ট্রাম্পের শুল্কে ধাক্কা খেল দক্ষিণ কোরিয়ার কে-বিউটি শিল্প

বিশ্ববাজারে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানিপণ্যের তালিকায় গাড়ি ও স্মার্টফোনের পাশাপাশি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিউটি পণ্য। 'কে-বিউটি' নামে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়ার স্কিনকেয়ার, মেকআপ ও কসমেটিকস পণ্যের চাহিদা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর পেছনে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির বৈশ্বিক প্রসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর বিবিসি'র।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৭ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনার পার্ল ম্যাক জানান, তার স্কিনকেয়ার রুটিনের ৯৫ শতাংশই কে-বিউটি পণ্যনির্ভর। তিনি বলেন, 'দক্ষিণ কোরীয় সিরামগুলো তার ত্বকের জন্য পশ্চিমা ব্র্যান্ডের চেয়ে বেশি কার্যকর।'
পার্ল ম্যাকের মতোই আরও অনেক মার্কিন ভোক্তা কে-বিউটির প্রতি ঝুঁকছেন। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এই পণ্যে ব্যয় হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। জনপ্রিয়তার পেছনে এর সাশ্রয়ী মূল্য ও ব্যতিক্রমী উপাদান ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
তবে সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্ত কে-বিউটি ব্যবসার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আমদানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের কে-বিউটি খুচরা বিক্রেতা 'সন্তে ব্র্যান্ড' জানিয়েছে, এপ্রিলে তাদের অর্ডার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে শুল্ক আরোপের খবরে অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতা আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সন্তে ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়েন ওয়্যার বলেন, 'যখন শুল্ক সংক্রান্ত খবর আসে, তখন গ্রাহকরাও পরিস্থিতি সামলানোর কৌশল ঠিক করে নেয়।'
আরেক খুচরা বিক্রেতা 'সেনটি সেনটি'র ম্যানেজার উইনি ঝং জানান, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকির পর তারা অতিরিক্ত পণ্য অর্ডার করতে শুরু করেন। বিক্রেতারা বলছেন, শুল্কের ফলে আমদানি ব্যয় ও পণ্যের দাম দুটোই বাড়বে। চেয়েন বলেন, 'কেউ কেউ বলছে, আগামী দুই বছরে বিউটি পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকবে। আসলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।'
বিশেষজ্ঞরাও এই মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সান দিয়াগোর অর্থনীতিবিদ মুনসিওব লি বলেন, 'অ্যামাজনের মতো কম লাভে ব্যবসা করা প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য দাম বাড়ানো অনিবার্য। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার কারণে কে-বিউটির চাহিদা কমবে না বলেও তিনি মনে করেন। ভোক্তাদের কাছে এই পণ্যের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।'
উইনি ঝংও একই মত পোষণ করেন। তার মতে, দাম কিছুটা বাড়লেও ভোক্তারা আগ্রহ হারাবে না, তবে কম কিনবে। পার্ল ম্যাক বলেন, 'দাম বাড়লেও আমার জন্য তেমন সমস্যা হবে না। অবশ্য কতটা বাড়ছে সেটা বিবেচনা করব। তবে এখন পর্যন্ত আমি আমার পছন্দের পণ্যগুলো কিনতে বেশি দাম দিতেও প্রস্তুত আছি।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব এখনও দৃশ্যমান না হলেও খুব শিগগিরই তা বাজারে প্রতিফলিত হবে। কারণ, বর্তমানে বিক্রিত অধিকাংশ পণ্যই আগের দামে অর্ডার করা।
বাণিজ্য নীতির এই পরিবর্তনে বড় ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছেন দক্ষিণ কোরিয়া-ভিত্তিক ব্যবসা পরামর্শক এয়াল ভিক্টর মামু। তিনি বলেন, বড় কোম্পানিগুলো বেশি লাভের কারণে পণ্যের দাম না বাড়িয়েই বাজারে টিকে থাকতে পারবে। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎপাদনকারী ছোট কে-বিউটি কোম্পানিগুলোর জন্য এই ব্যয় সামলানো কঠিন হবে।
শুধু দক্ষিণ কোরিয়াই নয়, ট্রাম্প সম্প্রতি জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। ওই অঞ্চলগুলো থেকেও আমদানি করা পণ্যের ওপরেও ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের অন্যান্য বড় কসমেটিক ব্র্যান্ডগুলোকেও কে-বিউটির মতো একই চাপের মুখোমুখি হতে হবে।
ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়ানো হলেও মার্কিন ক্রেতারা আমেরিকান ব্র্যান্ডের দিকে ঝুঁকবেন কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।
পার্ল ম্যাক বলেন, 'আমি প্রায়শই আমেরিকার তৈরি বিকল্প পণ্যের সন্ধান করি। কিন্তু আমি এখনও এমন কিছু খুঁজে পাইনি যা আমার ব্যবহৃত পণ্যের মতো কার্যকর। তাই আমি এখনই মার্কিন পণ্যের দিকে যাব না।'