Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
September 21, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, SEPTEMBER 21, 2025
বিশ্বজুড়ে ছেলেশিশুর চেয়ে মেয়েশিশু পছন্দ করা মা-বাবার সংখ্যা বাড়ছে

আন্তর্জাতিক

দি ইকোনমিস্ট
14 September, 2025, 12:50 pm
Last modified: 14 September, 2025, 12:48 pm

Related News

  • বাবাকে লেখা চিঠি: ‘কাফকায়েস্ক’ পবিত্র আত্মার আর্তচিৎকার
  • মিয়ানমারে ধসে পড়া প্রি-স্কুলের সামনে বসেই চিৎকার করে সন্তানদের ডেকেছেন মা-বাবারা
  • যে কারণে নিজের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যান ইলন মাস্ক
  • বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে না পেরে রেখে গেল জঙ্গলে, গজারি বনে পড়ে ছিলেন ২ দিন
  • সন্তানদের জন্য খেলনা কিনবেন কি না

বিশ্বজুড়ে ছেলেশিশুর চেয়ে মেয়েশিশু পছন্দ করা মা-বাবার সংখ্যা বাড়ছে

বিভিন্ন দেশের মা-বাবারা একসময় ছেলেসন্তান চাইতেন বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ অবস্থা নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। আর ধনী দেশগুলোয় উল্টো মেয়েসন্তানের প্রতি পক্ষপাতের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।⁠
দি ইকোনমিস্ট
14 September, 2025, 12:50 pm
Last modified: 14 September, 2025, 12:48 pm
ইলাস্ট্রেশন: দি ইকোনমিস্ট

এক মার্কিন দম্পতি পার্টির আয়োজন করেছেন অনাগত সন্তানের 'জেন্ডার' জানার মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। 'ছেলে হবে!'—সোৎসাহে এক টিকটক ভিডিওতে ঘোষণা দেন তারা, যা পরে ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু হবু মা বেশিক্ষণ উচ্ছ্বাস দেখানোর ভান করতে পারেন না। কয়েক মুহূর্ত পরই তিনি সঙ্গীকে আঁকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সঙ্গী তাকে সান্ত্বনা দেন, একদিন তাদের মেয়ে হবেই। এরপ তারা ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

'জেন্ডার রিভিল' পার্টিগুলো বেশ জমকালো হয়। কনফেটি কামান বা ধোঁয়ার বোমা ফাটিয়ে জানানো হয় অনাগত শিশুর লিঙ্গ। গোলাপি ধোঁয়া মানে মেয়ে, নীল মানে ছেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ায় আকর্ষণীয় হ্যাশট্যাগ: #boyorgirl, #TractorsOrTiaras. কিন্তু এই উৎসবগুলোতে সন্তান ছেলে হলে কিছু হবু মায়ের হতাশা আর অতিথিদের সহানুভূতির দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্ম দিয়েছে এক নতুন ধারার—'জেন্ডার ডিসঅ্যাপয়েন্টমেন্ট' ভিডিও। এরকম অনেক ভিডিও ভিউ মুহূর্তেই মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। অসংখ্য পোস্টে বর্ণনা করা হয় 'মেয়ে না হওয়ায় বিষণ্ণ' অনুভূতির।

একসময় বিশ্বজুড়ে ছেলেসন্তানের প্রতি বাবা-মায়েদের ছিল প্রবল টান। অনেক সংস্কৃতিতে ছেলেরাই পারিবারিক নাম ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। ছেলেসন্তান এতটাই বেশি কাঙ্ক্ষিত ছিল যে অনেক মা-বাবা কন্যাসন্তান গর্ভেই নষ্ট করে দিতেন। এর ফলে চীন, ভারতসহ বহু দেশে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তবে গত কয়েক বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পুত্রসন্তানের প্রতি এই পক্ষপাত অনেকটা কমে এসেছে। আর উন্নত দেশগুলোতে এখন কন্যাসন্তানের প্রতি টান বৃদ্ধির লক্ষণ স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। মানব ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম বিশ্বের বহু অঞ্চলে ছেলেদের দিন দিন বোঝা হিসেবে এবং মেয়েরা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

