যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা

২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আজ রোববার ভোররাতের দিকে চালানো এই হামলায় কিয়েভ অঞ্চলে একজন নারী নিহত এবং অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি, যুদ্ধের তিন বছর পূর্তির আগের রাতে রাশিয়া ২৬৭টি ড্রোন পাঠিয়েছিল, যা ছিল তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত রাশিয়া ২৭৩টি ড্রোন পাঠিয়েছে, যেগুলোর প্রধান লক্ষ্য ছিল কিয়েভ অঞ্চল, দনেয়স্ক এবং দনিপ্রোপেত্রোভস্ক।
শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন বছরে প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনা হলেও কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ১০০ মিনিটের আলোচনায় দুই পক্ষ ১,০০০ যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে একমত হলেও—- যুদ্ধবিরতি নিয়ে হয়নি কোনো সিদ্ধান্ত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলার ঘোষণা দিয়েছেন।
এরমধ্যেই এত বড় পরিসরে ড্রোন হামলা চালাল রাশিয়া। রাতভর এ হামলায় কিয়েভের দক্ষিণে অবস্থিত ওবুখিভ জেলায় ২৮ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন এবং অন্তত তিনজন, যাদের মধ্যে ৪ বছর বয়সী একটি শিশু রয়েছে, আহত হয়েছে।
"শত্রুর হামলার ফলে ওবুখিভ জেলায় একজন নারী আহত হয়ে মারা গেছেন," টেলিগ্রামে জানান কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর মাইকোলা কালাশনিক।
কিয়েভ শহর ও আশপাশের এলাকা এবং পূর্ব ইউক্রেনে রাতভর টানা নয় ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্কতা জারি ছিল। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলা প্রতিরোধে একাধিকবার আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট সক্রিয় হয়েছে।
"রাতটি ছিল অত্যন্ত কঠিন। রাশিয়া সবসময় আলোচনার সময় ভয় দেখাতে হামলার কৌশল ব্যবহার করে," বলেন ইউক্রেনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মোকাবিলা কেন্দ্রের প্রধান আন্দ্রি কোভালেঙ্কো।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর দাবি, হামলায় অংশ নেওয়া ২৭৩টি ড্রোনের মধ্যে ৮৮টি তারা ধ্বংস করেছে। এছাড়াও ১২৮টি 'সিমুলেটর ড্রোন' কোনো লক্ষ্যভেদ না করেই মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায়।
ওবুখিভে আহতদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর কালাশনিক।
কিয়েভ শহরে ধ্বংস হওয়া একটি ড্রোনের টুকরো একটি অবাসযোগ্য ভবনের ছাদে আঘাত হানে, তবে সেখানে কেউ আহত হয়নি বলে জানিয়েছে শহরের সামরিক প্রশাসন।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় তারা রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন, যা মনে হচ্ছিল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যক্রম।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগের দিন শনিবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে একটি শাটল বাসে রুশ ড্রোন হামলায় ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন বলে জানিয়েছে কিয়েভ। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই হামলাকে "ইচ্ছাকৃত" বলে মন্তব্য করে মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। যদিও রাশিয়া দাবি করেছে, তারা একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই পক্ষই বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ইউক্রেনীয়।