ক্রোম বিক্রি করতে হবে না, তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তথ্য ভাগের নির্দেশ গুগলকে
গুগলকে ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করতে হবে না, তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তথ্য ভাগ করে নিতে হবে—যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক এমন আদেশ দিয়েছেন। খবর বিবিসি'র।
মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জজ অমিত মেহতা মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন। অনলাইন সার্চে গুগলের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি চলছিল।
মামলার মূল বিষয় ছিল, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ও ক্রোমের মতো নিজস্ব পণ্য এবং অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানের ডিভাইসে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে তাদের অবস্থান।
মার্কিন বিচার বিভাগ চাইছিল, গুগল যেন ক্রোম বিক্রি করে দেয়। তবে আদালত বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি ব্রাউজারটি রাখতে পারবে, কিন্তু একচেটিয়া চুক্তি আর করতে পারবে না এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সার্চ-সংক্রান্ত তথ্য ভাগ করে নিতে হবে।
গুগল প্রস্তাব দিয়েছিল, সহজ সমাধান হিসেবে অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির চুক্তি সীমিত করা যেতে পারে, যাতে ডিভাইস ও ব্রাউজারে গুগলকে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন রাখা পরিবর্তন হয়।
রায়ের পর গুগল একে নিজেদের জন্য বিজয় হিসেবে দেখেছে। তাদের দাবি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির উত্থান এই ফলাফলে ভূমিকা রেখেছে।
বিবৃতিতে গুগল বলেছে, 'আজকের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে শিল্পে এআইয়ের কারণে কতটা পরিবর্তন এসেছে, যা মানুষকে তথ্য খোঁজার আরও অনেক উপায় দিয়েছে।' তারা আরও জানায়, 'এটি আবারও প্রমাণ করে, আমরা ২০২০ সালে মামলা দায়েরের পর থেকে যা বলছি—প্রতিযোগিতা এখন তীব্র, আর মানুষ সহজেই নিজেদের পছন্দের সেবা বেছে নিতে পারে।'
গুগল শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি ছিল, গুগলের সার্চ ইঞ্জিন অন্যদের চেয়ে ভালো। আর মানুষ স্বাভাবিকভাবে এটিই বেশি পছন্দ করে।
গত বছর বিচারক মেহতা রায় দেন, গুগল অনলাইন সার্চ বাজারে আধিপত্য কায়েমে অন্যায্য উপায় ব্যবহার করেছে এবং মার্কিন আইন ভেঙেছে। তবে তিনি বলেন, ক্রোম বিক্রি করানো এই মামলার সঙ্গে মানানসই নয়। একইসঙ্গে গুগলকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমও বিক্রি করতে হবে না, যা দিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ স্মার্টফোন চলে।
গুগল যুক্তি দিয়েছিল, অ্যান্ড্রয়েডের মতো অংশ বিক্রি করে দিলে সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে না।
রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাবিগেইল স্লেটার লেখেন, 'আজকের নির্দেশ প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে একমত হয়েছে। তবে আদেশটি লক্ষ্য পূরণে যথেষ্ট কিনা, আমরা এখন সেটি বিবেচনা করছি।'
রায়ের পর গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের শেয়ার ৮ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। অ্যাপল, স্যামসাং ও মটোরোলার মতো স্মার্টফোন নির্মাতারাও এতে সুবিধা পাবে।
এর আগে গুগল এসব কোম্পানিকে প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার দিত, যাতে তারা গুগলের সার্চ, ব্রাউজার বা অন্যান্য অ্যাপ আগে থেকে যুক্ত করে দেয়। আদালতে প্রকাশ করা হয়, ২০২১ সালে শুধু অ্যাপল, মজিলা ও অন্যদের সঙ্গে এমন চুক্তির জন্য গুগল ২৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
এখন থেকে গুগল সার্চ, ক্রোম, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা জেমিনি অ্যাপের জন্য কোনো একচেটিয়া চুক্তি করতে পারবে না। ফলে ফোন নির্মাতারা চাইলে অন্য সার্চ ইঞ্জিন, ব্রাউজার বা এআই অ্যাসিস্ট্যান্টও আগে থেকে যুক্ত করতে পারবে। তবে ডিফল্ট অবস্থান পাওয়ার জন্য গুগল এখনো অর্থ দিতে পারবে।
ডিপওয়াটার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের জিন মুনস্টার বলেন, এই রায় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য সুখবর। তিনি বলেন, 'অ্যাপলও জিতেছে, কারণ এখন গুগলকে প্রতিবছর নতুন করে চুক্তি করতে হবে।'
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ভিজিবল আলফার মেলিসা অটো বলেন, রায়টা বাজার যেমন ভয় করছিল, ততটা কঠিন হয়নি। তিনি জানান, এ বছর গুগলের সার্চ ব্যবসা থেকে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার বড় অংশই বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে যাবে। ফলে সব বড় কোম্পানিরই লাভ হবে।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ডাকডাকগো অভিযোগ করেছে, রায় গুগলের বেআইনি আচরণ বদলানোর মতো কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান গ্যাব্রিয়েল ওয়েইনবার্গ বলেন, 'এর ফলে ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
এ রায়ে গুগলের মামলা শেষ হয়নি। মাসের শেষ দিকে বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের আরেক মামলায় আবারও আদালতে দাঁড়াতে হবে গুগলকে।
