানত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শাসন করছেন, যা ফেডারেল সরকার, নির্বাচনী ব্যবস্থা, বেসরকারি খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ক্ষেত্রে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এসব আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা হয়েছে, যা এখনও বিচারাধীন।
জরিপে দেখা গেছে, ৬৪ শতাংশ মনে করছেন ট্রাম্প 'রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা' অনেকটা অতিরিক্ত করছেন। পাশাপাশি বেশিরভাগই তার সরকারের কর্মচারী ছাঁটাই, ন্যাশনাল গার্ডকে শহরে পাঠানো ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতি পরিবর্তনের চেষ্টা নিয়ে অতিরিক্ত পদক্ষেপ মনে করছেন।
অভিবাসন, বৈধ প্রবেশপথ বন্ধ করা ও ডিইআই (বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি) প্রোগ্রামের বিরোধ নিয়ে জনগণ বিভক্ত।
ভোটারদের আস্থা পাচ্ছে না ডেমোক্র্যাটরাও
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমলেও ডেমোক্র্যাটরা এর কোনো রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারছে না। জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকানরা প্রেসিডেন্ট এবং উভয় রাজনৈতিক দলকেই জনবিচ্ছিন্ন বলে মনে করে। তবে এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি।
৬৩ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পকে এবং ৬১ শতাংশ রিপাবলিকান দলকে জনবিচ্ছিন্ন মনে করলেও, ৬৮ শতাংশের মতে ডেমোক্র্যাটরা জনবিচ্ছিন্ন।
২০২৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আশা করছে ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু বর্তমান জরিপ একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আজ নির্বাচন হলে, নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে এবং ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকান প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের এই সময়ে ডেমোক্র্যাটরা ১১ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল।
ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো, যারা ট্রাম্পের কাজের সমর্থক, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই রিপাবলিকান প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু যারা ট্রাম্পের কাজের বিরোধী, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করছেন।
অর্থনীতি ও অভিবাসন নিয়ে অসন্তোষ
এক বছর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করার পেছনে ট্রাম্পের বড় হাতিয়ার ছিল নাজুক অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি। ট্রাম্প দ্রুত মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও মুদিপণ্যের মতো জিনিসের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। বর্তমানে ৫৯ শতাংশ আমেরিকান মনে করে, বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য ট্রাম্পই দায়ী।
অর্থনীতি পরিচালনায় ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন মাত্র ৩৭ শতাংশ, যেখানে ৬২ শতাংশই তার বিরোধী। মাত্র ২৭ শতাংশ মনে করে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি ভালো হয়েছে, আর ৫২ শতাংশের মতে অর্থনীতি আরও খারাপ হয়েছে।
অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের নীতি ব্যাপক সমালোচিত হলেও এই বিষয়ে তার জনপ্রিয়তা কিছুটা বেশি। ৪৩ শতাংশ আমেরিকান এই ইস্যুতে তার কাজকে সমর্থন করে, আর ৫৬ শতাংশ এর বিরোধী।
পররাষ্ট্রনীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্ত করা এবং একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়েছেন। এই বিষয়ে তার প্রতি সমর্থন গত মাসের ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬ শতাংশ হয়েছে।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে আমেরিকানদের একটি বড় অংশ (৪৬ শতাংশ) মনে করে, ট্রাম্প ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়াকে বেশি সমর্থন করছেন। মাত্র ৮ শতাংশ মনে করে, তিনি ইউক্রেনকে বেশি সমর্থন দিচ্ছেন। এই ইস্যুতে তার প্রতি সমর্থন ৩৯ শতাংশ, আর বিরোধিতা ৬০ শতাংশের।
সার্বিকভাবে, ৪৮ শতাংশ আমেরিকান মনে করে, ট্রাম্পের অধীনে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দুর্বল হয়েছে, যেখানে ৩৩ শতাংশ মনে করে এটি শক্তিশালী হয়েছে।
এই জরিপটি ২৪ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২,৭২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকের মধ্যে অনলাইনে পরিচালিত হয়েছে। সার্বিক ফলাফলে ত্রুটির সম্ভাব্য মাত্রা ±১.৯ শতাংশ।
