নেপালে 'লুটপাট-জ্বালাও পোড়াও' বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি, বৃহস্পতিবার থেকে কারফিউ

নেপালে কেপি শর্মা ওলি সরকার পতনের পর কাঠমান্ডুতে একে একে উঠে আসতে শুরু করেছে মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ চিত্র। তাই নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত হিমালয়ের এই দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছে নেপালের সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভাঙচুর, লুটপাট বা অন্যের ওপর হামলার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ বুধবার পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড ইনফরমেশন ডিরেক্টরেটের একটি বিবৃতিতে নেপালের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্তমানে জারি করা নিষেধাজ্ঞা স্থানীয় সময় আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার (সেপ্টেম্বর ১১) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি হবে।
বিবৃতি আরও বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৫৮ বছর বয়সী জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল। গতকাল রাতে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সিগদেল বলেন, 'আমরা প্রতিবাদী গোষ্ঠীর প্রতি প্রতিবাদ কর্মসূচি বন্ধ করে জাতির জন্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সংলাপে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি করছি। আমাদের বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে এবং আমাদের ঐতিহাসিক ও জাতীয় ঐতিহ্য এবং জনসাধারণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে এবং সাধারণ জনগণ এবং কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।'
এসময় ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় হারানো প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'নেপালের ইতিহাসের শুরু থেকেই, নেপাল সেনাবাহিনী কঠিন পরিস্থিতিতেও দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জাতীয় একতা এবং নেপালি জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকেছে।'
এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, 'কিছু গোষ্ঠী বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির সুবিধা নিয়ে সাধারণ নাগরিক ও সরকারি সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি করছে।'
গত দুই দিনে নেপালের রাস্তায় নৃশংস সহিংসতা দেখা গেছে। এটি শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে একটি সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হিসেবে। তবে দ্রুতই তা সরকারের দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবের বিরুদ্ধে একটি বিশাল আন্দোলনে রূপ নেয়।
কেপি শর্মা ওলির সরকার বিক্ষোভ দমনে কড়া পদক্ষেপ নেয়।
পুলিশের অভিযানে ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ বড় আন্দোলনের দিকে মোড় নেয়। বিক্ষোভকারীরা নিজেদেরকে জেন-জি হিসেবে পরিচয় দেন। তারা রাজনীতিবিদদের বিলাসী জীবন ও নেপালি জনগণের দৈনন্দিন জীবনের অবস্থার মধ্যে বিরাট ব্যবধানকে তুলে ধরেন।
সরকারি ভবন এবং রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ সহিংস হয়ে ওঠে।
কেপি শর্মা ওলি প্রথমে পদত্যাগ করতে অস্বীকার করলেও, পরে বিক্ষোভকারীরা তার সঙ্গে আলোচনায় রাজি না হওয়ায় গতকাল তিনি পদত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পাওডেল আজ একটি বিক্ষোভকারী দলের সঙ্গে বৈঠক করার আশা করছেন, যাতে সঙ্কট সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে তিনি বলেন, 'আমি সকল পক্ষকে শান্ত থাকতে, দেশের ক্ষতি রোধ করতে এবং সংলাপে আসার জন্য আহ্বান জানাই। গণতন্ত্রে, নাগরিকদের উত্থাপিত দাবি সংলাপ ও আলোচনা মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।'
এদিকে, নেপালের সেনাবাহিনী কাঠমান্ডু বিমানবন্দর এবং সরকারের প্রধান সচিবালয় সিংহদুরবারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে।
কারফিউ জারি করা হলেও জরুরি সেবা যেমন-অ্যাম্বুলেন্স ও মৃতদেহ পরিবাহক গাড়ি, চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, 'বিক্ষোভের নামে যেকোনো বিক্ষোভ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, এবং ব্যক্তি ও সম্পদের উপর আক্রমণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'
সাংবাদিকসহ নেপালি নাগরিকদের শুধু সরকারি তথ্য বিশ্বাস ও প্রকাশ করার এবং গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।