সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ ভেপিং; জেল-জরিমানার সাথে আছে বেত্রাঘাত, ছাড় পাবেন না বিদেশিরাও

দেশে মাদক মিশ্রিত ভেপের (ই-সিগারেট) ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ।
নতুন এই পদক্ষেপে জরিমানা বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড এমনকি বেত্রাঘাতের মতো কঠোর বিধান রাখা হয়েছে। এই অপরাধে কোনও বিদেশি নাগরিক জড়িত থাকলে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে।
বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ প্রথম ভেপিং নিষিদ্ধ করেছিল, সিঙ্গাপুর তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০১৮ সালে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও এর ব্যবহার বন্ধ হয়নি। বরং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটিতে চেতনানাশক ড্রাগ 'ইটোমিডেট' মেশানো ভ্যাপের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
বিশ্বের অন্যতম কঠোর মাদক আইন কার্যকর থাকা এই দেশটিতে এমন ঘটনা ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইটোমিডেট মেশানো এই ভেপগুলো সিঙ্গাপুরে 'কে-পডস' নামে পরিচিত, যা 'কেটামিন পডস'-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কারণ, ইটোমিডেটের প্রভাব অনেকটা কেটামিনের মতোই।
সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জুলাই মাসে জব্দ করা ১০০টি ভেপের নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ ভ্যাপেই ইটোমিডেট পাওয়া গেছে।
সরকার ভেপিংয়ের জন্য শাস্তির বিধান আরও কঠোর করেছে। একইসঙ্গে ইটোমিডেটকে আগামী ছয় মাসের জন্য 'ক্লাস সি' নিয়ন্ত্রিত মাদকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন এই নিয়মাবলী আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
নতুন আইন অনুযায়ী, যারা সাধারণ ভেপ ব্যবহার বা নিজের কাছে রাখবেন, তাদের জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, যা সর্বনিম্ন ৫০০ সিঙ্গাপুরি ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার টাকা) থেকে শুরু হবে। এছাড়াও তাদের বাধ্যতামূলক পুনর্বাসন কর্মসূচিতে পাঠানো হবে। তবে ইটোমিডেট-মিশ্রিত ভেপসহ ধরা পড়লে শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে।
সিঙ্গাপুর সরকার জানিয়েছে, ইটোমিডেট এবং ভেপের মাধ্যমে সরবরাহযোগ্য অন্যান্য মাদক দমনের জন্য নতুন আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়মাবলী অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।
নতুন এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি বৃহৎ জনস্বাস্থ্য অভিযান এবং প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সিঙ্গাপুরের বাস, ট্রেন এবং জনসমাগমস্থলে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে ভেপিং থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ কমিউনিটি ক্লাব ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভেপ ফেলার জন্য বিশেষ বিন স্থাপন করেছে। পাশাপাশি, স্কুলগুলোতে ভেপিং-বিরোধী স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ট্রেন, বাস টার্মিনাল এবং পার্কগুলোতেও ভ্রাম্যমাণ টহল শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এসব স্থানে কর্মকর্তারা জনসাধারণের ব্যাগ তল্লাশিও চালাতে পারবেন।
সিঙ্গাপুরে ভেপের একটি বড় অংশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসে। তাই কর্তৃপক্ষ স্থল সীমান্ত, বিমানবন্দর এবং দ্বীপের অন্যান্য প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশি আরও জোরদার করেছে।