গৃহহীনদের ‘অবিলম্বে’ ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়তে বললেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শহরের অপরাধ দমনের প্রতিস্রুতির অংশ হিসেবে গৃহহীনদের অবশ্যই ওয়াশিংটন ডিসি থেকে 'সরে যেতে হবে'।
রোববার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করেন: 'আমরা আপনাদের থাকার জায়গা দেব, কিন্তু রাজধানী থেকে দূরে।' তিনি আরও বলেন, শহরকে 'আগের চেয়েও নিরাপদ ও সুন্দর' করার পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন।
তবে এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন ডিসির ডেমোক্র্যাট মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, 'আমাদের এখানে অপরাধ বাড়েনি।'
গত মাসে ট্রাম্প একটি আদেশে সই করেন। ওই আদেশের ফলে গৃহহীনদের গ্রেপ্তার করা সহজ হয়ে যায়। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশও দেন তিনি।
রোববার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, 'গৃহহীনদের অবশ্যই, অবিলম্বে সরে যেতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আপনাদের থাকার জায়গা দেব, কিন্তু রাজধানী থেকে দূরে। আর অপরাধীদের সরতে হবে না। আমরা তোমাদের জেলে পুরব, যা তোমাদের আসল জায়গা।'
রাস্তায় থাকা তাঁবু ও আবর্জনার ছবি যোগ করে তিনি বলেন, '"ভালোমানুষ" সাজার কোনো ব্যাপার নেই। আমরা আমাদের রাজধানীকে ফেরত চাই। এ বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!'

ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি। তবে ২০২২ সালের এক ভাষণে তিনি গৃহহীনদের শহরের বাইরে শৌচাগার ও চিকিৎসাসুবিধা সংবলিত কমদামি জমিতে 'উন্নত মানের' তাঁবুতে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
শুক্রবার ট্রাম্প 'সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে' চলে যাওয়া অপরাধ দমনের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল এজেন্টদের—ইউএস পার্ক পুলিশ, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ), এফবিআই ও ইউএস মার্শাল সার্ভিসের সদস্য—মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওকে জানান, শনিবার রাতে প্রায় ৪৫০ জন ফেডারেল অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডোজ) এক সাবেক কর্মী গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় হামলার শিকার হন।
ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীর রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করেন।
রোববার মেয়র বাউজার এমএসএনবিসিকে বলেন, 'এটা সত্যি যে ২০২৩ সালে আমাদের এখানে অপরাধ ভয়াবহভাবে বেড়েছিল, কিন্তু এখন ২০২৩ সাল নয়।
'আমরা গত দুই বছরে ধরে এই শহরে সহিংস অপরাধ কমিয়ে আনতে কাজ করেছি এবং একে ৩০ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছি।'
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অভ স্টাফ স্টিফেন মিলার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীকে 'বাগদাদের চেয়েও বেশি সহিংস' বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার সমালোচনা করেন তিনি।
অন্যান্য মার্কিন শহরের তুলনায় ওয়াশিংটন ডিসিতে মাথাপিছু হত্যাকাণ্ডের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯৮টি এ ধরনের হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত হয়েছে। এক দশক আগের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে হত্যাকাণ্ডের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী।
তবে জানুয়ারি মাসের ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসি গত বছর গাড়ি ছিনতাই, হামলা ও ডাকাতিসহ সামগ্রিকভাবে সহিংস অপরাধের ক্ষেত্রে গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হার নথিভুক্ত করেছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাজধানীতে সহিংস অপরাধ দমনের পরিকল্পনা তুলে ধরতে সোমবার হোয়াইট হাউসে একটি সংবাদ সম্মেলন হবে।
রোববার আরেক পোস্টে তিনি বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনে শহর থেকে 'অপরাধ, খুন ও মৃত্যু' নির্মূলের পাশাপাশি এর 'ভৌত সংস্কার' নিয়েও কথা বলা হবে।
তিনি বলেন, মেয়র বাউজার 'ভালো মানুষ, তিনি চেষ্টা করেছেন'; কিন্তু তার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অপরাধ ক্রমাগত 'আরও খারাপ' হচ্ছে এবং শহরটি 'আরও নোংরা ও কম আকর্ষণীয়' হয়ে উঠছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে গৃহহীনতা কমাতে কাজ করা সংস্থা কমিউনিটি পার্টনারশিপ রয়টার্সকে জানিয়েছে, ৭ লক্ষ বাসিন্দার এই শহরে প্রতি রাতে প্রায় ৩ হাজার ৭৮২ জন মানুষ গৃহহীন থাকেন। তাদের বেশিরভাগই সরকারি আবাসন বা জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও প্রায় ৮০০ জনকে 'রাস্তায় বসবাসকারী' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ওয়াশিংটন ডিসি কোনো রাজ্য না হয়ে ডিস্ট্রিক্ট হওয়ায় শহরটি সরাসরি ফেডারেল সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। স্থানীয় কিছু আইন বাতিল করার ক্ষমতা ফেডারেল সরকারের রয়েছে।
শহরের ফেডারেল জমি ও ভবনগুলো প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন। যদিও ডিস্ট্রিক্টের ফেডারেল নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে তার।
গত কয়েকদিনে ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে মেয়র বাউজার বলেন, আইনিভাবে সেটি সম্ভব নয়।