ইউরেনিয়াম নিয়ে বিরোধের মধ্যেও ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের আরেক দফা আলোচনা নিশ্চিত করল ওমান

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আগামীকাল শুক্রবার রোমে আরেক দফা আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি।
বুধবার নিশ্চিত করা হয়েছে যে, পারমাণবিক বিষয়ক এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিরোধ চলমান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা শুধু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতেই চান না বরং ইরান যেন পুরোপুরি তাদের এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে তাদের এমন দাবিকে তেহরান অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হল একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ইউরেনিয়াম পরমাণুকে পরিবর্তন করে পারমাণবিক জ্বালানিতে রূপান্তর করা হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি গত মঙ্গলবার বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য তার দেশের যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে খামেনির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, 'ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেব না'—এ ধরনের কথাবার্তাকে 'নির্বোধের প্রলাপ' বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক স্টিভ উইটকফ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে 'লাল রেখা' হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ওয়াশিংটন '১ শতাংশ পরিমাণ সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতাও মেনে নিতে পারবে না'।
তার এই মন্তব্যের জবাবেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এ মন্তব্য করেছেন।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কর্মকর্তা তাদের নিজ নিজ দেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ওয়াশিংটনের দাবি, ইরান পারমাণবিক চুল্লিতে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে আগেই ইউরেনিয়াম আমদানি করে তা ব্যবহার করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, তেহরানের নিজস্ব ইউরেনিয়াম উৎপাদন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ঝুঁকি তৈরি করে।
অন্যদিকে, ইরান বলছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না এবং নাগরিক ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তাদের অধিকার।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তেহরানকে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেবেন না।
২০১৮ সালে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প 'যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা' (জেসিপিওএ) বাতিল করে দেন। ওই চুক্তির আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করেছিল এবং এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল।
চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অর্থনীতির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে তার 'সর্বোচ্চ চাপ' নীতি আবারও চালু করেন, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি ইরানের তেল রপ্তানি—বিশেষ করে চীনে—বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইরান দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং যে কোনো হামলার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষার অঙ্গীকার করেছে।
এপ্রিলে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আলোচনা শুরু করলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে শুরু করে। তবে তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে বিরোধ কিভাবে মেটানো হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
গত রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইঙ্গিত দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থানে কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'ইরান কোনো পরিস্থিতিতেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না।'
আরাকচি তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে আরও লিখেছেন, "আমরা কেবল আমাদের নিজের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, আর সেটা হলো—সর্বজনীন আলোচনার বদলে গোপনে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। কারণ আমরা দেখছি, মার্কিন পক্ষ প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে যা বলছে তা সপ্তাহের ব্যবধানে তার মধ্যে অসংগতি দেখা দিচ্ছে।"