সম্প্রচারে ফিরছে চার্লি কার্ক নিয়ে ব্যঙ্গাত্বক মন্তব্যের জেরে স্থগিত হওয়া জিমি কিমেল শো

মার্কিন কৌতুকাভিনেতা জিমি কিমেল মঙ্গলবার থেকে আবারও তার লেট-নাইট টকশোতে ফিরছেন। রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার চার্লি কার্কের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কৌতুক করার পর তাকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানটি প্রচারকারী সম্প্রচার নেটওয়ার্ক এবিসি, সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, 'আমরা মনে করেছি কিছু মন্তব্য সময়োপযোগী ছিল না এবং তাই সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে। গত কয়েকদিন আমরা জিমির সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছি এবং সেই আলোচনার পর মঙ্গলবার থেকে অনুষ্ঠান ফের চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জনপ্রিয় টক শো উপস্থাপক জিমি কিমেল তার অনুষ্ঠানে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন। এর জেরে ট্রাম্প প্রশাসন এবিসি টিভি নেটওয়ার্কের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিলে, তড়িঘড়ি করে 'জিমি কিমেল শো' বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ স্থগিতাদেশ নিয়ে দেশজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
তবে কিমেলের পুনর্বহাল নিয়ে সোমবার হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি ট্রাম্প।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এবিসি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিনক্লেয়ার গত সোমবার জানিয়েছিল, মঙ্গলবার থেকে তারা তাদের এবিসি চ্যানেলগুলোতে 'জিম্মি কিমেল লাইভ!' বন্ধ করে সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, 'শো পুনঃপ্রচার করা হবে কি না তা নিয়ে এবিসির সঙ্গে আলোচনা চলছে।'
সিনক্লেয়ার এর আগে কিমেলের মন্তব্যকে 'অসংবেদনশীল ও দেশের জন্য গুরুতর মুহূর্তে অনুপযুক্ত' বলে আখ্যা দিয়েছিল। একইভাবে বৃহৎ সম্প্রচার সংস্থা নেক্সস্টারও গত সপ্তাহে ঘোষণা দেয়, তারা 'নিকট ভবিষ্যতে' কিমেলের অনুষ্ঠান প্রচার করবে না। যদিও পুনর্বহালের পর তারা এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এবিসির সিদ্ধান্তকে গত সপ্তাহে 'সেন্সরশিপ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত' বলে সমালোচনা করেছিলেন সমালোচক ও ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট অধিকারকর্মীরা।
২০০৩ সাল থেকে মধ্যরাতের [লেট-নাইট শো] অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে আসছেন কিমেল । চারবার অস্কারের মঞ্চে উপস্থাপনাও করেছেন তিনি। তবে স্থগিতাদেশ কিংবা বিতর্ক নিয়ে এখনো তিনি কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি।
ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে, রক্ষণশীল রাজনৈতিক ভাষ্যকার চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড নিয়ে জিমি কিমেলের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। একটি পর্বে কিমেল সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে ট্রাম্পের সমর্থক বা 'ম্যাগা রিপাবলিকান' বলে ইঙ্গিত করেন। যদিও উটাহ্ প্রদেশের পুলিশ জানিয়েছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী।
এছাড়া তিনি ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াকেও ব্যঙ্গ করেন। কার্কের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প যখন নতুন হোয়াইট হাউস বলরুম নির্মাণ নিয়ে কথা বলেন, কিমেল সেটিকে 'চার বছরের শিশুর সোনালি মাছ হারানোর শোক প্রকাশের সঙ্গে তুলনা করেন'।
ঘটনার পর ট্রাম্প নিযুক্ত এফসিসি (ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন) চেয়ার ব্রেন্ডান কার এবিসি ও এর মূল প্রতিষ্ঠান ডিজনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। তার বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেক্সস্টার ঘোষণা দেয়, তারা কিমেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে না।
পরদিন সিনক্লেয়ারও একই পথে হাঁটে এবং এবিসি জানায়, তারা অনুষ্ঠানটি 'অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত' করছে। কিমেলের কাছে প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ ও টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-কে অনুদান দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
এফসিসির ডেমোক্র্যাট কমিশনার আনা গোমেজ সোমবার বলেন, তিনি খুশি যে 'সরকারি ভয়ভীতির মুখেও ডিজনি সাহস দেখিয়েছে'। তিনি আরও জানান, 'এ ধরনের সেন্সরশিপ ঠেকাতে সারা দেশের মানুষ আওয়াজ তুলেছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'
ক্যালিফোর্নিয়ায় এবিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। লেখক, শিল্পী সংগঠন, আইনপ্রণেতা ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এএসিএলইউ) এর সমালোচনা করে জানায়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং এক ধরনের ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে।
কিমেলের সহকর্মী, যারাও তার মতো রাতের শোগুলোর উপস্থাপক—যেমন জন স্টুয়ার্ট, জন অলিভার ও সিবিএসের বিদায়ী সঞ্চালক স্টিফেন কোলবার্ট তার পাশে দাঁড়ান। হলিউডের শতাধিক শিল্পী ও সৃজনশীল ব্যক্তিও কিমেলের সমর্থনে যৌথ চিঠি দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বেন স্টিলার, জেনিফার অ্যানিস্টন, মেরিল স্ট্রিপ ও রবার্ট ডি নিরো। তারা কিমেলের স্থগিতাদেশকে 'মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক অন্ধকার মুহূর্ত' হিসেবে আখ্যা দেন।
এদিকে ডিজনির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অনেকেই ডিজনি প্লাস, হুলু ও অন্যান্য ডিজনি মালিকানাধীন স্ট্রিমিং সেবা বর্জনের ডাক দিয়েছেন।