উদ্ভিদ নির্যাসে তৈরি সিরাম কয়েক সপ্তাহেই চুল বৃদ্ধিতে সক্ষম
চুল পড়া রোধ করার জন্য তৈরি একটি নতুন সিরাম মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ে আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখিয়েছে। উদ্ভিজ্জ নির্যাস এবং কোষ উদ্দীপক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই সিরামটি ব্যবহারের ফলে চুলের ঘনত্বে চোখে পড়ার মতো উন্নতি দেখা গেছে।
৫০ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পুরুষ এবং ৪০ শতাংশ নারীর মধ্যে বংশগত টাক পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। ফিনাস্টেরাইড এবং মিনোক্সিডিল এর মতো কিছু চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে, তবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির জেনেটিক্স এবং কতটা চুল ইতোমধ্যে ঝরে গেছে তার ওপর।
বিজ্ঞানীরা চুল পুনরুদ্ধারের জন্য স্টেম সেল ব্যবহার, ফাইব্রোব্লাস্ট (এক ধরনের কোষ যা যোজক কলা গঠনে সাহায্য করে) নিয়ন্ত্রণ এবং সুপ্ত হেয়ার ফলিকল বা চুলের গোড়াকে জাগ্রত করতে পারে এমন ওষুধের মতো নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন।
এই ধারাবাহিকতায়, তাইওয়ানের শোয়েইজার বায়োটেক কোম্পানির গবেষকরা একটি নতুন সিরাম তৈরি করেছেন। এর প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ক্যাফেইন: চুল পড়া রোধকারী শ্যাম্পুতে এটি একটি সাধারণ উপাদান।
- দুটি বিশেষ প্রোটিন: ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর-১ (IGF-1) এবং ফাইব্রোব্লাস্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর-৭ (FGF-7), যা চুলের গোড়া উজ্জীবিত করায় কার্যকর বলে প্রমাণিত।
- সেন্টেলা এশিয়াটিকা (থানকুনি পাতা): ত্বকের যত্নে বহুল ব্যবহৃত এই ভেষজ উদ্ভিদটি চুলের গোড়ার স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
গবেষণায় যা দেখা গেল
এই সিরামের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য, আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৬০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে একটি গবেষণা চালান। তাদের পাঁচটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলকে দেওয়া হয় একটি প্লেসিবো সিরাম (যাতে কোনো সক্রিয় উপাদান ছিল না) এবং দ্বিতীয় দলকে দেওয়া হয় ক্যাফেইন ও ভিটামিন বি৫ যুক্ত একটি বেস সিরাম। বাকি তিনটি দলকে এই বেস সিরামের সঙ্গে যথাক্রমে দুটি প্রোটিন, থানকুনি পাতার নির্যাস এবং সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে ৫৬ দিন ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের মাথার ত্বকে ১ মিলিলিটার সিরাম প্রয়োগ করতে বলা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, চুলের ঘনত্ব, চুলের পুরুত্ব এবং চুল পড়া কমার মতো প্রায় সব ক্ষেত্রেই পঞ্চম দলটি সবচেয়ে ভালো ফল পেয়েছে। বিশেষ করে চুলের ঘনত্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে; পঞ্চম দলে প্রায় ২৫ শতাংশ ঘনত্ব বেড়েছে, যা প্লেসিবো দলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
গবেষকরা মনে করছেন, থানকুনি পাতার নির্যাস বিশেষভাবে চুলের গোড়া শক্তিশালী করতে বা এর আশেপাশের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে পারে। লন্ডনের কিংস কলেজের ক্রিস্টোস জিওজিওস বলেন, 'এই উদ্ভিদটি অ্যান্টি-এজিং এবং প্রদাহরোধী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই একে এক ধরনের অলৌকিক উদ্ভিদও বলা চলে।'
তবে গবেষক এবং বিশেষজ্ঞ উভয়েই সতর্ক করেছেন যে, এই গবেষণাটি খুবই ছোট পরিসরে করা হয়েছে। এই ফর্মুলেশনের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা বাজারে আসার আগে আরও বড় এবং দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। জিওজিওস বলেন, 'চুল পড়ার পেছনের আণবিক কারণগুলো আমরা যত ভালোভাবে বুঝতে পারব, আমরা একটি যুগান্তকারী চিকিৎসার তত কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব।'
