বিলাসবহুল ভবন, গলফ কোর্স ও ক্রিপ্টোকারেন্সি—মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসার দাপুটে বিস্তার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তার প্রথম মেয়াদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সিএনএনের একটি পরিসংখ্যানে।
গত মঙ্গলবার (১৩মে) সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একাধিক বৈঠকে যোগ দিতে চারদিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবেই নয়, উপসাগরীয় অঞ্চলে পারিবারিক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে পরিবারের প্রধান হিসেবেও ট্রাম্পের এই সফর।
হোয়াইট হাউসে আবার ফিরে আসার পর ট্রাম্প পরিবার মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক নতুন প্রকল্প চালু করেছে—যার মধ্যে আছে বিলাসবহুল আকাশচুম্বী ভবন, গলফ কোর্স আর ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বেশ কিছু উলেখযোগ্য চুক্তি।
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ট্রাম্পের এই ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এক ধরণের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, ট্রাম্প কি দেশের স্বার্থে কাজ করছেন, নাকি নিজের আর্থিক লাভের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন—তা বোঝা কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংস্থা পাবলিক সিটিজেন-এর সহ-সভাপতি রবার্ট ওয়াইসম্যান বলেন, 'আমেরিকার জনগণ যখন নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন, তারা আশা করেন সেই ব্যক্তি তাদের জন্য কাজ করবেন, নিজের লাভের জন্য নয়।'
রবার্টসহ অন্যান্য নীতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিদেশি দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে প্রভাব ফেলার সুযোগ করে দিতে পারে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ আর রাষ্ট্রীয় স্বার্থের মাঝে কোনো পার্থক্য না করে বরং তা বেশ খোলাখুলিভাবেই এক করে ফেলেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে একবার তিনি একটি 'মিম কয়েন' চালু করেন, যার মূল্য কয়েকজন বড় বিনিয়োগকারীকে ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানোর পর হুড়হুড় করে বেড়ে যায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের সার্বভৌম তহবিলের সহায়তায় গঠিত একটি গোষ্ঠীর আয়োজিত সম্মেলনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি নিজের ব্যবসায়িক সাফল্যেরও প্রশংসা করেন। ওই সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, 'টাকা কামানোর স্বভাব আমার আগে থেকেই ছিল।'
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প পরিবারের নতুন যেসব প্রকল্পের ঘোষণা এসেছে, তার বেশিরভাগই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এসব প্রকল্প বিদেশি ডেভেলপারদের সঙ্গে 'লাইসেন্সিং চুক্তি' ভিত্তিক, যেখানে তারা ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সঙ্গে অংশীদার হয়ে 'ট্রাম্প' নাম ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছে।
যেখানে আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টরা ক্ষমতায় আসার পর স্বার্থসংঘাত এড়াতে নিজেদের ব্যবসা বিক্রি করে দেন বা 'ব্লাইন্ড ট্রাস্ট'-এ তুলে দেন, ট্রাম্প সেদিকে যাননি। তার সম্পদ একটি ট্রাস্টের অধীনে রাখা হয়েছে, যা পরিচালনা করছেন তার সন্তানরা। এরিক ট্রাম্প, যিনি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট, দাবি করেছেন—এই ব্যবসার সঙ্গে প্রেসিডেন্টের অফিসের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
তবে প্রশ্ন উঠেছে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। কারণ গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছিল, দ্বিতীয় মেয়াদে বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে কোনো নতুন চুক্তি করবে না, তবু সম্প্রতি কাতারে যে নতুন ট্রাম্প-ব্র্যান্ডের গলফ কোর্স প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে যুক্ত রয়েছে কাতারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের সহায়তায় গঠিত প্রতিষ্ঠান 'কাতারি দিয়ার'।
কাতারে ট্রাম্প ব্র্যান্ডের নতুন গলফ কোর্স প্রকল্প ঘোষণার সময় কাতারি দিয়ার প্রধান, যিনি একইসঙ্গে দেশটির একজন মন্ত্রী, বলেন, 'এই অংশীদারির মাধ্যমে আমরা কাতারকে আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।'
এরিক ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, কাতারি দিয়ার এবং আরেকটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি 'দার গ্লোবাল'-এর মাধ্যমে কাতারে ট্রাম্প ব্র্যান্ড সম্প্রসারিত করতে পেরে তারা 'গর্বিত' । নিউইয়র্ক টাইমসকে এরিক আরও বলেন, গলফ কোর্স নির্মাণের দার গ্লোবাল জমি কিনেছে কাতারি দিয়ার থেকে।
তবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের একজন মুখপাত্র দাবি করেন, তাদের কাতারি দিয়ার কিংবা কাতার সরকারের সঙ্গে কোনো সরাসরি চুক্তি, অংশীদারি বা যোগাযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কেবল 'দার গ্লোবাল'-এর সঙ্গেই ব্র্যান্ড ব্যবহারের চুক্তি হয়েছে।
মুখপাত্র কিম্বারলি বেনজা বলেন, 'ট্রাম্প অর্গানাইজেশন কোনো সরকার-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করে না।'
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, 'আমি চাই আমেরিকা জিতুক'। সেই লক্ষ্যেই তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছেন বলে দাবি তার প্রশাসনের। তার মেয়াদে আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। জানুয়ারিতে সৌদি আরব জানায়, চার বছরে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করবে। মার্চে ট্রাম্প আহ্বান জানান, সৌদি আরব যেন যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে।
তবে সমালোচকদের মতে, দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই ট্রাম্প ও তার পরিবারের ব্যবসায়িক তৎপরতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হয় তিনি প্রেসিডেন্ট পদকে আবারও ব্যক্তিগত লাভের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রভাবশালী কিছু সরকার এতে ইচ্ছাকৃতভাবে সহযোগিতা করছে—নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।
এই প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট শুক্রবার বলেন, 'প্রেসিডেন্ট নিজের স্বার্থে কিছু করছেন—এমন ধারণা হাস্যকর। এই হোয়াইট হাউস সর্বোচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখে।'
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি নির্বাচনে হেরে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর ট্রাম্পকে অনেকটাই একঘরে করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট বিশ্ব। তার প্রচারণা তহবিলের অর্থ লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি ওয়াশিংটনে ট্রাম্প হোটেলও হয়ে পড়ে ফাঁকা।
সেসময় এরিক ট্রাম্প বলেছিলেন, 'আমরা এখন 'ক্যানসেল কালচারের' যুগে বাস করি।'
তবে ওই কঠিন সময়েও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ব্যবসায়ী ট্রাম্পের পাশে ছিলেন। দুবাইয়ের ড্যামাক প্রপার্টিজের প্রধান হুসেইন সাজওয়ানি—যিনি ২০১৭ সালে দুবাইয়ে ট্রাম্প গলফ কোর্স তৈরি করেছিলেন—হামলার ঠিক এক সপ্তাহ পর বলেন, 'আমাদের সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের সুযোগ আমি স্বাগত জানাতে চাই।'
এরপর মধ্যপ্রাচ্য থেকেই ট্রাম্প পরিবারের জন্য আসতে থাকে নতুন ব্যবসার সুযোগ।
ট্রাম্পের নিউ জার্সি গলফ কোর্সে পিজিএ তাদের প্রতিযোগিতা বাতিল করলে ট্রাম্প সৌদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়া নতুন গলফ টুর্নামেন্ট 'এলআইভ গলফ'-এর সঙ্গে অংশীদার হন। এখন এই লিগের বেশকিছু টুর্নামেন্ট হয় ট্রাম্পের সম্পত্তিতে।
এছাড়া ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারের প্রতিষ্ঠিত একটি বিনিয়োগ কোম্পানিতে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন বিনিয়োগ তহবিল প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ঢেলেছে। কুশনার হোয়াইট হাউসে ফিরবেন না বললেও, সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি এখনও অনানুষ্ঠানিকভাবে আরব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এদিকে ওমান সরকার ২০২২ সালে মাসকাটের কাছে একটি ট্রাম্প ব্র্যান্ডের রিসোর্ট, ভিলা ও গলফ ক্লাব নির্মাণের পরিকল্পনায় অংশ নেয়। এই যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে গতবছর এরিক ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ওমানের যুবরাজের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন, যেখানে মঞ্চে লেখা ছিল—সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রদর্শন।
গত বছর ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ের পর তার ব্যবসা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। যদিও তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন না, তখনও বেশ কিছু ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু তার নির্বাচনী জয় পরবর্তী সময়ে এসব প্রকল্পের গতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
দার গ্লোবাল, যা ওমানে ট্রাম্পের প্রকল্পসহ অন্যান্য ট্রাম্প-ভিত্তিক টাওয়ার নির্মাণ করছে, তারা এখন সৌদি আরবের রিয়াদে নতুন দুটি প্রকল্প এবং কাতারে একটি গলফ ক্লাবের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
রিয়াদে ভিত্তিক দার গ্লোবালের মূল কোম্পানি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনা অনুসারে সৌদি অর্থনীতির আধুনিকীকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
