বিশ্বজুড়ে সংখ্যায় কমলেও এই ছোট দ্বীপে দেখা মিলে রেকর্ডসংখ্যক পাফিনের

পেমব্রোকশায়ার উপকূলের কাছাকাছি একটি ছোট দ্বীপে রেকর্ডসংখ্যক পাফিনের দেখা পাওয়া গেছে। যদিও বিশ্বজুড়ে এই পাখির সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। খবর বিবিসি'র।
সাউথ অ্যান্ড ওয়েস্ট ওয়েলস ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট (ডব্লিউটিএসডব্লিউডব্লিউ) জানায়, স্কোমার দ্বীপে এবার ৪৩ হাজার ৬২৬টি পাফিন গণনা করা হয়েছে—যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
সংস্থাটি এটিকে 'সংরক্ষণে সফলতার গল্প' হিসেবে উল্লেখ করলেও সতর্ক করে জানিয়েছে, পাফিন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি হিসেবে রয়ে গেছে এবং তাদের সুরক্ষায় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
ডব্লিউটিএসডব্লিউডব্লিউ পরিচালিত প্রায় ২.৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের স্কোমার দ্বীপটি সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেমব্রোকশায়ার উপকূল থেকে এক মাইলেরও কম দূরে অবস্থিত।
দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হওয়ায় এটি ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর ও শিয়ালের মতো শিকারি প্রাণী এবং মানুষের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত।
পাফিনের বাড়তে থাকা সংখ্যার পাশাপাশি স্কোমার দ্বীপে ৩ লাখ ৫০ হাজার জোড়া ম্যানক্স শিয়ারওয়াটার পাখি প্রজনন করে। এছাড়াও রয়েছে হাজার হাজার গিলেমট ও রেজরবিল।

প্রতিবছর বসন্তে পাখিরা ফিরে এসে প্রজনন শুরু করলে দ্বীপে সামুদ্রিক পাখির বার্ষিক জরিপ চালায় ডব্লিউটিএসডব্লিউডব্লিউ।
পাফিন গণনা করা হয় মৌসুমের শুরুতে ও সন্ধ্যায়—ছয়জন কর্মী এই কাজে নিয়োজিত থাকেন।
স্কোমার দ্বীপের দর্শনার্থী কর্মকর্তা রব নট বলেন, পাখি গোনা 'একটা বেশ কঠিন কাজ' ছিল।
তিনি জানান, 'আমরা দ্বীপটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করি এবং সূর্যাস্তের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে মাঠে নামি—এই সময়ই বেশি সংখ্যক পাফিন মাটিতে থাকে। আমরা তখন ক্লিকার হাতে নিয়ে জমিতে থাকা, সমুদ্রের ওপর ভেসে থাকা ও আকাশে উড়তে থাকা সব পাখি গুনে ফেলি।'
গতবারের সর্বোচ্চ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০২৩ সালে। তখন দ্বীপ ও তার চারপাশে ৪২ হাজার ৫১৩টি পাফিন দেখা গিয়েছিল।

রব বলেন, 'আমাদের ধারণা, এই গণনায় ভুলভ্রান্তি থাকলেও সেটা হয়ত কয়েকশো বা সর্বোচ্চ এক হাজার পাখির মধ্যে।'
তিনি আরও বলেন, 'অবশ্যই এই সংখ্যা সম্পূর্ণ সঠিক হবে না। তবে যেহেতু আমরা প্রতি বছর একই পদ্ধতিতে গণনা করি এবং পাখিগুলো একইভাবে রেকর্ড করি, তাই এই সংখ্যা সবসময় সেই বছরের চূড়ান্ত হিসাব হিসেবে প্রকাশ পায়।'
পেমব্রোকশায়ারে পাফিনের সংখ্যা বাড়লেও, অন্যান্য অঞ্চলে তাদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
অন্যান্য সামুদ্রিক পাখির মতো পাফিনও বৈশ্বিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএনের লাল তালিকায় বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। কারণ হিসেবে রয়েছে দূষণ, খাদ্য সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
ওয়েলস ট্রাস্ট ফর নেচার (ডব্লিউটিএসডব্লিউডব্লিউ) জানিয়েছে, স্কোমার দ্বীপে পাফিনের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হলো আশপাশের এলাকায় খাদ্যের প্রাচুর্য। এতে ছানাগুলোর পর্যাপ্ত খাবার মিলছে, ফলে প্রজনন সফল হচ্ছে।
তারা আরও জানিয়েছে, দ্বীপটিতে ইঁদুর ও অন্যান্য শিকারি প্রাণী না থাকাও পাখিদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।

প্রতি বছর দ্বীপে ঘুরতে আসা ২৫ হাজার দর্শনার্থী পাফিনের সংখ্যায় বিস্মিত হন বলে জানিয়েছেন রব। তবে তিনি সতর্ক করে দেন, সামুদ্রিক পাখিদের জন্য নতুন হুমকি দেখা দিয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে বার্ড ফ্লু এবং যুক্তরাজ্যের কিছু উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা দেওয়া সাম্প্রতিক সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ।
তিনি বলেন, 'এই অঞ্চলে এবং পুরো যুক্তরাজ্যে পাফিনের সংখ্যা কেমন, তা বুঝতে মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি। এতে ভবিষ্যতে সংখ্যা বাড়াতে কী ধরনের নীতিমালা প্রয়োজন, সে বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায়।'
রব আরও বলেন, 'এই এলাকায় পরিস্থিতি ভালো, তাই এটিকে ভালো উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়। তবে অনেক জায়গায় পাফিনের সংখ্যা দ্রুত কমছে। আমরা যে সংখ্যাগুলো দেখছি, তা নিয়ে সতর্কতার মধ্যেই আশাবাদী।'
তিনি বলেন, 'পাফিন অত্যন্ত অসাধারণ একটি পাখি। তারা এখন বিপন্ন তালিকায় রয়েছে, যা একাধিক কারণে সেটি ঠিক নয়। একসময় তারা প্রচুর ছিল। আমরা যা পারি, করছি, যেন এই সংখ্যা আবার বাড়ে।'