একদিনেই মৃত্যু ঘটাতে পারে এমন ভাইরাস থেকে হাতিদের বাঁচাতে নতুন টিকা উদ্ভাবন

এশীয় হাতির শাবকদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে পরিচিত এক প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কারে যুগান্তকারী সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক একটি গবেষক দলের তৈরি এই টিকাটি এলিফ্যান্ট এনডোথেলিওট্রপিক হার্পিসভাইরাস (ইইএইচভি) জনিত মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত শাবক হাতির মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশের বেশি।
যুক্তরাজ্যের সারি বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যানিমেল অ্যান্ড প্ল্যান্ট হেলথ এজেন্সি (এপিএইচএ) এবং চেস্টার চিড়িয়াখানার বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এই টিকা তৈরি করেছেন। সম্প্রতি চেস্টার চিড়িয়াখানায় কয়েকটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির ওপর টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়।
'নেচার কমিউনিকেশনস' জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষায় টিকাটি নিরাপদ এবং ভাইরাস প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এই সাফল্যকে 'এশীয় হাতি রক্ষায় একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত' বলে অভিহিত করে এপিএইচএ-এর অধ্যাপক ফালকো স্টেইনবাখ জানান, প্রথমবারের মতো হাতির শরীরে এমন একটি টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হলো যা ইইএইচভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম।
যেভাবে কাজ করে এই টিকা
গবেষক দলটি কাউপক্স ভাইরাসের টিকার পরীক্ষিত কাঠামো ব্যবহার করে নতুন এই টিকাটি তৈরি করেছে। তারা এই কাঠামোর মধ্যে ইইএইচভি ভাইরাসের প্রোটিন যুক্ত করেছেন।
এই প্রোটিনগুলো সরাসরি রোগ সৃষ্টি করে না, কিন্তু হাতির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এগুলোকে বহিরাগত শত্রু হিসেবে শনাক্ত করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, টিকাটি 'টি-সেল' নামক বিশেষ ধরনের প্রতিরোধক কোষ তৈরিতে সহায়তা করে, যা ভাইরাস সংক্রমণে লড়াই করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন এত মারাত্মক এই ভাইরাস?
ইইএইচভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হাতির শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। চিড়িয়াখানা, অভয়ারণ্য এমনকি বন্য পরিবেশেও এই ভাইরাসের সংক্রমণে বহু হাতির বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। শুধু চেস্টার চিড়িয়াখানাতেই গত দশকে সাতটি শাবকের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে।
অনেক প্রাপ্তবয়স্ক হাতির শরীরে এই ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু মায়ের দুধ ছেড়ে দেওয়ার পর শাবক হাতিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং তখন তারা এই ভাইরাসে সহজেই আক্রান্ত হয়।
বিজ্ঞানীদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা অল্পবয়সী হাতির ওপর এই টিকা পরীক্ষা করা। বর্তমানে টিকাটির চারটি ডোজের প্রয়োজন হলেও ভবিষ্যতে কম ডোজে একই সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা।
চেস্টার চিড়িয়াখানার প্রধান সংরক্ষণ বিজ্ঞানী ড. কেটি এডওয়ার্ডস বলেন, 'এই গবেষণা একটি মাইলফলক। এর অর্থ হলো, টিকাটি এখন আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।' তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই টিকা শুধু চিড়িয়াখানায় থাকা হাতি নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বনাঞ্চলে থাকা বিপন্ন এশীয় হাতিদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।