তুরস্কে ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তি আলোচনায় থাকছেন না পুতিন ও ট্রাম্প

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তুরস্কের আলোচনায় অংশ না নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে আলোচনাটি হওয়ার কথা রয়েছে।
গত রোববার পুতিন কোনো শর্ত ছাড়াই ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে বুধবার রাতে ক্রেমলিন জানায়, রুশ প্রতিনিধি দলে থাকবেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি এবং উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলেক্সান্ডার ফোমিন—তবে পুতিনের নাম সেই তালিকায় নেই।
ক্রেমলিন তাদের প্রতিনিধি দলের ঘোষণা দেওয়ার পর, এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান যে মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফররত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি আলোচনায় অংশ নেবেন না। যদিও ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, তিনি আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
পুতিন কখনোই সরাসরি উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—উভয় প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি যুদ্ধ বন্ধের দিক থেকে কোনো বড় অগ্রগতির আশা কমিয়ে দিয়েছে।
বুধবার রাতে তুরস্কে যাওয়ার পথে ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিন উপস্থিত থাকলেই তিনি আলোচনায় অংশ নেবেন।
বুধবার রাতে নিয়মিত ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, পুতিনের অংশগ্রহণ স্পষ্ট হওয়ার পরই ইউক্রেন তুরস্কে শান্তি আলোচনায় নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করবে।
জেলেনস্কি বলেন, 'এই যুদ্ধ কেন শুরু হয়েছে, কেন চলছে—এই সব প্রশ্নের উত্তর মস্কোতেই রয়েছে। যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে, তা নির্ভর করছে বিশ্বের উপর।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাচ্ছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হোক, যাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। এক রুশ আইনপ্রণেতা বুধবার বলেন, আলোচনায় বড় পরিসরের যুদ্ধবন্দি বিনিময় নিয়েও কথা হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আগে আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চান তিনি।
রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে
শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনকে একত্রে বসাতে চেষ্টারত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষের ওপরই ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠছেন। তিনি বলেছেন, মস্কো যদি শান্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে, তবে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে 'সেকেন্ডারি স্যাংশন' (পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা) দেওয়ার বিষয়টি 'সবসময় বিবেচনায়' রাখেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও রুশ তেল ক্রেতাদের ওপর সম্ভাব্য পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেছেন।
তুরস্কে শান্তি আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং সিনিয়র দূত স্টিভ উইটকফ ও কিথ কেলগ।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বৃহস্পতিবার সকালে জানান, তিনি রুবিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শান্তি পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহে দুই পক্ষের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দলে ছিলেন ভ্লাদিমির মেদিনস্কি ও আলেক্সান্ডার ফোমিন, যারা শেষ রাউন্ডের আলোচনাতেও অংশ নিয়েছিলেন। এবার তাদের সঙ্গে ছিলেন রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শেষবার সরাসরি আলোচনা হয়েছিল মার্চ ২০২২-এ, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। তার এক মাস আগেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সেনা পাঠান। তিনি এটিকে 'নিও-নাৎসিদের উৎখাতের জন্য বিশেষ সামরিক অভিযান' বলে অভিহিত করেন।
তবে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা একে উসকানিমূলক এবং সাম্রাজ্যবাদী কায়দায় ভূমি দখলের চেষ্টা বলে মনে করে।
বর্তমানে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও, পুতিন এখনো তেমন কোনো ছাড় দেননি। সপ্তাহান্তে দেওয়া আলোচনার প্রস্তাবে তিনি বলেন, তুরস্কে এই আলোচনার লক্ষ্য হবে একটি স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা।
পুতিন বিশেষভাবে ২০২২ সালের আলোচনার কথা উল্লেখ করেন এবং তখনকার প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তির কথা তুলে ধরেন, যা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
রয়টার্সে দেখা খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেন স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ থাকার শর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—এবং বেলারুশ, কানাডা, জার্মানি, ইসরায়েল, পোল্যান্ড ও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেত।
তবে কিয়েভের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা মেনে নেওয়া তাদের জন্য একটি 'রেড লাইন'—অর্থাৎ এটি এমন একটি বিষয়, যেখানে তারা কোনোভাবেই সমঝোতা করবেন না।