ইউক্রেনের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘পাল্লার সীমাবদ্ধতা’ তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ

জার্মানির সদ্য নির্বাচিত চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেনকে সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহারে পশ্চিমা মিত্ররা আর 'পাল্লার সীমাবদ্ধতা' বজায় রাখছে না। এতে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরেও সামরিক অবস্থানে হামলা চালাতে পারবে।
সোমবার বার্লিনে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মেৎর্স বলেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র—এই চার দেশের সরবরাহকৃত অস্ত্রের ব্যবহারে আর কোনো দূরত্ব-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা থাকছে না।
তিনি বলেন, 'এর ফলে ইউক্রেন এখন আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে রাশিয়ার সামরিক অবস্থানে হামলা চালাতে পারবে। কিছুদিন আগেও এটি সম্ভব ছিল না, এখন সম্ভব।'
তবে তিনি স্পষ্ট করেননি, এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতির প্রসঙ্গেই ইঙ্গিত করছেন কি না। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আর্মি ট্যাকটিকাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ব্যবহারে অনুমতি দেয়, যার সাহায্যে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালায়।
এর পরদিন, ইউক্রেন যুক্তরাজ্য নির্মিত স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেও রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালায় বলে দাবি করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। স্টর্ম শ্যাডো সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার এবং এটিএসিএমএস সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
এদিকে মেৎর্স-এর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র ব্যবহারে রেঞ্জ সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার 'সম্পূর্ণ পরিপন্থী'।
মেৎর্স-এর এই ঘোষণার সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। ইউক্রেনজুড়ে রুশ হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন এক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে 'পাগল' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত?
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বহুদিন ধরেই পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন যেন তারা ইউক্রেনকে দেওয়া দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে কোনো সীমা আরোপ না করেন। এর মাধ্যমে ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরের গোলাবারুদের গুদাম, বিমানঘাঁটি ও সামরিক সদর দপ্তরে আঘাত হানার সুযোগ পাবে বলে দাবি করে আসছেন তিনি।
তবে এতদিন পশ্চিমা মিত্ররা এ বিষয়ে সতর্ক ছিল, কারণ ইউক্রেনের এমন হামলা যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করে তুলতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা ছিল।
জার্মানি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয়। তবে দেশটি এখনো 'টর্নেডো'-র মতো শক্তিশালী টাউরাস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে দ্বিধায় রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে এবং ভূগর্ভস্থ বা শক্তিশালী প্রতিরক্ষায় আচ্ছাদিত লক্ষ্যে আঘাত হানার উপযোগী।
সোমবার মেৎর্স পরিষ্কার করেননি যে, তিনি কি এই ঘোষণার মাধ্যমে জার্মানির পক্ষ থেকে টাউরাস ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়ার কথাও বোঝাতে চাচ্ছেন কি না।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেমন প্রভাব ফেলবে
চ্যাথাম হাউজের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো টিমোথি অ্যাশ বলেন, মেৎর্স-এর ঘোষণাটি রাশিয়ার 'ধীর পদক্ষেপের' প্রতি একপ্রকার প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, 'ইউরোপীয়রা আশা করছে, এতে রাশিয়ার ওপর আলোচনায় বসার চাপ বাড়বে।'
তিনি আরও বলেন, "এই সিদ্ধান্ত জার্মান নীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মার্জ আগের চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের চেয়ে রাশিয়া নিয়ে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।"
অ্যাশ আরও বলেন, 'শান্তি আলোচনার প্রশ্নে দুই পক্ষ এখনো বহু দূরে। দু'পক্ষই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তবে এই সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও ইউক্রেনের পক্ষে পাল্লা ভারী করবে।'
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রোববার রাতে রাশিয়া যুদ্ধের তিন বছরের মধ্যে সর্ববৃহৎ বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলায় ২৯৮টি ড্রোন এবং ৬৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যাতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়।