কাতারের দেয়া বিলাসবহুল বিমান গ্রহণ করল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্ত হবে এয়ার ফোর্স ওয়ানের বহরে

কাতারের দেয়া বোয়িং ৭৪৭ বিমান উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ। বিমানটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যবহৃত এয়ার ফোর্স ওয়ান বহরে যুক্ত হতে পারে। তবে এই উপহার ঘিরে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক—এমনকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজ দলের ভেতরেও। খবর বিবিসির।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এক বিবৃতিতে জানান, 'প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফেডারেল নিয়ম-কানুন মেনেই কাতার থেকে বোয়িং ৭৪৭ বিমানটি গ্রহণ করেছেন।'
বিমানটি এখনও সরাসরি প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের উপযোগী নয়। এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রেট্রোফিটিংয়ের ব্যয় ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
বিমানটি কাতারের রাজপরিবারের তরফ থেকে উপহার, যার আনুমানিক মূল্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে এই বিমানটি তার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে স্থানান্তর করা হবে।
ট্রাম্প নিজেই উপহারটির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, 'তারা আমাদের একটি উপহার দিচ্ছে। এটা ফিরিয়ে দেওয়া বোকামি হবে।'
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে থাকা ইমোলুমেন্টস ক্লজ অনুযায়ী, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিদেশি সরকারের কাছ থেকে উপহার নিতে পারেন না। এই উপহার গ্রহণের বিষয়ে কংগ্রেসের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, যেহেতু এটি তার ব্যক্তিগত নয়, বরং প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য, তাই আইন লঙ্ঘন হয়নি। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, মেয়াদ শেষে তিনি নিজে বিমানটি ব্যবহার করবেন না।
১৯৯০ সাল থেকে ব্যবহৃত পুরনো ৭৪৭-২০০ এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানের পরিবর্তে নতুন দুটি ৭৪৭-৮ কেনার জন্য বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন ট্রাম্প । তবে তা ডেলিভারি দিতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে, এতে বেশ অসন্তুষ্ট তিনি।
এ প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প গোপনে ফ্লোরিডার পাম বিচে মার-আ-লাগো রিসোর্টের কাছে কাতারি বিমানটি পরিদর্শন করেন। এরপরই হোয়াইট হাউজ জানায়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য একটি স্বচ্ছ ও বৈধ উপহার।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশাল-এ লিখেছেন, 'প্রতিরক্ষা বিভাগ উপহার হিসেবে একটি ৭৪৭ বিমান পাচ্ছে—একেবারে বিনা খরচে—৪০ বছর পুরোনো এয়ার ফোর্স ওয়ান-এর সাময়িক বিকল্প হিসেবে। এটি একটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও সর্বজনসমক্ষে হওয়া লেনদেন।'
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি বলেছেন, 'এটি দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পাদিত একটি সরকারি লেনদেন। এর সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের যোগ নেই।'
কাতার থেকে পাওয়া এই দামী উপহার নিয়ে বিতর্ক থামছে না। ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই এর বিরোধিতা করছেন কেউ কেউ। কেনটাকির সিনেটর র্যান্ড পল ফক্স নিউজকে বলেন, 'এই উপহারের বিষয়টি অনৈতিক বলে মনে হতে পারে—এটা আদৌ অনৈতিক কিনা, সেটা বড় কথা নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পক্ষে মানবাধিকার মূল্যায়নে কাতারের মতো দেশের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হতে পারে।'
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ আরও কঠোর ভাষায় বলেন, 'এই ধরনের উপহার গ্রহণ গুপ্তচরবৃত্তি ও নজরদারির বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।'
তবে হোয়াইট হাউজ ও কাতার উভয়ই এই লেনদেনকে 'সরকারি ও কৌশলগত' বলে ব্যাখ্যা দিলেও সমালোচকদের আশঙ্কা এখনো দূর হয়নি। ট্রাম্পের বোয়িংবিরোধী অবস্থান এবং কাতারের সঙ্গে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।