স্বাভাবিক নিয়মে সাধারণত প্রতি ১০০টি মেয়েশিশুর বিপরীতে ১০৫টি ছেলেশিশু জন্মায়। এটি সম্ভবত পুরুষদের তুলনামূলক বেশি মৃত্যুহারে ভারসাম্য আনতে প্রকৃতির কৌশল। এই হার মাঝে-মাঝে ওঠানামা করে, যদিও বিজ্ঞানীরা কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। যেমন, যুদ্ধের পরপরই ছেলেশিশু জন্মের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। কিন্তু ১৯৮০-র দশকের আগপর্যন্ত—যখন আলট্রাসাউন্ডের খরচ অনেক বেশি ছিল-হবু মা-বাবার পক্ষে সন্তানের লিঙ্গ জেনে নিয়ে গর্ভপাত করার সুযোগ প্রায় ছিল না। ফলে পুত্রসন্তানের আশায় বড় পরিবার বড় হতো। শেষে ছেলেমেয়ে মিলিয়ে প্রায় সবসময়ই একটা ভারসাম্য বজায় থাকত।

'দুঃখের পোঁটলা'

তবে গত কয়েক দশকে—বিশ্বজুড়ে পরিবারগুলো যখন কম সন্তান নিচ্ছে—মা-বাবারা আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি যে তাদের অন্তত একটি ছেলেসন্তান অবশ্যই হবে। আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি তাদের এনে দিল বাছাইয়ের উপায়। এর ফলে গণহারে চালানো কন্যাশিশুর ভ্রূণহত্যা। 

চার্ট: দি ইকোনমিস্ট

দি ইকোনমিস্ট-এর হিসাব অনুসারে, ১৯৮০ সালের পর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে যে পরিমাণ কন্যাশিশুর জন্ম নেওয়ার কথা ছিল, তারচেয়ে প্রায় ৫ কোটি কম মেয়ে জন্ম নিয়েছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা যায় ২০০০ সালে—ওই বছর স্বাভাবিক অনুপাতে যে পরিমাণ জন্মানোর কথা ছিল, তার চেয়ে ১৭ লাখ বেশি ছেলে জন্মেছে। এমনকি ২০১৫ সালেও অতিরিক্ত ছেলেশিশু জন্মের সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি—অর্থাৎ অন্তত সমপরিমাণ কন্যাশিশুকে গর্ভেই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে দি ইকোনমিস্টের প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছর এই অতিরিক্ত ছেলেশিশুর জন্মের সংখ্যা কমে প্রায় ২ লাখে নেমে আসবে। এই নাটকীয় পতনের ২০০১ সাল থেকে প্রায় ৭০ লাখ কন্যাশিশুকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা গেছে। বিশ্বজুড়ে ছেলেসন্তানের প্রতি পক্ষপাত আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে, তার সঙ্গে কমেছে 'হারিয়ে যাওয়া' মেয়েদের সংখ্যাও।

