‘দ্রুতগতিতে আবার সবকিছু ধ্বংস করে দেব’: পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানকে ফের ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ইরানকে পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ ইস্যুতে হুমকি দিয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ আগেই দেশটির তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালানোর পর এবার ফের সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
সোমবার স্কটল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, 'ইরান খুবই খারাপ বার্তা দিচ্ছে, খুবই খারাপ ও অশোভন বার্তা।' তিনি আরও বলেন, 'তাদের এমনটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাগুলো ধ্বংস করে দিয়েছি। তারা আবার শুরু করতে পারে। আর যদি করে, তবে আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে আমরা আবার সবকিছু ধ্বংস করে দেব।'
তিনি যোগ করেন, 'আমরা সেটা খুশি মনেই করব, খোলাখুলিভাবেই করব।'
এর আগে তেহরান জানায়, তারা বেসামরিক প্রয়োজনে পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। ট্রাম্পের এ মন্তব্যের আগেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এক বিবৃতিতে জানান, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার ইরানের রয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেন।
গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর এবং ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের পর প্রথম কোনো উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগ। আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা 'গম্ভীর, খোলামেলা ও বিস্তারিত' বলে উল্লেখ করলেও কোনো অগ্রগতির ঘোষণা আসেনি।
চলতি বছরের শুরুতে ইরানের এই অবস্থানকে ট্রাম্প প্রশাসন 'রেড লাইন' বা সীমারেখা হিসেবে বিবেচনা করছিল। তবে জুনে ইসরায়েলের তেহরানবিরোধী সামরিক অভিযানের পর সেই আলোচনা ভেঙে পড়ে।
ট্রাম্পের সর্বশেষ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আব্বাস আরাকচি বলেন, 'হুমকি ও ভীতির ভাষার জবাব ইরান কখনোই দেবে না।' তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক প্রয়োজনেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ইরানের প্রয়োজন।
আরাকচি আরও বলেন, ইরান যদি আবারও আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে দেশটি 'আরও কঠোরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পিছপা হবে না।'
এছাড়া গত সপ্তাহে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করবে না, তবে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হবে, সে বিষয়ে তিনি 'খুব একটা আশাবাদী নন।'
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা ইরানে ফের হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে। এমনকি দেশটির শাসনব্যবস্থা উৎখাত করাও তাদের লক্ষ্য হতে পারে।
রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক বক্তব্যে জানান, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠাতে চান।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়োত আহরনোত-এ প্রকাশিত তার উদ্ধৃতি অনুযায়ী তিনি বলেন, 'আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দিতে থাকেন, তাহলে আমাদের দীর্ঘ হাত আবারও তেহরানে পৌঁছাবে—এবার আরও বেশি শক্তি নিয়ে, এবং এবার তা আপনার কাছেও ব্যক্তিগতভাবে পৌঁছাবে।'
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানে নতুন করে হামলা চালাতে চাইলে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রায় অপরিহার্য হবে।
এর আগে, ২২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রশংসা করে বলেছিলেন, এর ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' হয়ে গেছে।
তবে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো বলছে, ওই হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়তো ততটা গুরুতর হয়নি। এতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কেবল স্বল্প সময়ের জন্য পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
সপ্তাহের শেষে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়াকে 'মূর্খতা' বলে অভিহিত করেন।
প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প একতরফাভাবে ইরান পরমাণু চুক্তি—'জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন' (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ইউরোপের কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির আওতায় তেহরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করেছিল, যার বিনিময়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পর, ইরানও নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে। তবে দেশটি বারবার পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতে ট্রাম্প নতুন একটি পরমাণু চুক্তির জন্য চেষ্টা চালান। তবে খুব শিগগিরই তিনি এমন এক কঠোর নীতিতে চলে যান, যেখানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। বহুদিন ধরেই ইরানি আলোচকরা এই 'শূন্য সমৃদ্ধকরণ' নীতিকে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে আসছেন।
শুক্রবার ট্রাম্প আরও অভিযোগ করেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ থামাতে সাম্প্রতিক শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে। তিনি দাবি করেন, দোহায় অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় ইরান হস্তক্ষেপ করেছে। আলোচনায় অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। তবে গত সপ্তাহে উভয় পক্ষই তা থেকে সরে আসে।
ট্রাম্প বলেন, 'আমার মনে হয়, ওরা (ইরান) এই আলোচনায় জড়িয়েছে। ওরা হামাসকে কিছু ইঙ্গিত ও নির্দেশনা দিয়েছে।' তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।
ট্রাম্পের এই সর্বশেষ মন্তব্যের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইরান।