‘সুইডেনে আসবেন না’—আন্তর্জাতিক পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সতর্কতা

সুইডেনের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তরুণ গবেষকরা দেশটিতে পিএইচডি করতে অনুৎসাহিত করছেন। সুইডিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি টিচারস অ্যান্ড রিসার্চার্স (সালফ)-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সালফ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ২০২১ সালে সুইডেনে স্থায়ী আবাসন পাওয়ার শর্ত কঠোর করার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে আসা প্রায় ৪০ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী ও সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।
সালফ-এর ডক্টোরাল ক্যান্ডিডেটস অ্যাসোসিয়েশনের (সালফ-ডিসিএ) পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পিএইচডি শেষ করার পর কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা, আবাসন অনুমতির দীর্ঘসূত্রতা, এবং কেস মূল্যায়নে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, 'পেশাগতভাবে উপেক্ষিত হওয়া, শিক্ষার মান কমে যাওয়া এবং গবেষণার সীমিত সুযোগ—এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রায় সবার সাথেই মিলেছে, যা সুইডেনের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রচলিত আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।।'
সাক্ষাৎকারে অনেকেই বলেন, স্থায়ী আবাসনের আবেদন চলাকালীন সুইডেনের বাইরে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা আন্তর্জাতিক গবেষণা ও কর্মসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হারিয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারদাতা বলেন, 'আপনি যদি সুইডেনে থাকার পরিকল্পনা করেন, তাহলে গবেষণা বা ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দিতে পারবেন না—এগুলোকে বাদ দিতে হবে।'
অনেকের ক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়ার কারণে কয়েক বছর সুইডেন থেকে বের হওয়া সম্ভবই হয়ে ওঠেনি।
পিএইচডি শেষ করা গবেষকরা জানান, তাদের স্থায়ী আবাসন পরিস্থিতির কারণে কোম্পানিগুলো তাদের চাকরি দিতে অস্বীকার করেছে। আবার কেউ কেউ গবেষণাক্ষেত্রের বাইরের চাকরিতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন, যাতে স্থায়ী আয়ের প্রমাণ দেখিয়ে আবাসন নিশ্চিত করা যায়।
রাশিয়া, ইরানসহ তথাকথিত 'অবন্ধু' দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সুইডেনে তাদের 'নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকি' হিসেবে দেখা হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীর ওপরে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
স্থায়ী আবাসন পাওয়ার এই প্রক্রিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যয়কর হিসেবে দেখছেন অনেকেই। একজন বলেছেন, 'আমি একজন সম্ভাবনাময় গবেষক থেকে পরাজিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছি।'
ভবিষ্যতে কেউ পিএইচডি করতে সুইডেন আসতে চাইলে কী পরামর্শ দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগই নেতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। একজন বলেন, 'আপনি যদি সত্যিই গবেষণা করতে চান, তবে সুইডেনকে আমি একদমই পরামর্শ দেব না।'
তবে সুইডিশ সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে—যেমন, চার বছরের পরিবর্তে তিন বছর পর স্থায়ী আবাসনের আবেদন করতে পারার সুযোগ। অভিবাসন মন্ত্রী ইয়োহান ফরশেল বলেন, 'আন্তর্জাতিক প্রতিভার জন্য সুইডেনকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই হবে।'
তবে সালফ-ডিসিএ বলেছে, এই প্রস্তাবগুলো বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক পিএইচডি শিক্ষার্থীর জন্য বাস্তবসম্মত কোনো সমাধান দিচ্ছে না। তাদের মতে, 'যদি দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক প্রতিভা ধরে রাখতে চায় সুইডেন, তাহলে এই পরিবর্তন যথেষ্ট নয়।'
দেশটিতে আসতে ইচ্ছুক গবেষকদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে সালফ-ডিসিএ বলেছে, আগে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন, সম্ভাব্য সমস্যাগুলো জানুন, আর চুক্তির সুক্ষ্ম শর্তাবলি খেয়াল করতে ভুলবেন না।
অনুবাদ: আয়েশা হুমায়রা ওয়ারেসা