যেসব দেশে পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাত সবচেয়ে বেশি ছিল, সেসব দেশেও লিঙ্গ অনুপাত এখন স্বাভাবিক হারের দিকে ফিরে আসছে। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৯০ সালে প্রতি ১০০ জন মেয়েশিশুর বিপরীতে প্রায় ১১৬ জন ছেলেশিশুর জন্ম হয়। বড় পরিবারগুলোতে এই ভারসাম্যহীনতা ছিল আরও প্রকট। তৃতীয় সন্তানদের মধ্যে প্রতি ১০০ জন মেয়ের বিপরীতে ছেলের সংখ্যা ছিল ২০০ জনেরও বেশি। চতুর্থ সন্তানদের ক্ষেত্রে ১০০ জন মেয়ের বিপরীতে ছেলের সংখ্যা প্রায় ২৫০-তে পৌঁছেছিল। অথচ বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছেলে-মেয়ের জন্মহার প্রায় সমান হয়ে গেছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীন ও ভারতেও ছেলেসন্তান চাওয়ার প্রবণতা দ্রুত কমে এসেছে। যদিও দেশ দুটিতে জন্মের সময়কার লিঙ্গ অনুপাত এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। চীনে ২০০০-এর দশকের বেশিরভাগ সময় প্রতি ১০০ মেয়েশিশুর বিপরীতে সর্বোচ্চ ১১৭ ছেলেশিশুর অনুপাত ২০২৩ সালে ১১১-তে নেমে এসেছে। ভারতে ২০১০ সালে লিঙ্গ অনুপাত ছিল ১০৯, ২০২৩ সালে কমে তা হয়েছে ১০৭।

বিভিন্ন জরিপও এই পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলছে। এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশেই বাবা-মায়েরা সন্তানদের লিঙ্গ নিয়ে বিশেষ পছন্দ প্রকাশ করলেও ছেলে-মেয়ে চাওয়ার পরিমাণ এখন অনেকটাই কাছাকাছি। যেমন বাংলাদেশে যে নারীরা এখনও সন্তান জন্ম দেননি, তাদের মাঝে ছেলে ও মেয়ে চাওয়ার প্রবণতা প্রায় সমান। যাদের ইতিমধ্যে এক বা দুই সন্তান রয়েছে, তারা আগে ছেলের জন্ম দিলে পরেরবার মেয়ে চান—আবার আগে মেয়ের জন্ম দিলে পরেরবার ছেলে পাওয়ার আগ্রহ বেশি দেখান। সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক অংশেও গবেষকরা এই ভারসাম্যপ্রীতি দেখেছেন। 

দীর্ঘমেয়াদে ছেলেসন্তানের প্রতি এই পক্ষপাত কমে যাওয়ায় যেসব দেশে লিঙ্গ অনুপাতের ভারসাম্যহীনতা সবচেয়ে বেশি, সেগুলোতে স্বাভাবিক অনুপাত ফিরে আসতে পারে। এর অর্থ, মেয়ের অভাবে মাথাচাড়া দেওয়া সামাজিক সমস্যা—যেমন অপরাধ বৃদ্ধি কিংবা বিদেশি কনে পাচার থেকে দেশগুলো ধীরে ধীরে মুক্তি পাবে। যদিও অতীতের পক্ষপাতের প্রভাব পুরোপুরি বিলীন হতে এখনও কয়েক দশক লেগে যাবে।

এদিকে উন্নত বিশ্বে মেয়েশিশু চাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পরিসংখ্যান সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৫ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে অন্তত ছেলে থাকা 'জরুরি' বলে মনে করতেন, এমন নারীর হার ৪৮ শতাংশ থেকে কমে মাত্র ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রায় অর্ধেক নারীই এখন মেয়েসন্তান চান। 

ইলাস্ট্রেশন: দি ইকোনমিস্ট

জাপানেও জরিপে কন্যাশিশু চাওয়ার প্রতি স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে। দেশটির ন্যাশনাল ফার্টিলিটি সার্ভে অনুযায়ী, ১৯৮২ সালে যেসব দম্পতি কেবল একটি চাচ্ছিলেন, তাদের ৪৮.৫ শতাংশ মেয়ে চাইতেন। ২০০২ সাল নাগাদ এই হার ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি দুই বা তিন সন্তানের ক্ষেত্রে পছন্দের দোলাচলে মেয়েই এগিয়ে।

