এক বছরে ৫১ বার নিরাপত্তাবিধি ভঙ্গ করেছে এয়ার ইন্ডিয়া

ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে গত এক বছরে ৫১টি নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। সংস্থাটির বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যদিও গত মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যুর সঙ্গে এই নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে ওই দুর্ঘটনার পর সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে তদন্ত ও নজরদারি শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিরীক্ষায় উঠে আসা ৫১টি লঙ্ঘনের মধ্যে সাতটি 'সর্বোচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা ঘাটতি' হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষকরা। তবে এসব ঘাটতির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে ডিজিসিএর নিয়মিত নিরীক্ষার সময় তারা 'সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা' বজায় রেখেছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, 'সব এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রেই নিয়মিত নিরীক্ষা একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম মূল্যায়ন ও উন্নত করা যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা নিরীক্ষার ফলাফল পেয়েছি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আমাদের প্রতিক্রিয়া ও গৃহীত সংশোধনমূলক পদক্ষেপের বিস্তারিত জানিয়ে দেব।'
ডিজিসিএ জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক নিরীক্ষায় আটটি বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সের মোট ২৬৩টি নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ঘাটতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে ৪৪টি 'লেভেল ২' এবং ৭টি 'লেভেল ১' পর্যায়ের লঙ্ঘন চিহ্নিত হয়েছে।
'লেভেল ১' আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও)-এর মতে যাত্রী বা বিমানের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি স্বরূপ। 'লেভেল ২' পর্যায়ের অনিয়ম তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর হলেও নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।

সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে অ্যালায়েন্স এয়ারের বিরুদ্ধে, যাদের ক্ষেত্রে ৫৭টি সমস্যা শনাক্ত করা হয়েছে। এর পর রয়েছে ঘোড়াওয়াত স্টার (৪১), কুইক জেট (৩৫), ইন্ডিগো (২৩) ও স্পাইসজেট (১৪)।
নিরাপত্তা ঘাটতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে তিন মাসের মধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। তবে ডিজিসিএ অনুমোদন দিলে এই সময়সীমা বাড়ানোও যেতে পারে।
সর্বশেষ নিরীক্ষায় এয়ার ইন্ডিয়ার নির্দিষ্ট ঘাটতিগুলোর বিস্তারিত এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এয়ারলাইন্সটির পাইলট প্রশিক্ষণে ঘাটতি, অনুমোদনবিহীন সিমুলেটর ব্যবহার এবং ভুলভাবে সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যা পাওয়া গেছে।
রয়টার্সের খবরে আরও জানানো হয়, বোয়িং ৭৮৭ ও ৭৭৭ বিমানের কিছু পাইলটের বাধ্যতামূলক মনিটরিং কার্যক্রম যথাযথভাবে না হওয়ায় কর্মকর্তারা 'পুনঃপ্রশিক্ষণের ঘাটতি' চিহ্নিত করেছেন।
চলতি মাসের শুরুতে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্চে ডিজিসিএ এয়ার ইন্ডিয়ার বাজেট এয়ারলাইন্স এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসকে তিরস্কার করেছিল। কারণ, তারা একটি এয়ারবাস এ৩২০ বিমানে ইঞ্জিনের একটি বাধ্যতামূলক যন্ত্রাংশের পরিবর্তন বিলম্ব করেছিল এবং নিয়ম অনুসরণের ভুয়া নথি জমা দিয়েছিল।
এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা ডিজিসিএর কাছে ত্রুটির দায় স্বীকার করেছে এবং 'সংশোধনমূলক ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ' গ্রহণ করেছে।
২০২০ সালের আগস্টে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ১৩৪৪ কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরের বৃষ্টির ফলে ভেজা রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ২১ জন নিহত হন।
এক দশক আগে, ২০১০ সালের মে মাসে দুবাই থেকে আসা ফ্লাইট ৮১২ মাঙ্গালোরে রানওয়ে পার হয়ে খাদে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়।
চলতি বছরের জুনে ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি ছিল গত ১৫ বছরে ভারতের তৃতীয় বড় বিমান দুর্ঘটনা।
এক দশক আগে, ২০১০ সালের মে মাসে দুবাই থেকে আসা ফ্লাইট ৮১২ মাঙ্গালোরে রানওয়ে ছাড়িয়ে খাদে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের জুনে এয়ার ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা ছিল ১৫ বছরে ভারতের তৃতীয় বড় দুর্ঘটনা।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ এয়ারলাইন্সগুলো ২,৪৬১টি প্রযুক্তিগত ত্রুটির রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ত্রুটি রিপোর্ট করেছে ইন্ডিগো (১,২৮৮টি), এরপর স্পাইসজেট (৬৩৩টি), এবং এয়ার ইন্ডিয়া ও এর সহায়ক প্রতিষ্ঠান এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস (৩৮৯টি), জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত।
ডিজিসিএ'র প্রধান ফাইজ আহমেদ কিদওয়াই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'ত্রুটিগুলোকে আমি সমর্থন করি না, তবে সংস্থাগুলোর যে সেল্ফ রিপোর্টিং শুরু হয়েছে, এটি একটি ইতিবাচক দিক।'