‘ন্যাশনাল গার্ড’ মোতায়েন ইস্যুতে মামলা করায় ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরকে গ্রেপ্তার করা উচিত: ট্রাম্প

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সীমান্ত উপদেষ্টা টম হোমান। তার এ প্রস্তাবকে 'দারুণ' বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
অভিবাসনবিরোধী অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গভর্নরের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সোমবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'আমি টম হলে এটা করতাম। আমি মনে করি, এটা দারুণ একটা ধারণা।'
এমন মন্তব্যের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিউজমের প্রেস অফিস এক্সে এক পোস্টে জানায়, 'এই মাত্রার উত্তেজনা একেবারেই অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় এবং নজিরবিহীন।'
ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার। সোমবার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য সরকার ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে, যাতে রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েন ঠেকানো যায়। মামলায় দাবি করা হয়েছে, এই মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন ও রাজ্যের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সাময়িকভাবে প্রায় ৭০০ মেরিন সেনাকে লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন করতে যাচ্ছে, যতক্ষণ না আরও ন্যাশনাল গার্ড সদস্য সেখানে পৌঁছায়। অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ার ট্রাম্পের এটি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ।
শনিবার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসী ধরপাকড়ের পর বিক্ষোভ শুরু হলে ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ডদের সক্রিয় করেন। এরপর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এটি এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার সবচেয়ে বড় সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
টানা চতুর্থ দিনের মতো চলমান বিক্ষোভের মধ্যে মেরিন সেনা মোতায়েনের ঘোষণা আসে। সোমবার রাতের দিকে শত শত বিক্ষোভকারী ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি ফেডারেল আটককেন্দ্রের বাইরে জড়ো হলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে। ওই কেন্দ্রে অভিবাসীদের আটক রাখা হয়েছে।
ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা ভবনের বাইরে মানবপ্রাচীর গঠন করে সাধারণ মানুষকে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা থেকে বিরত রাখে। এরপর লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের একটি দল সড়ক ধরে এগিয়ে এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শুরু করে এবং 'কম মারাত্মক' ধরনের অস্ত্র, যেমন গ্যাস ক্যানিস্টার, ব্যবহার করে। শুক্রবার থেকেই পুলিশ একই ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে।
সোমবার বিকেলে এলএপিডি (এলএপিডি) জানায়, কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে বস্তু নিক্ষেপ শুরু করলে 'কম মারাত্মক' অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে এক্স পোস্টে পুলিশ জানায়: 'কম মারাত্মক অস্ত্র ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।'
এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে, ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের দল দ্বিগুণ করে ৪,০০০-এ উন্নীত করা হচ্ছে। তবে এক মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, আপাতত ট্রাম্প প্রশাসন 'ইনসারেকশন অ্যাক্ট' (বিদ্রোহ দমন আইন) কার্যকর করেনি, যা কার্যকর হলে সেনাদেরকে সরাসরি বেসামরিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া যেত।
মার্কিন মেরিন সেনারা অতীতে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা বা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার মতো বড় দুর্যোগে দেশের ভেতরে কাজ করেছে। তবে দেশীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের ঘটনা অত্যন্ত বিরল।