মার্কিন বিমানঘাঁটিতে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করবে কাতার

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আইডাহোর একটি বিমান ঘাঁটিতে কাতারের বিমানবাহিনীর জন্য একটি বিশেষায়িত স্থাপনা নির্মাণে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হিগসেথ।
গত শুক্রবার পেন্টাগনে কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সৌদ বিন আবদুল রহমান আল-থানির সঙ্গে এক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন তিনি।
বৈঠকে হিগসেথ গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতারের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া আর কেউই গাজায় এই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন না। আর এই প্রক্রিয়ায় কাতার শুরু থেকেই একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।'
কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সৌদও এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ওয়াশিংটন ও দোহার সহযোগিতার প্রশংসা করেন। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা পরোক্ষ আলোচনায় মিশর ও তুরস্কের পাশাপাশি কাতারও সক্রিয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে হিগসেথ আইডাহোর মাউন্টেন হোম বিমান ঘাঁটির কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে কাতারের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ও পাইলটদের একটি দল অবস্থান করবে, যা 'দুই দেশের সম্মিলিত প্রশিক্ষণকে আরও শক্তিশালী করবে, যুদ্ধের সক্ষমতা ও আন্তঃকার্যক্ষমতা বাড়াবে।'
তবে পরে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কাতারের মিডিয়া অ্যাটাশে আলি আল-আনসারি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, 'এটি কাতারের কোনো বিমান ঘাঁটি হবে না।'
এক বিবৃতিতে তিনি জানান, 'কাতার একটি বিদ্যমান মার্কিন বিমান ঘাঁটির ভেতরে একটি বিশেষায়িত স্থাপনা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।' এর উদ্দেশ্য হলো 'উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় আন্তঃকার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা।'
আল-আনসারি আরও বলেন, 'এই ব্যবস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিত্রদের মধ্যে বিদ্যমান কর্মসূচির মতোই।' সিঙ্গাপুর, তুরস্ক এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশসহ ন্যাটোরও যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের প্রশিক্ষণ স্থাপনা রয়েছে।
কাতারে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন বিমান ঘাঁটি—আল-উদায়েদ—অবস্থিত। ২০২২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কাতারকে 'ন্যাটোর বাইরে প্রধান মিত্র' হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার সময় কাতার দুবার বিদেশি হামলার শিকার হয়েছে। গত জুনে ইরান আল-উদায়েদ ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল দোহার একটি এলাকায় হামলা চালায়, যেখানে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসেছিল। ওই হামলায় কাতারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত হন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই হামলাকে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস' বলে নিন্দা জানান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও কাতারের মাটিতে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলের সমালোচনা করেন।
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে বলা হয়, ওয়াশিংটন 'কাতারের ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর যেকোনো সশস্ত্র হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করবে।'
আদেশে আরও বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।