'সর্বকালের সবচেয়ে বাজে ছবি! আমার চুল 'গায়েব' করে দিয়েছে': টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার প্রশংসা করে টাইম ম্যাগাজিন একটি 'তুলনামূলকভাবে ভালো' প্রতিবেদন ছেপেছে। কিন্তু সেই সংখ্যার প্রচ্ছদছবিটিই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চক্ষুশূল! যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ১০ নভেম্বরের টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদছবিটি 'ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম'।
ট্রুথ স্যোশাল প্ল্যাটফর্মে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, 'টাইম ম্যাগাজিন আমাকে নিয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো একটি গল্প লিখেছে, কিন্তু ছবিটি হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে।'
ছবিতে তাকে নিচ থেকে তোলা হয়েছে, আর পেছনে ছিল সূর্যের আলো। এর ফলে তার চুল 'গায়েব' হয়ে গেছে এবং মাথার ওপর ছোট একটি 'ভাসমান মুকুটের' মতো কিছু দেখা যাচ্ছে বলে তার অভিযোগ।
ট্রাম্প আরও বলেন, 'সত্যিই অদ্ভুত! নিচ থেকে তোলা ছবিতে আমার কখনোই পছন্দ হয়নি, কিন্তু এটি একটি 'খুবই বাজে' ছবি এবং এটি নিয়ে কথা বলা উচিত। তারা এটা কী করছে এবং কেন?'
টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে আসার প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকর্ষণ নতুন নয়। গত বছরও তিনি চারবার ম্যাগাজিনটির প্রচ্ছদে এসেছিলেন। এমনকি ২০১৭ সালে ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ তাকে তার কয়েকটি গল্ফ ক্লাবে টাঙানো ম্যাগাজিনের জাল প্রচ্ছদ সরিয়ে ফেলার অনুরোধও করেছিল।
৫ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে ব্লুমবার্গের জন্য গ্রায়েম স্লোন বিতর্কিত এই ছবিটি তুলেছিলেন। ছবির এই অ্যাঙ্গেল ট্রাম্পের চিবুক ও গলার জন্য সুবিধার ছিল না।
আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে ভুল করেননি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। তার প্রেস অফিস প্রচ্ছদটির একটি সংস্করণ টুইট করে, যেখানে ট্রাম্পের বিতর্কিত চিবুক ও গলার অংশটি পিক্সেল দিয়ে অস্পষ্ট করা ছিল।
এদিকে, ট্রাম্পের ছবি নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন অপ্রত্যাশিতভাবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য পরিচালক তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রামে লিখেছেন, টাইম ম্যাগাজিনের এই ছবি পছন্দ করাটা 'স্ব-অভিযুক্তমূলক'। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, 'একটি ছবি যাকে নিয়ে তোলা হয়েছে তার চেয়ে যারা এটি নির্বাচন করেছে তাদের সম্পর্কে অনেক বেশি কিছু প্রকাশ করে। কেবল অসুস্থ মানুষ, যারা বিদ্বেষ আর ঘৃণায় আচ্ছন্ন, হয়তো বিকৃতমনাও, তারাই এমন একটি ছবি পছন্দ করতে পারে।'
জাখারোভা আরও বলেন, 'একই প্রকাশনা শারীরিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও বাইডেনের জন্য যেভাবে প্রশংসামূলক ছবি প্রচ্ছদে ব্যবহার করেছে, তাতে টাইম ম্যাগাজিনের এই গল্পটি কেবল তাদের নিজেদেরই স্ব-অভিযুক্তমূলক।'
ট্রাম্পের প্রশ্ন—টাইম ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা কী করছিলেন এবং কেন এমনটা করলেন?
এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়ার ছবি সম্পাদক কার্লি আর্ল বলেন, এর পেছনে সৃজনশীলভাবে ক্ষমতাকে তুলে ধরার একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, 'ছবিটি প্রযুক্তিগতভাবে ভালো। তারা এই ছবিটি বেছে নিয়েছে কারণ তারা ট্রাম্পকে একজন বীরের মতো দেখাতে চেয়েছিল। কারো দিকে ওপরে তাকিয়ে থাকার ভঙ্গিমা তার বিশালত্বের অনুভূতি দেয়। আর ট্রাম্পের মুখ আসলে চিন্তাশীল এবং প্রায় দেবদূতের মতো দেখাচ্ছে।'
আর্ল আরও বলেন, 'ট্রাম্পের এমন শান্ত মুহূর্তের ছবি খুব একটা দেখা যায় না। ছবিটিতে এক ধরনের 'কোমলতা' আছে।'
ট্রাম্পের চুল 'গায়েব' হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আর্ল জানান, পেছনে সূর্যের আলো বেশি থাকার কারণে ছবির ওই অংশটি অতিরিক্ত এক্সপোজ হয়ে গেছে, যা এক ধরনের ' হেলো ইফেক্ট' তৈরি করেছে।
তিনি স্বীকার করেন, গল্পের শিরোনাম ছবির সঙ্গে ট্রাম্পের অভিব্যক্তির সঙ্গে ভালোভাবে মানালেও, 'আপনি সব সময় ছবির বিষয়বস্তুকে খুশি করতে পারবেন না।'
আর্ল বলেন, 'নিচ থেকে তোলা ছবি কেউই পছন্দ করে না। আর ছবির ধারণাগত দিকগুলো খুবই শক্তিশালী হলেও, নান্দনিক দিক থেকে এটি ততটা প্রশংসনীয় নয়।'