তুরস্কে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দাবি করেছে রাশিয়া: কিয়েভের সূত্র

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক উচ্চপদস্থ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা। তিনি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রুশ প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে দাবি করেছেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে তাদের দাবিকৃত চারটি সব এলাকা থেকে সরে যেতে হবে।
গতকাল শুক্রবারের আলোচনায় রাশিয়ার এমন শর্তসহ আরও কিছু দাবি—গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যে শান্তিচুক্তির খসড়া প্রস্তাব করে তার শর্তের চেয়েও অনেক বেশি কঠোর; ওই খসড়ায় উল্লেখিত শর্তও মস্কোর সঙ্গে আলোচনার পর ওয়াশিংটন তৈরি করেছিল।
ইস্তাম্বুলে এই আলোচনা হচ্ছে— তিন বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম সরাসরি যোগাযোগ। এতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সমঝোতা না হলেও— বন্দি বিনিময়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ।
শুক্রবার এক ইউক্রেনীয় সূত্র জানিয়েছিল, রাশিয়ার দেওয়া শর্তগুলো "একেবারে অগ্রহণযোগ্য", যদিও এর বিস্তারিত সেসময় জানানো হয়নি।
আজ শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তার দাবি অনুযায়ী আলোচনায় তোলা শর্তগুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। পেসকভ বলেন, আলোচনা "রুদ্ধাদ্বার" হওয়াই শ্রেয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ইউক্রেনীয় ওই কর্মকর্তা জানান, রুশ পক্ষ যে মৌখিকভাবে শান্তি চুক্তির শর্ত হিসেবে যেসব দাবি তুলেছে, সেগুলো হলো:
#দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার, যার পরেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা হতে পারে। এই অঞ্চলগুলোর কিছু অংশ এখনও ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে এমন কোনো দাবি ছিল না।
#ক্রিমিয়া, ডোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলকে আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি চেয়েছেন রুশ প্রতিনিধিরা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় কেবল ক্রিমিয়াকে আইনগত (ডি জ্যুরে) স্বীকৃতি এবং বাকি অঞ্চলগুলোকে প্রকৃতপক্ষে (ডি ফ্যাক্টো) রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন বলে মেনে নেওয়ার প্রস্তাব ছিল।
#ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা, যাতে দেশটির মাটিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র না থাকে এবং কিয়েভের মিত্ররা সেখানে কোনো সেনা মোতায়েন করতে না পারে। যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় এই বিষয়টি ছিল না।
#সব পক্ষ যুদ্ধজনিত ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি পরিত্যাগ করবে। অথচ মার্কিন খসড়ায় ইউক্রেনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
ইউক্রেনীয় সূত্রটি জানিয়েছে, রাশিয়ান পক্ষ এই দাবিগুলো কোনো লিখিত নথি না দিয়ে কেবল মৌখিকভাবেই উপস্থাপন করেছে।
ইউক্রেন আগেই দাবি করেছে, রাশিয়ার আলোচনার অবস্থান থেকেই বোঝা যায়, তারা প্রকৃত অর্থে শান্তিতে আগ্রহী নয়। এরপর ইউরোপীয় মিত্ররা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এ আলোচনাকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, মস্কো কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী রয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছিল এপ্রিল মাসে, যখন ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ মস্কো সফর করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
অন্যদিকে কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা একটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়, যেখানে বলা হয়, প্রথমে যুদ্ধবিরতি হবে, তারপর আলোচনার সূচনা হবে—এবং ভূখণ্ড সংক্রান্ত যেকোনো আলোচনার উদ্যোগ পরবর্তীতে নেওয়া হবে।