‘মামদানি মোবারক!’ নিউ ইয়র্কে মামদানির জয়ে উচ্ছ্বাসিত দক্ষিণ এশীয়রা
মঙ্গলবার রাতে জোহরান মামদানি যখন তার বিজয় ভাষণ দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠলেন, তখন কাবাব কিং-এর কর্মীরা স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। তারা তার বক্তৃতা রেকর্ড করলেন এবং তার প্রতিটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। কিছুক্ষণ আগে খাবারের চামচ-ছুরির ঠোকাঠুকির যে শব্দ শোনা যাচ্ছিল তা তখন নীরব হয়ে গিয়েছিল।
মামদানি ভাষণে বলেন, 'নিউ ইয়র্ক সিটি মুহূর্তটি অনুভব করো ও গভীরভাবে নিঃশ্বাস নাও।'
স্থানীয়রা কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় সেদিন নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির বিরিয়ানি খাওয়ার পছন্দের জায়গা কাবাব কিংয়ে ভিড় জমিয়েছিলেন। তারা আশা করছিলেন যে হয়তো তিনি এসে উপস্থিত হবেন — কারণ তিনি এই জায়গাতে প্রায়শই প্রচারণার জন্য আসতেন কিংবা পার্শ্ববর্তী হওয়ায় প্রায়ই প্রতিটি টেবিলে কাবাব-বিরিয়ানি সাজানো এ রেস্তোরায় তিনি ঢুঁ দিতেন।
রুজভেল্ট আইল্যান্ডের বাসিন্দা লক্ষ্মী শুভা তার দুই বন্ধুকে নিয়ে কাবাব কিং-এ এসেছেন। তিনি বলেন, 'অধিকাংশ মানুষ মনে করেন এটা খুব সাধারণ একটি জায়গা, কিন্তু তিনি এখানে আসেন।'
নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় মেয়র মামদানি নির্বাচিত হওয়ার পর পরই পার্শ্ববর্তী ব্রুকলিনে একটি ভাষণ দেন। সেখানে তিনি তার প্রচারণার জীবনী এবং তার শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধার কথা তুলে ধরেন।
বিজয় ভাষণে মামদানি বলেন, 'নিউ ইয়র্ক আগেও অভিবাসীদের শহর ছিল, অভিবাসীদের দ্বারা গড়ে উঠেছে, অভিবাসীদের শক্তিতে চলে, আর আজ রাত থেকে, অভিবাসীর নেতৃত্বে চলবে!'
রেস্তোরাঁয় দর্শকরা সেই মুহূর্তে হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
কাবাব কিং-এর মালিক শাহরুখ আলী বলেন, 'আমরা সেসময় "মামদানি মোবারক!" বলে উচ্ছাস করছিলাম।'
২১ বছর বয়সী মামদানি সমর্থক সমেহা জামাল বলেন, 'তিনি অবশ্যই একজন জনগণের মানুষ। তিনি আমাকে মনে করিয়ে দেন নিউ ইয়র্ক সিটি আসলে কিসের জন্য। আবার সেই অনুভূতি ফিরে পেয়ে ভালো লাগছে।'
জামালের বাবা মামদানিকে ভোট দিয়েছেন ও বলেন, অধিকাংশ গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রস্তাবনা তাকে আকর্ষণ করেছে, কিন্তু একজন বাড়ির মালিক হিসেবে, তিনি আরও স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছিলেন মামদানির ভাড়ার স্থিতিশীল অ্যাপার্টমেন্টের হ্রাস বন্ধ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে। তিনি তার বহুতল পারিবারিক বাড়ির একটি অংশ ভাড়া দেন এবং আশা করেন যে ভাড়া স্থগিতকরণ ছোট মালিকদের মতো ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব ফেলবে না। অন্যথায়, তিনি জানান, পরবর্তী নির্বাচনে তিনি মামদানির পক্ষে ভোট দেবেন না।
অন্যান্য ভোক্তারা বললেন, তারা এমন একজনকে দেখেছেন যে জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের পরিচয় প্রতিফলিত করেন। তারা বর্ণনা করে বলেন, এই নির্বাচনে মামদানিকে বিজয়ী ঘোষিত দেখার মুহূর্তটি তাদের আশা ও উত্তেজনায় পূর্ণ করেছে।
জ্যাকসন হাইটস একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এলাকা। নিউ ইয়র্ক সিটি স্মল বিজনেস সার্ভিসেসের একটি প্রতিবেদনের অনুযায়ী, এখানে প্রায় ৬৪ শতাংশ বাসিন্দা বিদেশী বংশোদ্ভূত, ৫০ শতাংশ হিস্পানিক বা ল্যাটিনো, ৩২ শতাংশ এশিয়ান, ১৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এবং ১ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান।
মামদানিকে ভোট দেওয়া আরেক ব্যক্তি সেহরিশ মুনির বলেন, 'আমি জীবনে কল্পনাও করিনি যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শহর নিউ ইয়র্ক সিটি, যা ৯/১১-এর মতো ঘটনা পার করেছে, সেখানে একজন মুসলিম সমাজতান্ত্রিক, দক্ষিণ এশীয় নেতা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন এবং এত মানুষ তাকে সমর্থন করবেন। আমি মনে করি, আমাদের যব সমাজ দেখিয়ে দিয়েছে তারা কোন দিকে যেতে চায়।'
ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এএপিআই ডেটার নির্বাহী পরিচালক কার্তিক রামকৃষ্ণনের মতে, দক্ষিণ এশীয়রা সাধারণত ডেমোক্র্যাটিককে সমর্থন করে, কারণ সংখ্যালঘুরা এই পার্টিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তিনি বলেন, 'তারা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে বেশি পরিচিতি অনুভব করে, এবং সময়ের সাথে সাথে তারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সেই নীতিগুলোকে সমর্থন করে যা শুধু বর্ণ বা ধর্মকে ছাপিয়ে যায়।'
মুনির বলেন, 'মামদানির দক্ষিণ এশীয় পরিচয় দক্ষিণ এশীয়দের জন্য উদযাপনের বিষয় হতে পারে কারণ তারা তার মধ্যে নিজেদের প্রতিনিধি বলে অনুভব করেন। কিন্তু তার মধ্যে কিছু নিউ ইয়র্কীয় গুণও আছে।'
তিনি বলেন, 'এটি তাঁর বিশ্বাসে স্পষ্ট। যে ভঙ্গিতে তিনি কথা বলেন, মানুষের সঙ্গে যে ভাবে তিনি সম্পর্ক গড়েন, তার প্রচারণা যেখানে তিনি এত ভাষায় কথা বলেছেন। তিনি জেনেই এসব করেছেন। বিশ্বের আর কোনো শহরে তিনি এমনটি করতে পারতেন?'