কয়েকটি অঞ্চলে জন্ম-পরিসংখ্যানেও মেয়েদের প্রতি এই নতুন পক্ষপাত ফুটে উঠতে শুরু করেছে। যেমন, ক্যারিবীয় ও সাব-সাহারান আফ্রিকার কিছু কিছু এলাকায় জন্মের সময়কার লিঙ্গ অনুপাত স্বাভাবিক হারের চেয়েও কিছুটা কম (অর্থাৎ মেয়েদের অনুকূলে)। এসব অঞ্চলে প্রতি ১০০ মীশিশুর বিপরীতে ১০০ বা ১০১টি ছেলেশিশু জন্মায়। ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রতি তিন পরিবারের মধ্যে একটির প্রধান একজন নারী। ওই অঞ্চলে নারীদের ছেলেসন্তানের তুলনায় মেয়েসন্তান চাওয়ার হারই বেশি। সাব-সাহারান আফ্রিকায় মেয়েসন্তান চাওয়ার একটি বড় কারণ হতে পারে সেখানকার বিয়ের একটি প্রথা। এ প্রথা অনুসারে, বিয়ের সময় ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে কনের পরিবারকে মোটা অঙ্কের পণ দিতে হয়।

তবে বেশিরভাগ দেশে, জরিপে মেয়েদের প্রতি পক্ষপাত দেখা গেলেও সেটি জন্মের সময়কার সামগ্রিক লিঙ্গ অনুপাতকে প্রভাবিত করার মতো শক্তিশালী নয়। অর্থাৎ বেশিরভাগ হবু মা-বাবা শিশুর লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাতের দিকে এগোন না। তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে যখন পছন্দ করাটা তুলনামূলক সহজ হয়—যেমন দত্তক গ্রহণ বা ফার্টিলিটি চিকিৎসার মাধ্যমে—তখন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অভিভাবকদের পক্ষপাতিত্বের নির্ভরযোগ্য সূচক হলো, তারা আগের সন্তানদের লিঙ্গের ভিত্তিতে আরও সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কি না। এখানেও কন্যাসন্তানের আগ্রহের বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলছে।

সন্তানের আকাঙ্ক্ষা ও লিঙ্গপ্রীতির নতুন বাঁক

আগে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যেত, যেসব মা-বাবার কেবল মেয়ে আছে, তাদের সন্তান নেওয়া অব্যাহত রাখার প্রবণতা বেশি ছিল—সম্ভবত ছেলেসন্তানের আশায়। ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ডিয়েগোর গর্ডন ডাল ও বার্কলির এনরিকো মোরেটি ২০০৮ সালে এক গবেষণায় এমনটাই উল্লেখ করেন। ১৯৬০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জনগণনার তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা দেখান, যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মায়েরা ছেলেসন্তানই বেশি পছন্দ করতেন।

কিন্তু সম্প্রতি এই প্রবণতা পুরোপুরি উল্টে গেছে। ২০১৭ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ফ্রানসিন ব্লাউয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন যেসব দম্পতির প্রথম সন্তান মেয়ে হচ্ছে, তারা তুলনামূলকভাবে কম সন্তান নিচ্ছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে এখন মেয়েসন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বেশি।

অন্যান্য উন্নত দেশেও একই ধারা দেখা যাচ্ছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় কন্যাসন্তানের প্রতি পক্ষপাত স্পষ্ট। ওই অঞ্চলে যেসব পরিবারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে, তাদের সন্তানসংখ্যা কম। যেসব পরিবারে শুধু দুই ছেলে আছে, তাদের মধ্যে শুধু দুই মেয়ে থাকা পরিবারের তুলনায় সন্তান জন্মের হার অনেকটাই বেশি। ফিনল্যান্ডে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে দম্পতিরা সাধারণত পরবর্তীতে কম সন্তান নেন। চেক প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া, নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালেও গবেষণায় মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতের প্রমাণ মিলেছে।