দার গ্লোবালের সিইও জিয়াদ এল চার এই মাসে এক বক্তৃতায় বলেছেন, 'ট্রাম্প ব্র্যান্ডে বিশ্বাস রাখা বন্ধ করবেন না।' একই অনুষ্ঠানে এরিক ট্রাম্প দার গ্লোবালের সাথে তার সংস্থার নানা প্রকল্পের কাজের কথা উল্লেখ করে জানান, 'এখনও আরও নতুন প্রকল্প আসা বাকি'।
এছাড়া, গত রোববার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে লেখেন, তার প্রশাসন একটি নতুন বোয়িং বিমান 'উপহার হিসেবে গ্রহণ করবে', যা এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
সিএনএনকে দুটি সূত্র জানিয়েছে যে, এটি কাতারি রাজপরিবারের একটি ৭৪৭-৮ বিমান। তবে, কাতারি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিমানটি প্রকৃতপক্ষে কাতারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পেন্টাগনকে উপহার দেওয়া হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর, বিমানটি সরাসরি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে দান করা হবে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আমি বিমানটি ব্যবহার করব না।'
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কোম্পানি ট্রাম্পের ক্রিপ্টো সংস্থা, ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়ালকেও সহায়তা করছে। এপ্রিল মাসে, আরব-আমিরাতভিত্তিক ডব্লিউএফ ল্যাবস ২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের টোকেন কেনার ঘোষণা দেয়। এমজিএক্স নামক আরেকটি কোম্পানি ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে রাজি হয়েছে।

তবে এই প্রসঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক সেনেটর জেফরি মের্কলি ও এলিজাবেথ ওয়ারেন মার্কিন সরকারের নৈতিকতা দপ্তরকে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, এ ধরনের উপহার বিদেশি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করতে পারে—যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
সিটিজেনস ফর রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটনের সভাপতি নোয়া বুকবাইন্ডার বলেন, 'প্রেসিডেন্ট যখন একদিকে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন, আর অন্যদিকে ব্যক্তিগত ব্যবসাও চালিয়ে যান, তখন তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে বেশ মর্যাদার বিষয় হতে পারে। তবে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কতটা লাভ হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্য একটি সংবেদনশীল এলাকা। এখানে সামরিক মোতায়েন, শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণ কিংবা অর্থনৈতিক চুক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এসব সিদ্ধান্ত যেন প্রেসিডেন্ট ব্যবসায়িক লাভের কথা ভেবে না নিয়ে দেশের স্বার্থে নেন, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা সাধারণত দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে যান মেক্সিকো, কানাডা বা যুক্তরাজ্যের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছে। কিন্তু ট্রাম্প যেন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন।
২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি সৌদি আরব যান, যেখানে তাকে দেওয়া হয় রাজকীয় অভ্যর্থনা এবং সেই সাথে একটি বড় অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এবার দ্বিতীয় মেয়াদেও তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের গন্তব্য সেই সৌদি আরব। যদিও সম্প্রতি পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে তিনি ইতালি গিয়েছিলেন, সেটি ছিল অনানুষ্ঠানিক সফর।
তেলের মতো অভিন্ন স্বার্থ থাকলেও ট্রাম্পের সময় সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ব্যতিক্রমভাবে ঘনিষ্ঠ। এই সময়ে দেশটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছে। যেমন, ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দারা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত করলেও ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে অস্বীকার করে যুবরাজকেই সমর্থন দেন।
তিনি এক বিবৃতিতে লেখেন, 'হতে পারে যুবরাজ এ ঘটনার কথা জানতেন, আবার নাও বা জানতেন!' যুবরাজ অবশ্য তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
কুইন্সি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক বেন ফ্রিম্যান বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতি জটিল এবং এসব দেশের অনেক নীতিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেলে না। এ অবস্থায় ট্রাম্পের নতুন চুক্তিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
তার ভাষায়, 'সৌদি সরকার ট্রাম্পের ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে, আর সৌদি আরবই তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের গন্তব্য—এটা পরিষ্কার করে যে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্বার্থ জাতীয় স্বার্থকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি ঝুঁকি।'
অনুবাদ: আয়েশা হুমায়রা ওয়ারেসা