ইউএসএআইডির সহায়তা কাটছাঁটে দেড় কোটি মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে, শিশু ৪৫ লাখ: গবেষণা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বৈদেশিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বড় পরিসরে বাজেট কাটছাঁটের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সম্ভাব্য মৃত্যুর এক–তৃতীয়াংশই শিশু। খবর বিবিসির।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট ।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে এমন এক সময়ে, যখন স্পেনের সেভিয়া শহরে জাতিসংঘের নেতৃত্বে দশকের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা সম্মেলনে জড়ো হয়েছেন বিশ্বনেতারা। তবে সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিচ্ছে না।
গবেষণার সহ-লেখক ও বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গবেষক দাভিদে রাসেলা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) বাজেট কমানোর এই পদক্ষেপ নিম্ন ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক মহামারি বা সশস্ত্র সংঘাতের মতো সমান ধাক্কা দেবে।
গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইউএসএআইডির ৮০ শতাংশের বেশি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই খাতকে অপচয় বিবেচনা করে ব্যয় সংকোচন করেছে।
বিশ্বজুড়ে সমালোচিত এই তহবিল সংকোচনের উদ্যোগটির তদারক করেছেন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক, যিনি সে সময় ফেডারেল কর্মীবাহিনী ছোট করার এক উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক ব্যয় 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
রাসেলা জানান, ইউএসএআইডি ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৯ কোটির বেশি মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রেখেছে। রুবিওর দেওয়া তথ্যানুসারে যদি ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়, তাহলে ২০৩০ সালের আগেই ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে—যার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু থাকবে অন্তত ৪৫ লাখ।
যুক্তরাষ্ট্র এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ হিসেবে কাজ করে এসেছে। ২০২৩ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তায় ব্যয় করেছে ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ৬০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ইউএসএআইডি।
ট্রাম্পের বাজেট কাটছাঁটের পর যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ আরও অনেক দেশও সহায়তা হ্রাসের পথে হেঁটেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তারা আন্তর্জাতিক মানবিক খাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট সংকটে পড়েছে।
রুবিওর মতে, ইউএসএআইডির প্রায় ১ হাজার কর্মসূচি এখনো অব্যাহত আছে, তবে সেগুলো ভবিষ্যতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হবে।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গত মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, কেনিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে মানুষ ধীরে ধীরে অনাহারে মারা যাচ্ছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ কমে যাওয়ায় খাদ্য বরাদ্দ রেকর্ড পরিমাণে কমেছে।