ফার্টিলিটি চিকিৎসাতেও মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতের প্রমাণ মেলে। নিউইয়র্ক সিটি আইভিএফ ক্লিনিকে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) মাধ্যমে সন্তানের লিঙ্গ বেছে নিতে দম্পতিরা ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত গোনেন। ব্রিটেনের মতো যেসব দেশে এটি নিষিদ্ধ, সেখান থেকে ধনী পরিবারগুলো যুক্তরাষ্ট্রে যায় এই সুবিধা পেতে। ক্লিনিকটির প্রধান আলিয়া এলাসার বলেন, 'আগে সবাই ছেলে চাইতেন। কিন্তু এখন বেশিরভাগ বাবা-মাই মেয়েশিশু বেছে নিচ্ছেন।'

দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও দম্পতিরা মেয়ে শিশুই পছন্দ করেন বেশি। ২০১০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বাবা-মায়েরা মেয়েসন্তান দত্তক নিতে প্রায় ১৬ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তি খরচ করতে রাজি ছিলেন। ক্লার্ক ইউনিভার্সিটির অ্যাবি গোল্ডবার্গ ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২০০-র বেশি দত্তক নিতে আগ্রহী দম্পতিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা ছেলে না মেয়ে চান। যদিও অনেকেই বলেছিলেন, তাদের নির্দিষ্ট কোনো পছন্দ নেই, কিন্তু সমকামী পুরুষরা ছাড়া বাকি সবাই-ই মেয়েশিশু দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ায়ও দত্তক নেওয়া সন্তানদের বেশিরভাগই মেয়ে। যদিও এর ফলে জন্মের সময়কার লিঙ্গ অনুপাতের কোনো পরিবর্তন হয় না, তবে এটা মা-বাবাদের পছন্দের একটি স্পষ্ট নির্দেশক।

মেয়েশিশুর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি এবং ছেলেসন্তানের প্রতি আগ্রহ কমার কারণ এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। গোল্ডবার্গের গবেষণায় দেখা গেছে, যৌন অভিমুখিতা (সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন) অনুযায়ী বাবা-মায়েরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। যেমন বিপরীতকামী পুরুষরা মনে করেন, মেয়েদের বড় করা 'তুলনামূলকভাবে সহজ', তারা 'বেশি মজার' ও 'জটিল চরিত্রের' হয় এবং ছেলেদের তুলনায় 'শারীরিকভাবে কম চ্যালেঞ্জিং'। সমকামী নারীরা ছেলেসন্তানের সামাজিকীকরণ ঠিকমতো করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

যেসব দেশে একসময় পুত্রসন্তানের প্রতি গভীর পক্ষপাত ছিল, সেখানে মেয়েসন্তানের দিকে মনোযোগ বাড়ার কারণ সম্ভবত লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতার ফলে তৈরি সামাজিক সমস্যাগুলো এড়ানোর চেষ্টা। যেমন চীনে পুরুষের সংখ্যা এতই বেশি যে বহু পুরুষ চিরকুমার, নিঃসন্তান থেকে যাচ্ছেন। মা-বাবারা হয়তো চান না তাদের সন্তানরা এমন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাক। তাছাড়া শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে ছেলেসন্তানের পেছনে খরচ বেশি— কারণ সেখানে পুরুষদের বিয়ের আগে একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হওয়া আবশ্যিক মনে করা হয়। অনেক বাবা-মাই অভিযোগ করেন, ছেলের জন্য বাড়ি কেনার খরচ দিতে গিয়ে তারা প্রায় নিঃস্ব হয়ে যান।

মেয়েরা মমতাময়ী হয়, আর ছেলেরা ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়—সবচেয়ে সাম্যবাদী সমাজেও এই ধারণাটি দৃঢ়ভাবে শিকড় গেঁড়ে রয়েছে। ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনের মতো দেশগুলোতে—যেখানে ব্যবসা ও রাজনীতিতে নারীদের অবস্থান বেশ ভালো—দম্পতিরা ছেলের তুলনায় অন্তত একটি মেয়ে থাকা বেশি জরুরি মনে করেন। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বৃদ্ধ বয়সে একাকী থাকা মা-বাবার যত্ন-আত্তিতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই এগিয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

