অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে বাংলাদেশে পুশ ইন বাড়িয়েছে ভারত

আসাম রাজ্য থেকে মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৩০৩ জনকে অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে ৩০ হাজার ব্যক্তিকে বিদেশি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এসব ব্যক্তিকে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই বিতাড়ন করা হচ্ছে।
আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্য পরিষদে বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট থেকে চাপ আছে বিদেশিদের তাড়ানোর বিষয়ে। তাই এখন আমরা আরও সক্রিয় হয়েছি। ৩০৩ জনকে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। এই কাজ দিন দিন আরও জোরদার হবে।"
আসামে যাদের 'অবৈধ অভিবাসী' কিংবা 'বিদেশি' হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই আসলে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটিতে পরিবার ও জমিজমাসহ বসবাস করছেন। আসামের ২৬০ কিমি সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। ফলে এখানে বহু মানুষের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে এসেছেন । আসামি ও বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে বহুদিন ধরেই স্থানীয় চাকরি ও সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়ে আসছে। এখানকার অভিযুক্তদের অনেকে এতোটাই দরিদ্র যে এসব ট্রাইব্যুনালের রায় চ্যালেঞ্জ করার মতো আর্থিক সামর্থ্যও অনেকের নেই।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় মূলত মুসলিমদেরই লক্ষ্য করা হচ্ছে। অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অবৈধ অভিবাসী ঘোষণার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে। তবে আসাম সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।
আসামভিত্তিক আইনজীবী এবং কংগ্রেস দলের নেতা আমান ওয়াদুদ বলেন, "সরকার যেন ইচ্ছেমতো মানুষকে দেশছাড়া করছে। এখনকার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভয়াবহ।"
'নো ম্যানস ল্যান্ডে' দিনভর দাঁড়িয়ে
অবৈধ অভিবাসী ঘোষিতদের মধ্যে একজন পঞ্চাশোর্ধ খাইরুল ইসলাম । তিনি আসামের এক সরকারি স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৬ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল তাকে বিদেশি ঘোষণা করে। দুই বছর একটি আটককেন্দ্রে তাকে বন্দি করে রাখা হয় । ২০২০ সালের আগস্টে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
তিনি বলেন, গত ২৩ মে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়। এরপর ৩১ জনকে একসঙ্গে বেঁধে গাড়িতে তোলা হয়। চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় তাদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়।
"এরপর আমাদের মধ্যে ১৪ জনকে আরেকটি ট্রাকে তোলা হয়। এরপর আমাদের সীমান্তের একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এটা ছিল খুবই ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা, এরকম কিছু আগে কখনও হয়নি। তখন ছিল গভীর রাত, সোজা একটা রাস্তা ধরে আমরা হেঁটে যেতে থাকি।"
বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিষয়টি বিজিবিকে জানায়। এরপর বিজিবি তাদের ১৪ জনকে ধরে সীমান্তের মাঝখানে 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এ পাঠিয়ে দেয়। "সারা দিন আমরা খোলা মাঠে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে ছিলাম," বলেন তিনি।
পরে বিজিবি তাদের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এদিকে,খাইরুল ইসলামের স্ত্রী আসামে পুলিশকে জানান, তার স্বামীর মামলা এখনো আদালতে চলমান, তাই তাকে ফেরত আনা উচিত।
"কয়েক দিন পর আমাকে হঠাৎ করে আবার ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়," বলেন খাইরুল ইসলাম। "এইভাবেই আমি ঘরে ফিরতে পারি। কিন্তু আমার সঙ্গে থাকা অন্যদের কী হয়েছে, তারা কোথায় আছে কিছুই জানি না।"
শুধু আসাম নয়, ভারতে 'অবৈধ অভিবাসী' হিসেবে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে অন্যান্য রাজ্যেও অভিযান চলছে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের আহমেদাবাদ শহরের পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে অন্তত ২৫০ জন বাংলাদেশি অভিবাসীকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন। "তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে," বলেন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা অজিত রাজিয়ান।
অনুবাদ : নাফিসা ইসলাম মেঘা