হঠাৎ নারীদের মধ্যে কেন বাড়ছে চুল লম্বা রাখার চল?
রাস্তায়, টেলিভিশনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায়—চোখ মেললেই আজকাল একটা দৃশ্য বেশ পরিচিত। বিশ্বজুড়ে নারীরা যেন হুট করেই লম্বা চুল রাখতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন! হলিউড তারকা থেকে শুরু করে রাজপরিবারের সদস্য, সবাই যেন 'রাপানজেল'-এর মতো লম্বা চুলের জাদুতে মজেছেন। কিন্তু কেন হঠাৎ এই পরিবর্তন? এটা কি নিছকই এক নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো গল্প?
তারকাদের দুনিয়ায় লম্বা চুলের জয়জয়কার!
যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে লম্বা চুলের। সম্প্রতি মিলান ফ্যাশন উইকে অভিনেত্রী ডেমি মুরের এক ঢাল কালো চুল দেখে মুগ্ধ সবাই। আবার দেখুন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাষ্ট্রীয় ভোজে সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আর প্রিন্সেস ক্যাথরিন—দুজনেই হাজির হয়েছিলেন খোলা লম্বা চুলে, যা তাদের সৌন্দর্যে যোগ করেছিল এক নতুন মাত্রা।
এমনকি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর মিশেল ওবামাও তার পরিচিত 'বব কাট' ছেড়েছেন। এখন তার লম্বা বেণী যেন তার নতুন ভাষা! একটা সময় ছিল যখন বলা হতো, বয়স বাড়লে চুল ছোট করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু মেলানিয়া ট্রাম্প, ডেমি মুরেরা সেই ধারণাকে একেবারে ভেঙে দিচ্ছেন।
ভেঙে যাচ্ছে পুরোনো ধারণা
চুল কখনোই শুধু চুল নয়, এটি ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতির আয়না। অতীতে ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে লম্বা চুলকে মনে করা হতো কুমারীত্বর প্রতীক। তাই চুল কেটে ফেলা ছিল পরিপক্কতার লক্ষণ। আবার কখনও লম্বা চুল ছিল বিদ্রোহের প্রতীক, যেমনটা দেখা গিয়েছিল বিখ্যাত মিউজিক্যাল 'হেয়ার'-এ।
কিন্তু এখন লম্বা চুল হয়ে উঠেছে নারীত্ব, ক্ষমতা এবং বয়সকে জয় করার এক নতুন হাতিয়ার।
আভিজাত্যের নতুন প্রতীক?
কিন্তু লম্বা চুলের এই ট্রেন্ডের একটি ভিন্ন দিকও আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অর্থ আর ক্ষমতার খেলা। অল্যুর ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা লিন্ডা ওয়েলস একে বলছেন 'ক্ষমতার প্রদর্শন'। তার মতে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, ঝলমলে লম্বা চুল ধরে রাখা বেশ খরচসাপেক্ষ।
কিছু হেয়ার স্টাইলিস্ট তো এর নামই দিয়েছেন 'ধনী মেয়েদের চুল'। বাইরে থেকে দেখতে সাধারণ লাগলেও, এর পেছনে থাকে দামী শ্যাম্পু, সিরাম আর পার্লারের বিপুল খরচ। বয়সের সাথে সাথে চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার প্রাকৃতিক নিয়মকে অস্বীকার করতেও প্রয়োজন দামী সাপ্লিমেন্ট আর ট্রিটমেন্ট। অর্থাৎ, লম্বা ঝলমলে চুল এখন যেন আভিজাত্য আর অর্থনৈতিক সচ্ছলতারও প্রতীক হয়ে উঠছে।
