গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা, ৫ সাংবাদিকসহ নিহত অন্তত ২০

ইসরায়েল সোমবার গাজা উপত্যকার দক্ষিণে নাসের হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন সাংবাদিক, যারা রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, আল জাজিরা এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করতেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ক্যামেরাম্যান হুসাম আল-মাসরি, যিনি রয়টার্সের হয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন ছিলেন, খান ইউনিসের ওই হাসপাতাল থেকে সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচারের সময় প্রথম হামলায় নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েল এরপর ওই স্থানে দ্বিতীয়বার হামলা চালায়। এতে আরও কয়েকজন সাংবাদিকের পাশাপাশি উদ্ধারকর্মী ও মেডিক্যাল স্টাফ যারা সাহায্যের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন, নিহত হন।
নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন—মারিয়াম আবু দাগা, যিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের জন্য ফ্রিল্যান্স কাজ করতেন; মোহাম্মদ সালামা, যিনি কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; মোয়াজ আবু তাহা, একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক যিনি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করতেন এবং মাঝে মাঝে রয়টার্সের জন্য কাজ করতেন; এবং আহমেদ আবু আজিজ।
রয়টার্সের হয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করা ফটোগ্রাফার হাতেম খালেদ এ হামলায় আহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল এই 'দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনার' জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল সাংবাদিক এবং মেডিক্যাল স্টাফদের কাজকে গুরুত্ব দেয় এবং তাদের যুদ্ধ হামাসের সঙ্গে, সাংবাদিকদের সঙ্গে নয়।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নাসের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় হামালা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, জেনারেল স্টাফ প্রধান তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আইডিএফ বলেছে, 'নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের কোনো ক্ষতির জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা সাংবাদিকদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করি না। আইডিএফ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, একই সঙ্গে আমাদের সেনাদের নিরাপত্তা বজায় রাখে।'
রয়টার্সের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, 'আমরা ভীষণভাবে মর্মাহত যে আমাদের চুক্তিভিত্তিক ক্যামেরাম্যান হুসাম আল-মাসরি আজ সকালে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। মোয়াজ আবু তাহা একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক যার কাজ মাঝে মাঝে রয়টার্সে প্রকাশিত হতো; তিনি নিহত হয়েছেন এবং ফটোগ্রাফার হাতেম খালেদ আহত হয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা জরুরি তথ্য সংগ্রহ করতে এবং হাতেমের জন্য জরুরি চিকিৎসা সহায়তা পেতে গাজা ও ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি প্রশ্ন করেন, 'এটা কখন ঘটেছে?' তিনি বলেন, 'আমি তা জানতাম না। ঠিক আছে, আমি খুশি নই। আমি এটা দেখতে চাই না। তবে একই সময়ে আমাদের পুরো দুঃস্বপ্নটা শেষ করতে হবে।'
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, মারিয়াম আবু দাগা ও অন্যান্য সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর শুনে তারা 'হতবাক ও দুঃখিত'। আবু দাগা প্রায়ই নাসের হাসপাতালে অবস্থান করতেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ক্ষুধার্ত ও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন।
ইসরায়েলের দখল করা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে এবং ইসরায়েলকে দায়ী করতে আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নও ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে 'সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর উন্মুক্ত যুদ্ধ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় ২৪০-এর বেশি ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
'কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস' জানিয়েছে, গাজা ও অন্যান্য এলাকায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মোট ১৯৭ জন সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মী নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮৯ জন ফিলিস্তিনি। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলকে দায়ী করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে আমরা তদন্তের বাধ্যবাধকতা রাখি। আমরা সব সময় আমাদের ফলাফল স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করব। সক্রিয় যুদ্ধে রিপোর্ট করা বিপজ্জনক, বিশেষ করে হামাসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধের সময়, যারা নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।'
নাসের হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, একই দিনে খান ইউনিসের মাওয়াসি এলাকায় তাবুতে ইসরায়েলের গুলিতে স্থানীয় সাংবাদিক হাসান দোহান নিহত হয়েছেন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এর দুই সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ ও চারজন সাংবাদিক নিহত হয়। ওই হামলায় ইসরায়েল শরিফের সঙ্গে হামাসের সম্পৃক্ততা থাকার দাবি করেছিল। তবে আল জাজিরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।