‘ইংরেজিতে দক্ষ নন এমন চালকরা যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে ট্রাক চালাতে পারবেন না’: ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ কার্যকর

ট্রাকচালকদের জন্য এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ইংরেজিতেই কথা বলেছেন হাইতি থেকে আসা অভিবাসী কেভিনসন জিন। তারপরও বাণিজ্যিক ট্রাক চালানোর লাইসেন্স করানোর পরীক্ষার সময় তিনি বেশ ভীত ছিলেন।
প্রতি বছর এক লাখ মাইল পাড়ি দেওয়া ট্রাকচালক কেভিনসন বলেন, "কখনও কখনও ইংরেজি উচ্চারণে ভুল হলো কিনা, সে ভয়ে থাকতাম। আমি চাইতাম না যে কেউ আমার উপর হাসুক।"
তিনি তার শৈশবের কথা মনে করে বলেন, তার ক্লাসে ইরান থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী ঠিকভাবে ইংরেজি বলতে পারতেন না। তারপরও কিভাবে যেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যেতেন। তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, "তাদের কেউ বুঝতেই পারত না, কিন্তু তারপরও তারা পাস করেছিল।"
এখন থেকে কেভিনসন জিনের মতো ট্রাকচালকদের রাস্তায় ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহণ বিভাগের (ডিওটি) সচিব শন ডাফি একটি নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ইংরেজিতে সাবলীল নয় এমন ট্রাকচালকদের রাস্তায় চলাচল থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার মাধ্যমে ২৮ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশ কার্যকর হয়েছে।
ট্রাম্পের এ আদেশের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বলবৎ থাকা আইন আরও কঠোর হয়েছে। এ আইনে বলা আছে, একটি বাণিজ্যিক মোটর গাড়ির চালক হতে হলে ব্যক্তিকে অবশ্যই 'ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে, যাতে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, হাইওয়ের সাইন ও সংকেত বুঝতে পারেন, সরকারি জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারেন এবং রিপোর্ট ও নথিপত্রে তথ্য লিখতে পারেন।'
ওবামা প্রশাসনের সময় ইংরেজিতে দক্ষ না এমন চালকদের বিরুদ্ধে শাস্তি শিথিল করা হয়েছিল। সেসময় তাদের গাড়ি চালনা বন্ধ করে দেওয়ার পরিবর্তে দণ্ড বা জরিমানা করা হতো।
মার্কিন পরিবহণ সচিব শন ডাফি বলেন, "আমরা এমন নির্দেশনা দিচ্ছি যা নিশ্চিত করবে যে, ইংরেজি বুঝতে না পারা কোনো চালক এই দেশে কোনো ভাবেই গাড়ি চালাতে পারবে না।" টেক্সাসের অস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তবে অস্টিনেই ভারী ট্রাক এবং ট্রাক্টর-ট্রেলার চালকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এই শাস্তি পুনঃস্থাপনে শিল্প সংস্থাগুলো সমর্থন জানিয়েছে, তারা বলছে এতে হাইওয়ে নিরাপত্তা উন্নত হবে। কিন্তু কিছু চালক এবং কিছু শিল্প গোষ্ঠী এর বিরোধিতা করেছে। তারা মনে করছে, এর কারণে অনেক কর্মীকে কাজ থেকে বাদ দিতে হবে। অথচ এ খাতে শিল্পবাণিজ্যের মূল সমস্যা—বেতন, কর্মঘণ্টা ও চালকদের প্রশিক্ষণের—বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।
ট্রাম্প আদেশ জারি করার পর, আমেরিকান ট্রাকিং অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, 'এই বিদ্যমান নিয়মের অসম প্রয়োগের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের প্রতি সাড়া দিয়েছেন'। অ্যাসোসিয়েশন গত ১০ এপ্রিল পরিবহণ সচিব শন ডাফিকে পাঠানো একটি চিঠিতে এটিকে তাদের দ্বিতীয় প্রধান উদ্বেগ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বাণিজ্যিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দ্রুত প্রশিক্ষণ প্রদানকারী স্কুলগুলোই ছিল তাদের প্রধান উদ্বেগ।
ডাফি বলেন, তার বিভাগ বাণিজ্যিক চালকের লাইসেন্স প্রদানের নিরাপত্তা প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে। এছাড়াও, তারা 'ননডোমিসাইলড' অর্থাৎ যারা যে রাজ্যে তাদের বাণিজ্যিক চালকের লাইসেন্স রয়েছে সেই রাজ্যের বাসিন্দা নন, এমন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ট্রাক চালকদের যোগ্যতাও পর্যালোচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, 'দীর্ঘ সময় ধরে আমেরিকার জনগণের নিরাপত্তার চাইতে রাজনৈতিক স্বার্থকেই পুঁজি করেই ভুল নীতিমালাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।'
প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্ন
শিখ এবং পাঞ্জাব বংশোদ্ভূত চালকদের মধ্যে এই পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিখ কোয়ালিশনের সিনিয়র ফেডারেল পলিসি ম্যানেজার মন্নিরমল কুর। তিনি জানান, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শিখ এবং পাঞ্জাবি চালকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, এবং এই অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার চালক এই শিল্পে রয়েছেন।
অন্যান্য চালকদের মতো তারা সবাই নিরাপদ সড়ক চায়, বলেছেন কুর। কিন্তু 'আমরা মনে করি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সংক্রান্ত এই শর্তটি প্রয়োগে বৈষম্যের সম্ভাবনা রয়েছে' বলে জানান তিনি।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, রাজ্য ও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী অফিসাররা, যারা নিরীক্ষক হিসেবে স্বীকৃত, কিভাবে ঠিক করবেন কাকে ইংরেজি দক্ষতার পরীক্ষার জন্য থামানো হবে।
'কারো কি উচ্চারণের কারণে? নাকি হয়ত কেউ পাগড়ি পরার জন্য?' প্রশ্ন করেছেন কুর। তিনি আরও বলেন, 'চাকরি থেকে বের করে দেওয়া মানে হলো বেকারত্ব। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সুযোগও কম থাকবে।'
এই গোষ্ঠী এখন প্রশিক্ষণের আরও বিস্তারিত তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে এবং ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার জন্য জাতীয়ভাবে মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
ফেডারেল মোটর ক্যারিয়ার সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উইমেন অব ট্রাকিং অ্যাডভাইজরি বোর্ড, পরিবহণ বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ধারণা দিয়েছে যে, প্রায় ৩.৮ শতাংশ সিডিএলধারী (কমার্শিয়াল ড্রাইভারস লাইসেন্সধারী) চালক ইংরেজিতে দক্ষ নন।
বোর্ডের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কয়েক বছর ধরে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চালকের সংখ্যা বাড়ছে, তবে ট্রাক চালকদের এই শিল্প এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে শ্বেতাঙ্গ এবং পুরুষপ্রধানদের অধীনে রয়ে গেছে।
ফেডারেল মোটর ক্যারিয়ার সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএমসিএসএ) তথ্য অনুযায়ী, বড় ট্রাক দুর্ঘটনা এবং এর ফলে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কমেছে এবং এই হ্রাসের ধারা ২০২১ সাল থেকে অব্যাহত রয়েছে।
ফ্রেইট শিল্পের জন্য অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এফটিআর ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, মার্চ পর্যন্ত শেষ দুই বছরে এফএমসিএসএ প্রায় ১৫ হাজার ২০০টি ইংরেজি ভাষা দক্ষতা লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে — যদিও সবগুলো একই চালকের নয়। এসব লঙ্ঘনের মধ্যে টেক্সাসে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ ঘটেছে, আর মেক্সিকান নম্বর প্লেটযুক্ত ট্রাক ছিল মোট ঘটনার ৩.৪ শতাংশ।
কেভিনসন বলেন, এই পরিবর্তিত শাস্তির কারণে অনেকেই ট্রাক চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
তিনি বলেন, "যদি আপনার অন্তত এক বছরের অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে চাকরি পাওয়াটাই কঠিন। আবার এখন এর সঙ্গে যদি ইংরেজিতে দক্ষতার শর্ত যোগ হয়, তাহলে কাজ খুঁজে পেতে মানুষের আরও অনেক বেশি সময় লাগবে।"