ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের গা ছাড়া ভাব, ট্রাম্পও গুরুত্ব দিচ্ছেন না

ইউক্রেন ইস্যুতে বারবার নিজের অবস্থান বদলাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সুবিধার্থেই তিনি এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন, অথচ পুতিন বিনিময়ে বলতে গেলে কিছুই দেননি।
ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, পুতিন কোনও সমঝোতা চান না—তিনি শুধু ট্রাম্পকে 'খেলার' মধ্যে রাখছেন।
তবে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা মার্কিন গণমাধ্যম এক্সিওস-কে জানান, তারা এখনও বিশ্বাস করেন পুতিন শিগগিরই একটি চুক্তির পথে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
এখনো পর্যন্ত, ট্রাম্প পুতিনকে তাঁর প্রত্যাশিত অনেক কিছুই দিয়েছেন—যেমন, যুদ্ধবিরতির চাপ দেননি, রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভূমিকায় ন্যাটো জোটে বিভাজন তৈরি হয়েছে— এরপরেও ট্রাম্পের কাছ থেকে পুতিনের প্রতি অস্বাভাবিক নমনীয়তাও দেখা যাচ্ছে।
যদিও ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন যে পুতিন হয়তো তাঁকে 'টেনে নিয়ে যাচ্ছেন'। এমনকি পুতিনের কারণে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করলে নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপের হুমকিও এর আগে তিনি দিয়েছিলেন।
কিন্তু গেল সোমবার পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প তার প্রতি আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি নমনীয়তা দেখিয়ে চলেছেন।
তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন, আলোচনার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং শান্তি আলোচনার জন্য পুতিনের পছন্দের কাঠামো মেনে নিয়েছেন। এমনকী রাশিয়ার শান্তি প্রস্তাবকে তিনি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
ওই ফোনালাপের পর ট্রাম্প ভ্যাটিকানে শান্তি আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাব দেন। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ানরা একটি 'শান্তি প্রস্তাব' নিয়ে সেখানে হাজির হবে—যেখানে যুদ্ধবিরতি এবং বৃহত্তর সমঝোতার জন্য মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হবে।
কিন্তু শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়ে দেন, মস্কো এমন একটি নথি তৈরির কাজ করছে ঠিকই, তবে তিনি ভ্যাটিকানকে আলোচনার জন্য 'সঠিক স্থান নয়' বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুই অর্থোডক্স খ্রিস্টান দেশের (ইউক্রেন ও রাশিয়ার) জন্য ভ্যাটিকান উপযুক্ত ভেন্যু নয়।
অবশ্য, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনার প্রথম বৈঠকের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনও পরবর্তী বৈঠকের তারিখ বা স্থান তাদের জানা নেই।
এরই মধ্যে, গত শুক্রবার রাতে রাশিয়া কিয়েভের ওপর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এতে স্পষ্ট যে পুতিন ইচ্ছা করে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া খুবই দরকার।
এদিকে, পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের 'ধৈর্য' আর ইউরোপীয় নেতাদের 'চাপ প্রয়োগ' কৌশলের মধ্যে স্পষ্ট ফারাক দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সপ্তাহে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। তারা আশা করেছিল, এতে যুক্তরাষ্ট্রও যোগ দেবে, কিন্তু ট্রাম্প রাজি হননি।
সোমবারের পুতিনের সাথে ফোনালাপের পর—ট্রাম্পের 'পুতিনপ্রীতি' যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের হতবাক করেছে। ফোনালাপের পরই ট্রাম্পের সাথে এক সম্মেলনকলে এ নিয়ে তারা অসন্তোষও প্রকাশ করেন।
মস্কো যখন বারবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এড়িয়ে যাচ্ছে, তখন ট্রাম্প আলোচনায় না গিয়ে বরং পুরো বিষয় থেকে সরে আসার মতো মনোভাব দেখিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রথমে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শান্তি আলোচনা শেষ হবে। কিন্তু মস্কো এখনও খুব ধীরে এগোচ্ছে। ট্রাম্পও এ বিষয়ে কড়া অবস্থান না নিয়ে—বরং অনেকটা চুপচাপ থাকছেন।
জেলেনস্কিকে আলোচনায় বসাতে ট্রাম্প ওভাল অফিসে তাকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তখন তিনি সাময়িকভাবে ইউক্রেনে অস্ত্র ও তথ্য সরবরাহ বন্ধও করে দেন।
তবে পুতিনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প বরং শর্ত ছাড়া নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েই যাচ্ছেন। বিশেষত রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পুতিনকে খুশি করতে চাচ্ছেন।
ইউক্রেনে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্রিজেট ব্রিঙ্ক সিএনএন-কে বলেন, 'পুতিন আমাদের বোকা বানাচ্ছেন। তাই আমাদের ইউরোপের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ দেওয়া উচিত।'
এদিকে, হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলেন, পুতিনকে আলোচনায় বসাতে ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতা কিছুটা সফল হয়েছে। তারা দাবি করছেন, পুতিনের আসন্ন 'শান্তি মেমো' ট্রাম্পের চাপের ফলেই সম্ভব হচ্ছে।
ট্রাম্প অবশ্য বারবারই বলে এসেছেন, পুতিনের ওপর কঠোর অবস্থান নেওয়া রাজনৈতিকভাবে সহজ, কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাই বেশি ফলপ্রসূ হবে।
এদিকে রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহামের নেতৃত্বে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি গ্রুপ রাশিয়ার তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর (বিশেষত চীনের) ওপর ৫০০ শতাংশ শুল্কাপের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করেছে।
তবে আপাতত ট্রাম্প পুতিনকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ারই সুযোগ দিতে চাইছেন।