হোয়াইট হাউসের প্রবেশপথ থেকে ওবামা ও বুশের ছবি সরালেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসের একসময়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পোর্ট্রেট বা ছবিটি এখন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায়। এর মধ্য দিয়ে ৪৪তম এবং ৪৭তম প্রেসিডেন্টের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা যেন আরও স্পষ্ট হলো।
শুধু ওবামা নন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং তার বাবা জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের ছবিও সরানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও বেশ তিক্ত।
সিএনএন দুটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ট্রাম্প নিজেই তার স্টাফদের ওবামার ছবিটি গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেসের (প্রধান সিঁড়ি) একেবারে উপরের দিকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এর ফলে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী, যারা হোয়াইট হাউস ঘুরে দেখতে আসেন, তাদের চোখের আড়ালে থাকবে ছবিটি। একটি সূত্র আরও জানিয়েছে, বুশদের ছবিগুলোও এখন সিঁড়ির ঐ অংশেই রাখা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের সাজসজ্জার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট নিজে সরাসরি জড়িত থাকেন।
সিএনএনের হাতে আসা একটি ছবিতে দেখা যায়, ওবামার ছবিটি সিঁড়ির একদম উপরে, প্রাইভেট রেসিডেন্সির প্রবেশ পথের একটি কোনায় ঝুলছে। এই জায়গাটিতে শুধুমাত্র নিকট পরিবারের সদস্য, মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট এবং হাতে গোনা কিছু কর্মচারীর প্রবেশাধিকার রয়েছে। ফলে, সাবেক প্রেসিডেন্টের বাস্তবধর্মী ছবিটি দেখার আশা নিয়ে আসা কোনো দর্শনার্থীর জন্যই এটি দেখা সম্ভব নয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ওবামার ছবি সরানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে এপ্রিলে, ওবামার ছবিটি গ্রান্ড ফয়ার (বড় প্রবেশ পথ) থেকে সরিয়ে পেনসিলভেনিয়ার বাটলার-এ ট্রাম্পের ওপর হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার দৃশ্যের ছবি লাগানো হয়েছিল।
হোয়াইট হাউসের প্রটোকল অনুযায়ী, সবচেয়ে সাম্প্রতিক সময়ের প্রেসিডেন্টদের ছবি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, অর্থাৎ এক্সিকিউটিভ ম্যানসনের প্রবেশমুখে রাখার নিয়ম, যাতে আনুষ্ঠানিক আয়োজন এবং ট্যুরে আসা অতিথিরা তা দেখতে পারেন।এই ছবি সরানোর ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সর্বশেষ খোঁচা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি এখনও তৈরি হয়নি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ওবামা এবং তার প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় ওবামার দপ্তর থেকে একটি বিরল বিবৃতি দেওয়া হয়, যেখানে এই দাবিকে "আপত্তিকর", "অদ্ভূত" এবং "মনোযোগ সরানোর দুর্বল প্রচেষ্টা" বলে অভিহিত করা হয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি প্রসিকিউটরদের নির্দেশ দেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য তৈরি করেছিলেন কিনা, তা তদন্তে একটি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করতে।
ট্রাম্পের সঙ্গে বুশ পরিবারেরও দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রয়াত সিনিয়র বুশ একটি জীবনীতে ট্রাম্পকে 'দাম্ভিক' বলেছিলেন এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, জর্জ ডব্লিউ বুশকে ট্রাম্প একজন 'ব্যর্থ ও অনুপ্রেরণাহীন' প্রেসিডেন্ট হিসেবে আক্রমণ করেছেন। বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ ২০১৫ সালে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও, তার পরের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেননি।
এ বিষয়ে সিএনএন হোয়াইট হাউস এবং হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনো সাড়া পায়নি। ওবামার দপ্তরের একজন মুখপাত্রও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে গ্রান্ড ফয়ার থেকে বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশের পোট্রেট সরিয়ে সেখানে উইলিয়াম ম্যাককিনলি ও থিওডোর রুজভেল্টের ছবি লাগিয়েছিলেন।
সাবেক হোয়াইট হাউস কিউরেটর বেটি মংকম্যান জানান, ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ফার্স্ট লেডি জ্যাকুলিন কেনেডির হাত ধরে অলাভজনক সংস্থা হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অর্থায়নে প্রেসিডেন্সিয়াল ছবির এই আনুষ্ঠানিক প্রথা শুরু হয়। এর আগে এই বিষয়টি বেশ "এলোমেলো" ছিল এবং কংগ্রেস বা প্রেসিডেন্টের বন্ধুদের অর্থায়নে, এমনকি কখনো কখনো প্রেসিডেন্ট নিজেও এর খরচ বহন করতেন বলে মংকম্যান ২০১৭ সালে একটি পডকাস্টে জানিয়েছিলেন।
আধুনিক যুগে হোয়াইট হাউসের ছবি উন্মোচন অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিরা তাদের পূর্বসূরি, সাবেক স্টাফ, বন্ধু ও পরিবারকে আমন্ত্রণ জানান।
মংকম্যান বলেন, "বিদায়ী প্রশাসনের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির উদারতার একটি নিদর্শন।" তিনি জনসন প্রশাসনের সময় এলিনর রুজভেল্টের পোট্রেট উন্মোচন অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করেন।