আগের দাবিতে অনড় রাশিয়া: মস্কোর দাবি করা অঞ্চল একেবারে ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে

বুধবার রাশিয়া জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। গত বছর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেসব শর্তগুলো জানিয়েছিলেন। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনের সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাওয়া এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করা।
শুক্রবার আলাস্কায় পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। ২০২১ সালের পর এটি হবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রথম শীর্ষ বৈঠক, যেখানে যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য উভয় পক্ষকেই বর্তমানে যে ভূমি তাদের দখলে আছে, তার কিছু অংশ পরস্পরের মধ্যে বিনিময় করতে হবে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে—সমগ্র ক্রিমিয়া, সমগ্র লুহানস্ক, ডোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ, এবং খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও দ্নিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ।
কিছু গণমাধ্যমে খবর আসে যে, ওয়াশিংটন মনে করছে পুতিন ভূখণ্ড সংক্রান্ত দাবিতে আপস করতে প্রস্তুত। এ নিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আলেক্সেই ফাদেভকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেন, রাশিয়ার অবস্থান কি পরিবর্তিত হয়েছে কি না।
ফাদেভ বলেন, 'রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে, এবং এটি গত বছরের ১৪ জুন এখানেই, এই হলে, পুতিন যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাতেই প্রকাশ করা হয়েছিল।'
সে সময় সম্ভাব্য সমঝোতার কাঠামো নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিত প্রকাশ্য মন্তব্যে ক্রেমলিন প্রধান পুতিনের কয়েকটি শর্ত তুলে ধরেছিলেন। এর মধ্যে ছিল—ডোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের যে অংশগুলো এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেখান থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরে যেতে হবে।
পুতিন সেখানে আরও বলে ছিলেন, কিয়েভকে আনুষ্ঠানিকভাবে মস্কোকে জানাতে হবে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করছে এবং নিরপেক্ষ ও অ-জোট নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে।
এ ছাড়া পুতিন বলেন, ইউক্রেনে রুশভাষীদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্রিমিয়া, লুহানস্ক, ডোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন এখন রাশিয়ার অংশ—এই 'বাস্তবতা' মেনে নিতে হবে।
পুতিন বলেছেন, তার এসব শর্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিতেও প্রতিফলিত হতে হবে। ২০২৪ সালের ভাষণের সময় ইউক্রেন এসব দাবিকে অযৌক্তিক চূড়ান্ত আল্টিমেটামের সমতুল্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
ইউক্রেন বারবার বলেছে, তারা কখনোই তাদের ভূখণ্ডে রাশিয়ার দখল স্বীকার করবে না। অধিকাংশ দেশই ১৯৯১ সালের সীমারেখার মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেয়।
বর্তমান যুদ্ধরেখা অনুযায়ী, পুতিনের দাবিতে সাড়া দিলে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার (৮ হাজার ১০০ বর্গমাইল) ভূমি রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ভূখণ্ড সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হওয়ার আগে রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। তিনি রাশিয়ার এমন কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন, যাতে ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বা তাদের প্রতিরক্ষা লাইন ছেড়ে দিতে বলা হয়।