পুতিনের বাসভবনে হামলার অভিযোগ রাশিয়ার, অস্বীকার ইউক্রেনের
রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবনে ইউক্রেন হামলার চেষ্টা চালিয়েছে—এমন অভিযোগ তুলেছে মস্কো। সোমবার এ অভিযোগ করা হলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি রাশিয়া। কিয়েভ এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে, শান্তি আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করতেই এমন দাবি তোলা হচ্ছে।
পাল্টাপাল্টি এসব অভিযোগ ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন করে ধাক্কা লেগেছে। রাশিয়া জানিয়েছে, এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা শান্তি আলোচনার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছে।
এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধের একটি চুক্তির বিষয়ে তারা 'অনেক কাছাকাছি, এমনকি খুব কাছাকাছি' পৌঁছেছেন। তবে সীমান্তসংক্রান্ত কিছু জটিল বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এদিকে সোমবার পুতিন বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ক্রেমলিন আবারও দাবি করেছে, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখান থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
পুতিনের এক সহকারী জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, এই কথিত ড্রোন হামলার পর রাশিয়া তাদের অবস্থান নতুন করে খতিয়ে দেখছে।
ফোনালাপের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, হামলাটি সম্পর্কে তার কাছে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। ট্রাম্প বলেন, 'আক্রমণাত্মক হওয়া এক বিষয়, কিন্তু কারো বাড়িতে হামলা করা অন্য বিষয়। এখন এ ধরনের কাজ করার সঠিক সময় নয়। আমি আজ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছ থেকেই বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং এতে আমি খুব রাগান্বিত হয়েছি।'
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপকে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমাদের হাতে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে, যা আশা করি আমরা সমাধান করতে পারব। আর যদি সেগুলো সমাধান হয়, তাহলে আপনারা শান্তি দেখতে পাবেন।'
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, গত ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর মস্কোর পশ্চিমে নভগোরোদ অঞ্চলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ইউক্রেন ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ওই সব ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
লাভরভের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি এবং কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি।
এই হামলাকে 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ' হিসেবে আখ্যায়িত করে লাভরভ বলেন, 'এই ধরনের বেপরোয়া কাজ জবাবহীন থাকবে না।' তিনি আরও জানান, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে রেখেছে।
তবে টেলিভিশনে দেওয়া ওই বক্তব্যে তিনি তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। একই সঙ্গে হামলার সময় পুতিন কোথায় ছিলেন, সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।
লাভরভ বলেন, সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলাকালীনই এই হামলা চালানো হয়েছে। এর ফলে শান্তি আলোচনার বিষয়ে রাশিয়া তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে, তবে আপাতত আলোচনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।
ইউক্রেন এই হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রাশিয়া আসলে কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে হামলা চালানোর অজুহাত তৈরি করছে। তার মতে, যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান আলোচনার অগ্রগতি নস্যাৎ করতেই রাশিয়া এমন দাবি তুলছে।
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, 'এটি রাশিয়ান ফেডারেশনের আরেকটি মিথ্যা প্রচারণা। গতকাল আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং এটি স্পষ্ট যে আমাদের ও যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক বা কোনো অগ্রগতি রাশিয়ার কাছে ব্যর্থতারই সমান। কারণ তারা এই যুদ্ধ শেষ করতে চায় না।' তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রাজধানী কিয়েভ বা সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি হিসেবেই রাশিয়া এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিয়া সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, হামলার এই খবর একটি সাজানো নাটক। ইউক্রেনে আরও হামলা চালানোর অজুহাত তৈরি করতে এবং শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করতেই রাশিয়া এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগের জন্য বিশ্বনেতাদের রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান।
