ইরানের ছোড়া ক্লাস্টার মিসাইল, ইসরাইলের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে

ইরান বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলের দিকে ক্লাস্টার মিসাইল নিক্ষেপ করায় দেশটির যুদ্ধআইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে সাত কিলোমিটার উচ্চতায় গিয়ে ফেটে ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়, যা আট কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে বিস্তৃত হয়।
২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কনভেনশন অন ক্লাস্টার মিউনিশনস নামক এক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে প্রায় ১০০টি দেশ এই ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধ করে। ইসরায়েল, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেনি।
ইসরায়েল সর্বশেষ ক্লাস্টার মিসাইল ব্যবহার করেছিল ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধে। সে সময় দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে এটি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। তবে সে সময় আইডিএফের সামরিক আইন উপদেষ্টা অ্যাভিচাই মেন্ডেলব্লিট দাবি করেন, অস্ত্রটি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই ব্যবহার করা হয়েছিল।
ক্লাস্টার মিসাইল বিতর্কিত হওয়ার প্রধান কারণ এর বিস্তৃত ধ্বংসক্ষমতা, যা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করে। এটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নয়, বরং বিস্তৃত এলাকায় আঘাত হানতে ব্যবহৃত হয়।
এ কারণে জনবহুল এলাকায় ইরানি ক্লাস্টার মিসাইল হামলা ইসরায়েলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
তেল আবিবের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) গবেষক ড. ইহোশুয়া কালিসকি বলেন, ক্লাস্টার মিসাইল আটকানো কঠিন নয়; বরং চালিত ও ব্যালিস্টিক মিসাইলের ভিন্নতা আসল চ্যালেঞ্জ।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ব্যালিস্টিক মিসাইল নির্দিষ্ট পথে চলে এবং সহজে আটকানো যায়। চালিত মিসাইল মাঝপথে দিক বদলে ফেলে, যা বাধা দেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে।
কালিসকি জানান, ক্লাস্টার মিসাইল বহু ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়, যেগুলোর ওজন এক থেকে দুই কেজি হয় এবং এগুলো ছুঁলে বিস্ফোরিত হতে পারে।
মিসাইলটি মাঝপথে ধ্বংস হলে বোমাগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তাৎক্ষণিক বা ভবিষ্যতে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি করে। আর যদি এটি লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায়, সব বোমা একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়।
কালিসকির মতে, ইসরায়েলকে আগে থেকেই এই ধরনের হামলার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, 'ইরানিদের কাছে এমন অস্ত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়। হামাসও ধাতব বস্তু দিয়ে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। ইরানি মিসাইলটি সম্ভবত দেশীয় তৈরি এবং এটি তৈরি করতে জটিল প্রযুক্তি লাগে না।'
তিনি জানান, কয়েক বছর আগে ইরানের স্পেস ফোর্সের এক কমান্ডার এই মিসাইল তৈরির কথা স্বীকার করেছিলেন।
তবে ইরানের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায়, তাদের কাছে এই ধরনের আরও কত মিসাইল রয়েছে, তা অনুমান করা কঠিন।