অ্যাপল কি তবে প্লাস্টিকের সিমকে বিদায় জানাল?

দীর্ঘদিন ধরে ফোন চালাতে ব্যবহারকারীরা ছোট প্লাস্টিকের সিম কার্ড হাতে নিয়ে ট্রেতে ঢোকানোর ঝক্কি সামলেছেন। তবে নতুন আইফোন এয়ার ক্রেতাদের আর সেই ঝামেলায় যেতে হবে না। এটি শুধুমাত্র ই-সিম প্রযুক্তিতে চলবে—যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নেটওয়ার্ক বা প্ল্যান বদলাতে পারবেন ট্রে খোলার জন্য সুচ বা পিন খোঁজার দরকার ছাড়াই।
বিশ্লেষকদের মতে, ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের সিম কার্ডের বিদায় শুরু হয়েছে। যদিও একেবারে এখনই সব ফোন থেকে সিম ট্রে বাদ যাচ্ছে না, তবুও দিকটা স্পষ্ট—ভবিষ্যৎ হবে পুরোপুরি ই-সিম নির্ভর।
সিসিএস ইনসাইটের বিশ্লেষক কেস্টার ম্যান বিবিসিকে বলেন, 'অ্যাপলের এই ঘোষণা শারীরিক সিম কার্ডের সমাপ্তির সূচনা নির্দেশ করছে।'
সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল বা সিম কার্ড মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি কল, মেসেজ ও ডাটা ব্যবহারের মূল মাধ্যম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিকল্প হিসেবে এসেছে ই-সিম। নতুন অনেক ফোনেই এখনো শারীরিক সিম এবং ই-সিম—দুটোই ব্যবহারের সুযোগ থাকে।
তবে মঙ্গলবার উন্মোচিত নতুন আইফোন এয়ার সম্পূর্ণ ই-সিম নির্ভর। এটি হবে বিশ্বব্যাপী বাজারে প্রথম শুধু ই-সিমে চলা আইফোন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সাল থেকেই ই-সিমের আইফোন বিক্রি হচ্ছে।
তবুও অ্যাপল একেবারে শারীরিক সিম বাদ দিচ্ছে না। নতুন আইফোন ১৭ সিরিজের (১৭, ১৭ প্রো, ১৭ প্রো ম্যাক্স) কিছু অঞ্চলে শুধু ই-সিমে চললেও বেশিরভাগ দেশে এখনো সিম ট্রে থাকবে। স্যামসাং ও গুগলও একই কৌশল নিচ্ছে—ই-সিম চালু থাকলেও শারীরিক সিমের ব্যবহারের সুযোগও পাশাপাশি রাখা হচ্ছে।
তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি পরিষ্কার—আগামী দিনে সিম ট্রে পুরোপুরি বিলীন হবে।
সিসিএস ইনসাইটের সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, ২০২৪ সালের শেষে বিশ্বে ১৩০ কোটির বেশি স্মার্টফোন ই-সিমে চলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩১০ কোটিতে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক পাওলো পেসকাতোরে বলছেন, 'এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। খুব শিগগিরই সিম ট্রে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।'
ই-সিমের সুবিধা কোথায়?
পাওলো পেসকাতোরের মতে, ই-সিম ব্যবহারে একাধিক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে ফোনে ভেতরে অতিরিক্ত জায়গা সাশ্রয় হওয়া অন্যতম, যা বড় ব্যাটারি ব্যবহারের সুযোগ দেয়। তাছাড়া প্লাস্টিক সিম বাদ দেওয়ায় পরিবেশবান্ধব দিকও রয়েছে।
বিদেশ ভ্রমণে ব্যবহারকারীরা সহজে অপারেটর বদলাতে পারবেন এবং অপ্রত্যাশিত খরচের ঝুঁকিও কমবে।
কেস্টার ম্যান বলেন, ই-সিম নতুন গ্রাহক আচরণ তৈরি করবে এবং ধীরে ধীরে মানুষের মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগের ধরন পাল্টে দেবে। যেমন—সিম সংক্রান্ত কাজের জন্য অনেকেই আর দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন না।
তবে এই পরিবর্তন সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। ম্যানের ভাষায়, 'বয়স্ক বা প্রযুক্তি ব্যবহারে অনভ্যস্ত মানুষের জন্য পরিবর্তনটি কঠিন হতে পারে। এজন্য ইন্ডাস্ট্রিকে ই-সিম ব্যবহারের প্রক্রিয়া সহজভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।'