যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ হলে কানাডাকে বিনামূল্যে ‘গোল্ডেন ডোম’ সুরক্ষা দেবেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষী 'গোল্ডেন ডোম' ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় ব্যবস্থায় অংশ নিতে চাইলে কানাডাকে ৬১ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে। তবে কানাডা যদি নিজের সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হতে রাজি থাকলে তারা বিনামূল্যেই এর অংশ হতে পারবে।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, "আমি কানাডাকে বলেছি, যারা আমাদের দুর্দান্ত গোল্ডেন ডোম সিস্টেমের অংশ হতে খুবই আগ্রহী, তারা আলাদা জাতি হিসেবে থাকতে চাইলে, তাদের জন্য এর খরচ হবে ৬১ বিলিয়ন ডলার। তবে যদি তারা আমাদের প্রিয় ৫১তম রাজ্যে পরিণত হয়, তবে খরচ হবে শূন্য ডলার! তারা প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে!"
এ বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী বারবার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও এটি স্পষ্ট করেছেন যে কানাডা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ এবং সেটিই থাকবে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে ইতোমধ্যেই একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে—নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড (নোরাড)। এই চুক্তির আওতায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার নতুন ফ্রন্টলাইন হিসেবে আর্কটিক অঞ্চলের গুরুত্ব বাড়ায় নোরাডে কানাডার দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির মুখপাত্র আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী আমেরিকান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে 'ব্যাপক ও গঠনমূলক আলোচনা' চালিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে নোরাডকে শক্তিশালী করা এবং গোল্ডেন ডোমের মতো সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি জানান, গোল্ডেন ডোম উদ্যোগে কানাডার অংশগ্রহণ 'উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে'। তবে তিনি এর অংশগ্রহণে কোনো নির্দিষ্ট খরচ বা মূল্য নির্ধারণ করতে চাননি। তিনি বলেন, 'আমি নিশ্চিত নই যে এ ধরনের বিষয়ে দর-কষাকষি চলে কিনা।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সচেতন যে চাইলে আমরা বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে সম্পূর্ণভাবে অংশ নিতে পারি।'
গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কানাডার কোনো না কোনোভাবে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে, কারণ রাশিয়া থেকে ছোড়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র—যা এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য—যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে হলে তা উত্তর কানাডার আকাশসীমা অতিক্রম করেই আসবে।
অটোয়াভিত্তিক থিংক-ট্যাংক ম্যাকডোনাল্ড-লরিয়ার ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র ফেলো রিচার্ড শিমুকা এ প্রসঙ্গে বলেন, 'এটা মূলত এক ধরনের দরকষাকষির কৌশল বলে মনে হচ্ছে। কানাডা ৬১ বিলিয়ন ডলার দেবে—এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।'
রিচার্ড শিমুকা গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'এই পরিকল্পনাটি প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিস্তারিত তথ্যে কোনো স্পষ্টতা নেই। এতে বিপুল ঝুঁকি রয়েছে। এই প্রকল্প অনেকটা চাঁদে যাওয়ার প্রচেষ্টার মতো, যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থনও খুব দুর্বল।'
গত সপ্তাহে ট্রাম্প দাবি করেন, এই প্রকল্পে খরচ হবে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং তার প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি কার্যকর করে তোলা হবে। একটি মহাকাশ ভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে তৈরি করা হবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এটি শত্রু রাষ্ট্রগুলোর ছোড়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো জটিল হামলা প্রতিরোধে সক্ষম হবে।
তবে গোল্ডেন ডোমে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পিত মহাকাশভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর প্রযুক্তি এখনো বাস্তবে নেই। ফলে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অরাজনৈতিক কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) অনুমান করেছে, আগামী ২০ বছরে এই ধরনের মহাকাশভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর তৈরি ও উৎক্ষেপণে খরচ হতে পারে ৫৪২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।
মঙ্গলবার কানাডার পার্লামেন্ট উদ্বোধন করেন রাজা চার্লস, যা ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার সময়ে কানাডার 'স্বাধীনতার' প্রতি এক ধরনের প্রতীকী সমর্থন হিসেবে দেখা হয়েছে। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে বারবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বানানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজা চার্লস তার সাম্প্রতিক ভাষণে বলেন, বর্তমান বিশ্বে যখন শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে মহাদেশজুড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তখন কানাডা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। তিনি এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে জাতীয় প্রতিরক্ষা জোরদারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
গত মার্চ মাসে কানাডা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৬ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের (৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার আওতায় একটি অত্যাধুনিক আর্কটিক রাডার সিস্টেম নির্মাণ করা হবে। এই রাডার সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্ত থেকে শুরু করে আর্কটিক পর্যন্ত আগাম সতর্কতা দিতে সক্ষম হবে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেন, 'নোরাড আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার একটি মূল অংশ হলো এই রাডার সিস্টেম। এর দীর্ঘ-পাল্লার নজরদারি ও হুমকি শনাক্তকরণ ক্ষমতা উত্তরের পুরো এলাকাজুড়ে যেকোনো হুমকি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।'