Babes in the woods

ক্রমবর্ধমান কন্যাসন্তান চাওয়ার এই প্রবণতা হয়তো ধনী দেশগুলোতে পুরুষদের যে সামাজিক বিপর্যয় ঘিরে ধরছে, তারই প্রতিক্রিয়া। হ্যাঁ, ব্যবসা-রাজনীতিতে এখনও পুরুষরাই আধিপত্য ধরে রেখেছে—একই কাজের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি আয়ও করছে—কিন্তু বিপথগামী হওয়ার প্রবণতাও পুরুষদের মধ্যেই বেশি। অনেক উন্নত দেশে কিশোর ছেলেরাই সহিংস অপরাধের ভুক্তভোগী ও অপরাধী—উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে। আত্মহত্যার হারও ছেলেদের মধ্যে বেশি। ছেলেরা শিক্ষার সব স্তরেই মেয়েদের চেয়ে পিছিয়ে। তাদের স্কুল থেকে বহিষ্কারের হারও মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও ছেলেদের সংখ্যা কম। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন লিঙ্গ ব্যবধান ১৯৭২ সালের চেয়েও বেশি। তবে এখন নারীরা নয়, ছেলেরাই সংখ্যায় কম।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাবা-মায়েরা অনেকসময় মনে করেন, ছেলের তুলনায় মেয়ে তাদের সম্মান বৃদ্ধির কারণ হবে। ছেলেদের সূক্ষ্ম দক্ষতা মেয়েদের তুলনায় দেরিতে বিকশিত হয়, তারা শান্ত হয়ে বসে থাকতেও পারে না। শিশুদের সংগীত ও শিল্পকলার ক্লাসে এগুলো বড় সমস্যা। 

বয়স বাড়ার পরও এই লিঙ্গ বিভাজন অব্যাহত থাকে। উচ্চশিক্ষিত তরুণীরা পরিবারের বাইরে স্বাধীন জীবন শুরু করেন। কিন্তু তরুণ পুরুষেরা বাড়ি ছাড়তে কম উৎসাহী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জাপানের বিপুলসংখ্যক 'হিকিকোমোরিদের' কথা—এই তরুণ পুরুষরা ঘরে আবদ্ধ থাকে। আমেরিকাতেও তরুণ ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করে। ২৫-৩৪ বছর বয়সি প্রতি পাঁচজন মার্কিন পুরুষের একজন মা-বাবার সঙ্গে থাকেন, যেখানে সমবয়সি নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রতি দশজনে একজন।

নারী-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সচেতনতাও মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতের একটি কারণ হতে পারে। রুথ হুইপম্যান তার 'বয়মম: রিইম্যাজিনিং বয়হুড ইন দি এইজ অভ ইমপসিবল ম্যাসকুলিনিটি' বইয়ে লিখেছেন, গত কয়েক বছরে পুরুষদের নোংরা আচরণ ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। মিটু (#MeToo) আন্দোলন প্রথমে হলিউডম পরে বিশ্বের অন্যান্য শিল্প ও দেশের পুরুষদের যৌন হেনস্তার তথ্য সামনে এনেছে। ফলে পুরুষদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা বেড়েছে।

রুথ হুইপম্যানের মতে, ছেলেদের বড় করার জন্য বর্তমান সময়টা খুবই উদ্বেগজনক। 'বয়মম' বইয়ে তিনি লিখেছেন, ছেলেদের আশঙ্কার তালিকাটি দীর্ঘ: 'ধর্ষক, স্কুল-শুটার, ইনসেল, শিশুসুলভ পুরুষ, কথা থামিয়ে দেওয়া পুরুষ, ব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের থামিয়ে দেওয়া পুরুষ, নিজের গুরুত্ব নিয়ে মগ্ন পুরুষ…'

