দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বামীরাও এখন নিতে পারবেন স্ত্রীর পদবী, আদালতের রায়

দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক আদালত যুগান্তকারী এক রায়ে ঘোষণা করেছে, স্বামীরাও এখন থেকে স্ত্রীর পদবী গ্রহণ করতে পারবেন। এতদিন আইনগতভাবে এই অধিকার সীমিত ছিল, যা আদালত বাতিল করেছে।
আদালত এই আইনকে 'ঔপনিবেশিক প্রভাব' এবং 'লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য' হিসেবে উল্লেখ করে দুই দম্পতির করা মামলার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
পাবলিক ব্রডকাস্টার এসএবিসি জানিয়েছে, হেনরি ভ্যান ডার মারওয়ে তার স্ত্রী জানা জর্ডানের পদবী নিতে পারেননি। একইভাবে আন্দ্রেয়াস নিকোলাস বর্নম্যানও তার স্ত্রীর নাম জেস ডনেলি-বর্নম্যানের 'ডনেলি' অংশটিকে যুক্ত করতে পারেননি।
এই রায় কার্যকর করতে সংসদকে এখন 'জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন' ও এর সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। আইনটি শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের সময়ে প্রণীত হয়েছিল।
মামলাকারী দম্পতিরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এই আইন সেকেলে ও পিতৃতান্ত্রিক এবং ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদ অবসানের পর গৃহীত সংবিধানের সমতার অধিকারের পরিপন্থী। নিম্ন আদালতে জয়ী হওয়ার পর তারা সাংবিধানিক আদালতে রায় নিশ্চিতের আবেদন জানান।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, আফ্রিকার অনেক সংস্কৃতিতে নারীরা বিয়ের পরও জন্মগত পদবী ব্যবহার করতেন, শিশুরাও প্রায়শই মায়ের বংশীয় পদবী নিত। তবে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ ও খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাবে এই প্রথার পরিবর্তন ঘটে।
রায়ে আরও বলা হয়, রোমান-ডাচ আইনের মাধ্যমে স্ত্রীর স্বামীর পদবী নেওয়ার প্রথা দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ আইনে যুক্ত হয়। উপনিবেশ স্থাপনকারী দেশগুলোর প্রবর্তিত আইনেও এই প্রথা প্রতিষ্ঠা পায়।
আদালতের মতে, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা 'উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি' অর্জন করেছে ঠিকই তবে ক্ষতিকর কিছু আইন ও রীতি এখনও রয়ে গেছে। এই মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী লিওন স্ক্রাইবার এবং বিচার ও সাংবিধানিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মামোলোকো কুবায়ি কেউই এই দুই দম্পতির আবেদনের বিরোধিতা করেননি; বরং একমত হয়েছেন।
এছাড়া ফ্রি স্টেট সোসাইটি অফ অ্যাডভোকেটস নামে একটি আইনি সংগঠনও মামলাকারীদের সমর্থনে আদালতে দাঁড়ায়। তাদের যুক্তি ছিল, পুরুষদের স্ত্রীর পদবী নেওয়ার অধিকার সীমিত করার মাধ্যমে আইনটি ক্ষতিকর রীতিকে উৎসাহিত করে এবং পুরুষদের এমন একটি পছন্দ থেকে বঞ্চিত করে যা নারীদের জন্য উন্মুক্ত।