সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞায় সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই সম্মত হতে হবে: পেন্টাগন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর ফলে গণমাধ্যমগুলো চাইলেই সরকারের অনুমোদনবিহীন কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না।
শুক্রবার প্রতিরক্ষা দপ্তর এক স্মারকলিপিতে জানায়, সাংবাদিকরা যদি অনুমোদনহীন সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেন, তবে তাদের প্রেস কার্ড বাতিল করা হতে পারে। গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার রক্ষাকারীরা বলেছেন, এসব বিধিনিষেধ স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পেন্টাগন কি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ করবে কিনা। জবাবে ট্রাম্প রোববার বলেন, 'না, আমি তা মনে করি না। সাংবাদিকদের থামানোর কিছু নেই।' তবে তাকে নতুন নীতিমালা নিয়ে সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমগুলোকে মেনে নিতে হবে যে অনুমোদন ছাড়া সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ, বা সেখানে প্রবেশ বা প্রবেশের চেষ্টা করলেও তাদের পেন্টাগন প্রেস কার্ড বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, দপ্তর জবাবদিহিতা ও জনআস্থার স্বার্থে স্বচ্ছতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে 'ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার' -এর তথ্য প্রকাশের আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে—তা শ্রেণিবদ্ধ না হলেও। ট্রাম্প দপ্তরটির নাম পরিবর্তন করে 'ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার' করার নির্দেশ দিয়েছেন, যদিও এ পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এই পদক্ষেপকে ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তারা মার্কিন সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে এসব সংবাদমাধ্যমকে তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট বলে আসছেন। পাশাপাশি এটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের (সাবেক ফক্স নিউজ উপস্থাপক) অধীনে পেন্টাগনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার একটি পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, যারা তাদের প্রেস কার্ড হারাবেন, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সব সামরিক স্থাপনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে, যার মধ্যে পেন্টাগনও অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মার্কিন সেনাবাহিনী সম্পর্কিত সংবাদ কভারেজ—বড় ধরনের পেন্টাগন ঘোষণাপত্র থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রের পদক্ষেপ বা দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম— সবকিছুকেই প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ একাধিক গণমাধ্যম। ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি একে 'স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি হামলা' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাইক বালসামো এক বিবৃতিতে বলেন, 'যদি আমাদের সেনাবাহিনী সম্পর্কিত সংবাদ প্রথমে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়, তবে জনগণ আর স্বাধীন সাংবাদিকতা পাবে না। তারা কেবল সেই তথ্যই পাবে, যা কর্মকর্তারা তাদের দেখাতে চান।'
বর্তমানে পেন্টাগনে রয়টার্সসহ দুই ডজনেরও বেশি সংবাদমাধ্যম কাজ করছে, যারা মার্কিন সেনাবাহিনীর দৈনন্দিন কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে থাকে।
নেব্রাস্কার রিপাবলিকান প্রতিনিধি ডন বেকন, যিনি একজন সাবেক মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য এবং প্রতিনিধি পরিষদের সশস্ত্র বাহিনী কমিটির সদস্য, এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট দিয়ে এসব বিধিনিষেধের সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম আমাদের দেশকে আরও শক্তিশালী করে। এটি শুনতে কেবল অপেশাদার সিদ্ধান্তের মতো লাগছে।'
অন্যদিকে, পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এক বিবৃতিতে বলেন, এগুলো কেবল কিছু মৌলিক ও সাধারণ নির্দেশিকা, যার লক্ষ্য সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং পেন্টাগনে কর্মরত সবার নিরাপত্তা বজায় রাখা।
ফেব্রুয়ারিতে পেন্টাগন তাদের নির্দিষ্ট অফিস কক্ষ থেকে চারটি সংবাদমাধ্যমকে সরিয়ে দেয় এবং একটি রোটেশন পদ্ধতি চালু করে, যেখানে ডানপন্থী প্রকাশনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে মে মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নির্দেশ দেন যে সাংবাদিকদের পেন্টাগনের অনেক অংশে প্রবেশের সময় অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে থাকতে হবে।