উন্নত বিশ্বে ছেলেদের নিয়ে এই উদ্বেগ কতটা গভীর, তার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হলো রাজনীতিকরা এ বিষয়ে ক্রমেই বেশি বেশি কথা বলছেন। গত বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ছেলেদের স্কুলে পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে। নরওয়ে আরও একধাপ এগিয়ে ২০২২ সালে একটি পুরুষ সমতা কমিশন গঠন করে। কমিশনটি ২০২৪ সালে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলে, ছেলে ও পুরুষদের সমস্যাগুলো সমাধান করাই হবে 'লিঙ্গসমতার পরবর্তী ধাপ'। 

আমেরিকাতেও রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে আইনপ্রণেতারা একই সুরে কথা বলছেন। ইউটাহ রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর স্পেন্সার কক্স পুরুষদের কল্যাণে টাস্কফোর্স গড়েছেন। মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট গভর্নর ওয়েস মুর ছেলেদের উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর মিশিগানের নারী গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার চান আরও বেশিসংখ্যক তরুণ পুরুষ কলেজ ও কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হোক।

সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিসা একলুন্ড বলেন, এখনও এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে মনে হয় যে মেয়েদের প্রতি পক্ষপাত বাস্তবে ছেলে বা মেয়েদের প্রতি বৈষম্য তৈরি করছে। বরং চীনে এখনও প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ কন্যাশিশুর ভ্রূণ গর্ভপাত হচ্ছে। কাজেই মেয়েদের প্রতি বিদ্বেষ দূর করাই এখনও অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

তবে প্রযুক্তি আবারও দ্রুত পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে—ঠিক যেমন ৫০ বছর আগে সস্তায় আল্ট্রাসাউন্ডের আগমনে লিঙ্গ নির্বাচনের দরজা খুলে গিয়েছিল। এখন যদি ধনী বিশ্বের অভিভাবকেরা সহজ ও গোপন উপায়ে মেয়েসন্তান বেছে নিতে পারেন, তাহলে তারা হয়তো সেই পথেই হাঁটবেন।

Related Topics

টপ নিউজ

সন্তান / ছেলেশিশু / মেয়েশিশু / লিঙ্গ বৈষম্য

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: রয়টার্স
    দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প
  • অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (বামে), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
    ৩২ বছরে প্রথমবার শীর্ষ তিনের বাইরে অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ, টানা দ্বিতীয়বার সেরা এলএসই
  • হতাশার ডিগ্রি: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা কেন চাকরি পাচ্ছেন না?
    হতাশার ডিগ্রি: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা কেন চাকরি পাচ্ছেন না?
  • চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি: টিবিএস
    চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    সমুদ্রপথে আম-কাঁঠালের বিদেশযাত্রা: কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত

Related News

  • বাবাকে লেখা চিঠি: ‘কাফকায়েস্ক’ পবিত্র আত্মার আর্তচিৎকার
  • মিয়ানমারে ধসে পড়া প্রি-স্কুলের সামনে বসেই চিৎকার করে সন্তানদের ডেকেছেন মা-বাবারা
  • যে কারণে নিজের সন্তানদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যান ইলন মাস্ক
  • বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে না পেরে রেখে গেল জঙ্গলে, গজারি বনে পড়ে ছিলেন ২ দিন
  • সন্তানদের জন্য খেলনা কিনবেন কি না

Most Read

1
ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প

2
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (বামে), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

৩২ বছরে প্রথমবার শীর্ষ তিনের বাইরে অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ, টানা দ্বিতীয়বার সেরা এলএসই

3
হতাশার ডিগ্রি: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা কেন চাকরি পাচ্ছেন না?
বাংলাদেশ

হতাশার ডিগ্রি: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা কেন চাকরি পাচ্ছেন না?

4
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ছবি: টিবিএস
অর্থনীতি

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত শুল্ক এক মাসের জন্য স্থগিত: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

5
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

সমুদ্রপথে আম-কাঁঠালের বিদেশযাত্রা: কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net