শুল্কের পরিমাণ জানিয়ে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দেওয়া শুরু হবে: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানিয়েছেন, কয়েক ডজন দেশের ওপর স্থগিত করা শুল্ক কার্যকর করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এর আগে এপ্রিলে এসব শুল্ক আরোপ হলেও দেশগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে চুক্তির জন্য তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল।
কিন্তু সেই চুক্তিগুলোর বেশিরভাগই এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে প্রতিটি আমদানিপণ্যের ওপর কী পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা কার্যত অন্ধকারে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আইওয়ার এক সমাবেশ থেকে ফিরে অ্যান্ড্রুজ এয়ার ফোর্স বেসে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, নতুন শুল্কের হার পূর্বে ঘোষিত হারের চেয়েও বেশি হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, 'আগামীকাল থেকেই আমরা বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠানো শুরু করব। শুল্কের হার ৬০ বা ৭০ শতাংশ থেকে শুরু করে ১০ বা ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।'
তিনি আরও জানান, তার প্রশাসন এই ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার দিন, অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিন চিঠি পাঠাতে থাকবে, যাতে সব দেশকে এর আওতায় আনা যায়। ছোট দেশগুলোর পালা আসবে শেষের দিকে। ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক আদায় শুরু হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'এতে দেশের জন্য প্রচুর অর্থ আসবে। তবে তাদের একটা ভালো দরকষাকষির সুযোগই দিচ্ছি আমরা।'
এর আগে প্রথম দফায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর 'পারস্পরিক শুল্ক' আরোপ করা হয়েছিল, যার হার ডিআর কঙ্গোর জন্য ১১ শতাংশ থেকে লেসোথোর জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল। এই শুল্ক প্রতিটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে একটি সূত্রের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এমনকি যেসব ছোট দেশের যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনার ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত, তাদের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রয়োগ করা হয়। এই পারস্পরিক শুল্কের পাশাপাশি সব দেশের ওপর ১০ শতাংশের 'ভিত্তি শুল্ক'ও চাপানো হয়েছিল।
এর কয়েক দিন পরেই বিশ্ববাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় বন্ড বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। চীনের ওপর ভিত্তি শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হলেও বাকি সব দেশের জন্য তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
তারপর থেকেই বিভিন্ন দেশ তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। চীন একটি সাময়িক রফায় পৌঁছেছে, যার ফলে তাদের শুল্ক কমে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মে মাসের শুরুতে ব্রিটেনের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়, যেখানে শুল্কের হার ১০ শতাংশই রাখা হয়েছে। আর এ সপ্তাহে ভিয়েতনাম একটি কাঠামোতে সম্মত হয়েছে, যার অধীনে তাদের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক এবং চীন থেকে ভিয়েতনাম হয়ে আসা পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে।
তবে জাপান, মালয়েশিয়া, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় জটিলতা হলো, তাদের আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক আইনসম্মত কি না, সে বিষয়ে আদালতের একটি অমীমাংসিত সিদ্ধান্ত। কয়েক দশক পুরোনো একটি আইনের আওতায় এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যেখানে যুক্তি দেখানো হয় যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। একটি আপিল আদালত মামলাটি বিবেচনাকালে প্রশাসনকে এই শুল্ক বহাল রাখার অনুমতি দিয়েছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরও একটি প্যাঁচ: প্রশাসন অন্যান্য ক্ষমতা ব্যবহার করে উড়োজাহাজ, কাঠ ও তামার মতো নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, পারস্পরিক শুল্কের হার কত হবে, সেই প্রশ্নের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, তিনি আশা করছেন, প্রায় ১০০টি দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, তবে আরও অনেক চুক্তি হওয়ার পথে রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, আগামী দিনগুলোতে আমরা অনেক তৎপরতা দেখতে পাব।' গত সপ্তাহে বেসেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কিছু আলোচনা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।